নরসিংদী বন্ধুসভার আনন্দময় চড়ুইভাতি
৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা। নরসিংদী বন্ধুসভার অনুষ্ঠান সম্পাদক অপর্ণা সাহার বাসায় জড়ো হন কয়েকজন বন্ধু। একে একে হাজির হন সাধারণ সম্পাদক হৃদয় গোপাল সাহা, পাঠাগার সম্পাদক রাজু আফনান, পাঠচক্র সম্পাদক দুর্জয় সিংহ ও সাংগঠনিক সম্পাদক সীমান্ত সাহা। পরের দিনের চড়ুইভাতির মেনু কী হবে, কী কী বাজার করতে হবে, কতটুকু করা হবে, কখন কোথায় কে থাকবে, চড়ুইভাতির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কী কী করা হবে, এসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়। তারপর হৃদয় সাহা, দুর্জয় সিংহ ও রাজু আফনানকে নিয়ে সম্পূর্ণ বাজার করেন। বাজার করার সময় সঙ্গে যুক্ত হন প্রথম আলোর নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি প্রণব কুমার দেবনাথ। রাতেই সব বাজার করে অনুষ্ঠান সম্পাদকের বাসায় রাখা হয়।
পরের দিন সকাল সাড়ে আটটা থেকে বন্ধুরা আসতে শুরু করেন আরশীনগর পার্কে। সবার আগে আসেন সবচেয়ে দূরে থাকা বন্ধু আন-নূর। প্রণব কুমার দেবনাথ সবাইকে চা খাওয়ালেন। সবার মধ্যে আনন্দ উৎসব শুরু হয়ে গেল। দেরি না করে কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে তাঁরা চলে গেলেন রায়পুরা থানার হাইরমারা ইউনিয়নের মণিপুরা বাজারসংলগ্ন প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত সা’দত স্মৃতি পল্লী শিশুপার্কে। নদীর পাশে প্রাকৃতিক পরিবেশঘেরা এমন সুন্দর পরিবেশ বন্ধুদের সবাইকে মুগ্ধ করে।
পাঠচক্র সম্পাদক দুর্জয় সিংহ বন্ধুদের জন্য নুডলস রান্না করে এনেছেন সকালের নাশতা হিসেবে। সবাই আনন্দের সঙ্গে সেটা খেলেন। দুর্জয় সবাইকে বলেছিলেন চমক দেবেন, কিন্তু কীভাবে দেবেন, সেটা বলেননি। সেদিন ফাইনালি দিয়েই দিলেন।
সকালের নাশতা শেষে অনুষ্ঠান সম্পাদক অপর্ণা সাহা, অর্থ সম্পাদক চিত্রা পোদ্দার, নারীবিষয়ক সম্পাদক সায়মা বীথি, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক আন-নূর, মুক্তা বেগম, দুর্জয়, রাজু এবং আরো কয়েকজন বন্ধু বসে পড়লো সবজি কাটা, মাংসা ধোয়া, মসলা তৈরি করা ইত্যাদি কাজে। প্রধান শেফ হিসেবে সবাই পাঠচক্র সম্পাদক দুর্জয় সিংহকে নির্বাচন করল। কারণ সে রান্নার বিষয়টা ভালো জানে।
একদিকে যখন চড়ুইভাতির রান্নার উপকরণ তৈরির কাজ চলছিল, তখন অন্যদিকে বটতলায় বসে প্রচার সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব, দপ্তর সম্পাদক রফিক আহমেদ, পাঠাগার সম্পাদক রাজু আফনান, যোগাযোগ সম্পাদক দীপ্ত সাহা, নরসিংদী বন্ধুসভার পুরনো বন্ধু প্রলয় জামান ও প্রতিনিধি প্রণব কুমার দেবনাথ অন্য বন্ধুদের নিয়ে গানের আসর বসায়। তাঁদের গানে চারপাশে এক স্বর্গীয় পরিবেশ তৈরি হলো।
গান শুনে কি আর বসে থাকা যায়। যাঁরা আলু কাটা, পেঁয়াজ কাটায় নিযুক্ত ছিলেন, দেখা গেল তাঁরা দ্রুত কাজ সেরে গানের আসরে চলে গেলেন। এদিকে রান্নার দায়িত্বে সহায়তা করার জন্য সাধারণ সম্পাদক হৃদয় সাহার সঙ্গে দুর্জয় সিংহ আর সায়মা বীথি রইলেন।
প্রথম আলো ট্রাস্টে নিযুক্ত বেলায়েত হোসেনের সহধর্মিণী সবার জন্য চায়ের ব্যবস্থা করলেন। এদিকে আবার প্রলয় জামান সবাইকে কাঠি আইসক্রিম খাওয়ালেন। গ্রামে এখনো আমাদের শৈশবের মতো বক্সে রেখে কাঠি আইসক্রিম বিক্রি করার ব্যবস্থা রয়েছে। সে আইসক্রিম সবাই খেলেন পরম তৃপ্তি নিয়ে।
সূর্যি মামা যখন প্রখর হলো আর তাপ বেড়ে গেল, তখন সবাই স্নান করতে নিকটেই মণিপুরা নদীর ঘাটে চলে গেল। নদীতে স্নান করার উৎসাহটা বেশি ছিল প্রণব কুমার দেবনাথের। সাঁতার কাটার দৃশ্য দেখলে মনে হবে সবাই শৈশবে ফিরে গেছেন কিছু সময়ের জন্য। মনের আনন্দে নদীতে সাঁতার কেটে স্নান করলেন তাঁরা।
হৃদয় সাহা আর সাইমা বীথি রান্না তৈরির দিকে বেশি লক্ষ রাখলেন। কারণ, তাঁদের চড়ুইভাতির অন্যতম মূল আকর্ষণ হলো এই লাকড়ির রান্না। গ্রামে এসে ইট দিয়ে চুলা তৈরি করে লাকড়ি দিয়ে রান্না হলো। চড়ুইভাতির খাবার মেনু ছিল সাদা ভাত, আলুভর্তা, শুঁটকিভর্তা, মুরগির ডিম ভুনা, মুরগির মাংস ও ডাল।
দুপুরের খাবার যখন প্রস্তুত হলো তখন সহসভাপতি লাবণ্য আহমেদ দায়িত্ব নিয়ে সবাইকে খাবার পরিবেশন করে।
খাবারের পর চড়ুইভাতি আয়োজনের আসল আনন্দ শুরু হয়। চাম চাম বুদ বুদ, কানামাছি বো বো, এলাটিন বায়োস্কোপ ইত্যাদি দেশীয় খেলায় বন্ধুরা আনন্দে মেতে উঠেছিলেন। খাবারের আগেই অপর্ণা সাহা সবাইকে নিয়ে চেয়ার খেলা খেলেছেন এবং তিনজনকে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন। পরে প্রণব কুমার দেবনাথ তাঁদের বই উপহার দিয়েছেন।
চড়ুইভাতির অন্যতম আনন্দময় মুহূর্ত ছিল লটারির রেজাল্ট প্রকাশ। সভাপতি পল্টন চন্দ্র দাস ও সাংগঠনিক সম্পাদক সীমান্ত সাহা এই লটারির আয়োজন করেছিলেন।
প্রকৃতিতে যখন সন্ধ্যা নামে, তখন বন্ধুদের বাড়ি যাওয়ার সময় হয়। প্রায় ৫০ জন বন্ধু নিয়ে সারা দিনের আনন্দময় চড়ুইভাতির আয়োজন শেষ করে সবাই নিরাপদে বাড়ি ফিরেছিলেন সেদিন।
সাধারণ সম্পাদক, নরসিংদী বন্ধুসভা