‘ত্রাণ পাইয়া উপকার অইল’

স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্মহীন পরিবারের সদস্যদের খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়। গতকাল পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে।
ছবি: প্রথম আলো

প্রায় ৪০ বছর ধরে সেতারা বেগম সকালে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে পটুয়াখালী শহরে এসে মানুষের বাসায় ঝিয়ের কাজ করতেন। কিন্তু করোনার কারণে কেউ আর কাজের জন্য ডাকে না। কারও কাছ থেকে তেমন সাহায্য–সহযোগিতাও পাচ্ছিলেন না। বয়সের ভারে এখন কোনো শক্ত কাজও করতে পারেন না। এ অবস্থায় চরম বিপাকে পড়েছেন তিনি।

পটুয়াখালীর সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের বদরপুর গ্রাম থেকে সেতারা বেগম গতকাল শুক্রবার এসেছিলেন সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। সেখানে প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণসহায়তা পান তিনি। ফেরার পথে সেতারা বেগম বলেন, ‘কাম-কাইজ না করলে টাকাও পাই না, কোনো বাড়ি থেইক্যা খাওনও পাই না। ঘরে চাইল-ডাইল নাই। এই ত্রাণ পাইয়া খুব উপকার অইল।’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারি নির্দেশে গত ১৪ এপ্রিল থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এতে কর্মহীন হয়ে পড়ে পটুয়াখালীর দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষজন। গতকাল সকালে পটুয়াখালী শহরসহ আশপাশ এলাকার হতদরিদ্র ১০০ জন কর্মহীন পরিবারের মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়। সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রথম আলো পটুয়াখালীর বন্ধুসভার সদস্যরা এসব ত্রাণ বিতরণ করেন। ত্রাণের মধ্যে ছিল চাল, ডাল, তেল, লবণ ও আলু।

এ সময় পটুয়াখালী সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম, রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের জেলা সহসভাপতি স্বপন ব্যানার্জী, শিশু অধিকার সংরক্ষণ কমিটির জেলা সভাপতি শ ম দেলোয়ার হোসেন দিলীপ, পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের সহসভাপতি সোহরাব হোসেন, প্রথম আলোর পটুয়াখালী প্রতিনিধি শংকর দাস, পটুয়াখালী বন্ধুসভার সভাপতি জাহিদা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান, সহসভাপতি সুস্মিতা মণ্ডল ও জাহিদ হাসান, উপদেষ্টা মেহেদী হাসান, রাবেয়া সাবরিন, দিপ্র দাস, আদিবা মেহেনাজ, সৌরভ দেবনাথ, হামিম, সৌমিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পটুয়াখালীর লাউকাঠি ইউনিয়নের লাউকাঠি গ্রাম থেকে কুলসুম বেগম (৩০) এসেছিলেন সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। তিনিও পেয়েছেন প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণসহায়তা। কুলসুম বেগম বলেন, লাউকাঠি নদী পেরিয়ে পটুয়াখালী শহরে এসে মানুষের বাসায় করতেন। এখন কেউ তাঁর খোঁজখবর কেউ নেয় না। তিনি বলেন, ‘ঈদের আগে ছোট ছোট পোলাপান লইয়া কী কষ্টে আছি। এই ত্রাণ পাইয়া ভালোই হইল।’

খুব কষ্ট করে কোনোরকমে লাঠি ভর দিয়ে ত্রাণ নিতে আসেন লাল বরু (৯০)। স্বামী কবে মারা গেছেন, তা–ও তাঁর মনে নেই। এক ছেলে ছিলেন তা–ও একদিন বৃদ্ধ মাকে ফেলে চলে গেছেন। মানুষের কাছে হাত পেতে যা পান, তা দিয়ে কোনোরকমে দিন কাটে লাল বরুর। দুঃসময়ে ত্রাণ পেয়ে তিনি খুশিমনে বাড়ি ফেরেন।

জেলা শহরে দিনমজুরির কাজ করেন জাফর হাওলাদার (৩৫)। তিনি বলেন, ‘লকডাউনে কামাই কম। বৃদ্ধা বাবা-মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে খুব কষ্টে আছি। ত্রাণ পাওনে এহন অনেক উপকার হইল।’