‘গড়ে উঠুক বৈষম্যহীন সমাজ’

ঈদের দিন পার্বতীপুর রেলস্টেশনে একে একে প্রায় সবাইকে খাবার দেওয়া হয়
ছবি: সংগৃহীত

কিছুদিন আগের ঘটনা। বাজারে আসার সময় লক্ষ করলাম পার্বতীপুর রেলস্টেশনে এক নারী ভাত রান্না করছেন। নেই কোনো হাঁড়ি-পাতিল, নেই কোনো কাঠখড়ি। দইয়ের ছোট মাটির কৌটার মধ্যে ভাত রান্না করছেন পলিথিন পুড়িয়ে। আমার কাছে ব্যাপারটি খুবই খারাপ লাগে। তখনই সিদ্ধান্ত নিই, যেভাবেই হোক তাঁকে সাহায্য করতে হবে। এরই মধ্যে আমাদের ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার ‘ক্রান্তিকালে ঈদের হাসি’র কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। তখন পর্যন্ত আমি এই ব্যাপারে কারও সঙ্গে কোনো কথা বলিনি। শুধু আম্মুর সঙ্গে কথা হয় ওই নারীকে সাহায্য করার ব্যাপারে।

ক্রান্তিকালে ঈদের হাসি ভালো সাড়া পায়। মোটামুটি ভালো পরিমাণ অর্থ জমা পড়ে ইভেন্টে। অসহায়দের মধ্যে কীভাবে এই অর্থ পাঠানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার সভাপতি আহ্সান আরিফ চৌধুরীর সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথা বলি ওই নারীকে সাহায্য করার ব্যাপারে।

আরিফ ভাই প্রথমে বলেন, রেলস্টেশনে তিনি একা নন, তাঁর মতো আরও অনেকেই আছেন, কীভাবে সবাইকে সাহায্য করা যায়, সে বিষয়ে চিন্তা করতে।

আমি পরে আবার স্টেশনে যাই। সেখানে যাঁরা থাকেন, সবাইকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করি। খোঁজ নিয়ে দেখতে পাই, তিনি ছাড়া আরও একজন নারীর এমন অবস্থা। হাঁড়ি-পাতিল নেই।

তারপর আরিফ ভাইয়ের সঙ্গে আবার কথা হয়। আমরা ঠিক করি, ওই দুই নারীকে হাঁড়ি-পাতিল কিনে দেব। সঙ্গে স্টেশনে যারা আছে, তাদের এক বেলা ভালো খাবার খাওয়াব। আরিফ ভাই পরামর্শ দিলেন ঈদের দিন কাজটা করলে ভালো হবে। আনন্দের দিনে তারা এক বেলা ভালো খাবার খেতে পারবে।

ঠিক যেভাবে আমরা পরিকল্পনা করি, সেভাবে কাজ শুরু হয়। আরিফ ভাই আমাকে প্রয়োজনীয় অর্থ পাঠিয়ে দেন। তা দিয়ে ওই দুই নারীর জন্য হাঁড়ি-পাতিলসহ অন্য জিনিসপত্র এবং খাবার খাওয়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু কিনে আনি। আমার আম্মু সবার জন্য রান্না করে দেবেন। মোটামুটি সব গোছানো শেষ করার পর অপেক্ষা করতে থাকি ঈদের দিনের জন্য।

ঈদের নামাজ পড়ে এসে দেখি রান্নাবান্না শেষ। দুপুর ১২টার দিকে আমি, আম্মু আর আমার ছোট বোন খাবার প্যাকেট করে ফেলি। খাবার নিয়ে যাই পার্বতীপুর রেলস্টেশনে। একে একে প্রায় সবাইকে খাবার দেওয়া হয়। শেষে ওই দুই নারীর জন্য কেনা হাঁড়ি-পাতিলসহ অন্য জিনিসপত্র তাঁদের হাতে তুলে দিই। তাঁদের হাতে এসব তুলে দিতে পেরে মনে অনেক শান্তি পেয়েছি।

আমি ধন্যবাদ জানাই ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভাকে অসহায় মানুষের প্রয়োজনে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। ধন্যবাদ জানাই ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার সভাপতি আহসান আরিফ ভাইকে আমাকে সার্বক্ষণিক বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করার জন্য। এমন কাজে সহযোগিতা করে আমাকে অনুপ্রেরণা জোগানোর জন্য ধন্যবাদ দিতে চাই প্রথম আলো বন্ধুসভা এবং আমার আম্মুকে। আসুন আশপাশের অসহায় মানুষের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখি। গড়ে উঠুক বৈষম্যহীন সমাজ।

যোগাযোগ সম্পাদক, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা