আইসোলেশন সেন্টারে শয্যা ও হুইলচেয়ার দিল ভৈরব বন্ধুসভা

৩০ আগস্ট সোমবার সকালে এসব স্বাস্থ্য উপকরণ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়
ছবি: ভৈরব বন্ধুসভা

করোনা ভ্যাকসিন পেতে ভৈরব বন্ধুসভার সভাপতি ইকরাম বখশ তাঁর মাকে নিয়ে গেলেন স্থানীয় ট্রমা সেন্টারে। ট্রমা সেন্টারটি প্রথম থেকেই আইসোলেশন ইউনিট ও টিকাদান কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। টিকা দেওয়ার সময় ইকরাম বখশ দেখেন, করোনায় আক্রান্ত এক শারীরিক প্রতিবন্ধীকে কোলে করে তৃতীয় তলায় নেওয়া হচ্ছে। সেবা দিতে গিয়ে কর্মরতদের দুর্ভোগ তাঁর মনে দাগ কাটে। সমস্যা সমাধানে তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন ভৈরব বন্ধুসভা থেকে সহযোগিতা করার।

এরপর তিনি জানতে পারেন, আইসোলেশন ইউনিটে একসঙ্গে ৩০ জনকে অক্সিজেন সেবা দেওয়ার সুযোগ থাকলেও শয্যা আছে মাত্র সাতটি। তখন তিনি শয্যাসংকট দূর করার ব্যাপারেও উদ্যোগী হন। যেই কথা সেই কাজ। কিছুদিনের মধ্যে বন্ধুসভার এক সুহৃদের সহযোগিতায় দুটি হুইলচেয়ার ও পাঁচটি শয্যা কেনা হয়। ৩০ আগস্ট সোমবার সকালে এসব স্বাস্থ্য উপকরণ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুবনা ফারজানা, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. খুরশীদ আলম ও প্রথম আলো ভৈরব কার্যালয়ের নিজস্ব প্রতিবেদক সুমন মোল্লা।

সমস্যা সমাধানে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখায় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. খুরশীদ আলম বন্ধুসভার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, তারুণ্য জেগে না উঠলে জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা করা কঠিন। শয্যা ও হুইলচেয়ার এই দুর্যোগে মানবতার প্রতীক হিসেবে কাজ করবে।

মো. খুরশীদ আলম আরও বলেন, আক্রান্ত, মৃত্যু ও নমুনা প্রদান, এই তিন সূচকে জেলায় এগিয়ে ভৈরব। করোনার জন্য শুরু থেকে ভৈরব স্পর্শকাতর। এখন পর্যন্ত আক্রান্ত ২ হাজার ২৬৫ জন। ১১ হাজার ২১ জনের নমুনা থেকে এই সংখ্যার সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৪৩ জন। এই অবস্থায় ভৈরবে ট্রমা সেন্টারকে আইসোলেশন সেন্টার ঘোষণা করা হয়েছে। এই সেন্টারে একসঙ্গে আক্রান্ত ৩০ ব্যক্তিকে অক্সিজেন সেবা দেওয়া সম্ভব। কিন্তু শয্যা ছিল মাত্র সাতটি। ফলে শয্যার অভাবে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেন সেবা ব্যাহত হচ্ছিল।

বন্ধুসভার এই উদ্যোগ সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মন্তব্য করেন ইউএনও লুবনা ফারজানা। তিনি বলেন, ভৈরব বন্ধুসভার অনেক উদ্যোগের মধ্যে কিছু উদ্যোগ মানবিক জাগরণে ভূমিকা রেখে চলেছে। বিশেষ করে আজকের তরুণদের মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে বড় হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করছে।

বন্ধুসভার পক্ষ থেকে সভাপতি ইকরাম বখশ বলেন, ‘শয্যা ও হুইলচেয়ার না থাকায় দুর্ভোগের কথা জেনে আমাদের এক সুহৃদ সঙ্গে সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। তাঁর কল্যাণেই কাজটি সহজ হয়ে ওঠে।’

সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াংকা বলেন, ‘করোনার শুরু থেকেই ভৈরব বন্ধুসভা সচেতনতায় নানা উদ্যোগ চলমান রেখেছে। এখন আমরা সরাসরি সহযোগিতা করার অংশ হতে পেরেছি। এই মহৎ কর্ম আমাদের প্রত্যেক সদস্যকে আন্দোলিত করেছে।’

অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন ভৈরব বন্ধুসভার উপদেষ্টা মো. আলাল উদ্দিন, জনি আলম, আরাফাত ভূইয়া, সহসভাপতি সিদরাতুল রশিদ, সাবেক সহসভাপতি মেহেরুন সুমি প্রমুখ।

দপ্তর সম্পাদক, ভৈরব বন্ধুসভা