‘অত দামের কাপড়ডা আমার লাইগ্গা?’
দিনটি ৩ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার। তখন রাত পৌনে ১০টা। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা কিশোরগঞ্জগামী একটি ট্রেনের অপেক্ষায় দীর্ঘ সময় ঠায় দাঁড়িয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শামসু মিয়া (৫০)। বাড়ি কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী। দেড় যুগ ধরে ট্রেনে ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন–জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। একটি শার্টের ওপর পাতলা কম্বল জড়িয়ে শীত নিবারণের ব্যর্থ চেষ্টায় রীতিমতো যখন কাঁপছিলেন, তখন ভৈরব বন্ধুসভার বন্ধুরা তাঁর শরীরে একটি নতুন ব্লেজার জড়িয়ে দিলেন। ব্লেজার পেয়ে শামসু মিয়ার জিজ্ঞাসা, ‘অত দামের কাপড়ডা আমার লাইগ্গা?’ পরে বলেন, ‘ভালা হইল। শীত কিছুডা কম লাগব।’
শামসুর পর রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় বন্ধুদের অনুসন্ধানী চোখ খুঁজে বের করে আরও অন্তত ৫০ প্রতিবন্ধীকে। প্রত্যেকের গায়ে পরম মমতায় পরিয়ে দেওয়া হয় ব্লেজার। কাউকে কাউকে দেওয়া হয় প্যান্ট। একই সময় ১০ শিশুকে পরিয়ে দেওয়া হয় উষ্ণতা ছড়ানো কাপড়। শীতবস্ত্র হিসেবে এ কাপড় পাঠানো হয় প্রথম আলো থেকে।
আলাল উদ্দিন (৫৫)। তিনি জন্মান্ধ। পৈতৃক বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা হলেও ভৈরব রেলস্টেশন এলাকায় বাস এক যুগের বেশি সময় ধরে। রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় ভিক্ষা করে জীবন চলছে তাঁর। নতুন ব্লেজারের গন্ধ নিয়ে বলেন, ‘অনেকের কাছ থাইক্কা কাপড় পাই, কম্বল পাই কিন্তু একেবারে টাটকা কাপড় সবাই দেয় না। আপনারা দিলেন।’
রেলস্টেশন এলাকায় প্রতিবন্ধীদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ শেষে রাত ১২টার দিকে বন্ধুরা চলে যান পৌর শহরের বাজার, ভৈরবপুর ও ঘোড়াকান্দা এলাকায়। ওই সময় খুঁজে বের করা হয় শতাধিক নৈশপ্রহরীকে। তাঁদের দেওয়া হয় প্যান্ট।
কামাল মিয়া (৫২) ভৈরব বাজারের একটি বাড়ির নৈশপ্রহরী। প্যান্ট পাওয়ার পর বলেন, ‘ভালা হইল। বেড়াইতে গেলে পরতে পরুম।’
আরেক নৈশপ্রহরী বাবুল মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমরা রাইতের মানুষ। সবাই যখন আরাম কইরা লেফের নিচে ঘুমায়, আমরা তখন বাইরে হজাগ। শীতে মরলাম, নাকি বাঁচলাম। কার কী আইয়ে যায়। আপনেরা খবর নিলেন, ভালা লাগল।’
মানবিক এই কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন ভৈরব বন্ধুসভার সভাপতি সুমাইয়া হামিদ, সাধারণ সম্পাদক ছিদরাতুল রশিদ, কর্মসূচির আহ্বায়ক আরেফিন গণি, দুর্যোগ ও ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক নুদরাতুন তোরসা।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম ও প্রিয়াংকা, সহসভাপতি আল আমিন তুষার ও নাহিদ হোসাইন, বন্ধু রায়হান দ্বীপ, সানি মোল্লা, মারিয়া তানশি, সন্দীপ পাল ও জান্নাত।
নুদরাতুন তোরসা বলেন, ‘আমরা যদি মানবিক হই, তবেই মানবতার জয় হবে। এই কর্মসূচির কারণে শুধু উপকারভোগীদের উপকার হলো, এমন নয়, তরুণদের মানবিকতা জাগ্রত করতে এই ধরনের কর্মসূচি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’