তপ্ত দুপুরের তীব্র রোদে একটুখানি স্বস্তি মেলে কেবল গাছের ছায়ায়। গাছ মানুষের বন্ধু। বৈরী আবহাওয়া ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এর বিকল্প আর কিছুই হতে পারে না। তাই প্রতিবছর বর্ষায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করে প্রথম আলো বন্ধুসভা। জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিবারের মতো বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি করেছে দিনাজপুর বন্ধুসভা। এবারের প্রতিপাদ্য ‘আমার মাটি আমার দায়, গাছ রোপণে বাঁচা যায়’।
৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় এ কার্যক্রম। নিজেদের অর্থায়নে গাছ সংগ্রহের পাশাপাশি ব্র্যাক মাইক্রোফিন্যান্সের সৌজন্যে উপহারের চার হাজার গাছ মিলিয়ে পাঁচটি ধাপে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি গাছ রোপণ করেছে দিনাজপুর বন্ধুসভা। এসব গাছের মধ্যে ছিল আমগাছ, কাঁঠাল, আকাশমণি, জলপাই, চালতা, তেঁতুল, মেহগনি, হরীতকী, নিম ও কদমগাছের চারা।
১১ সেপ্টেম্বর দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার বিজোড়া নামক স্থানে, বিজোড়া উচ্চবিদ্যালয়ে ১ হাজার ২৫০ ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ বিতরণ করেন বন্ধুরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল বকুল, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকমণ্ডলীসহ স্থানীয় সমাজসেবক এরশাদুজ্জামান মোল্লা, বন বিভাগের ধর্মপুর বিট কর্মকর্তা মহসীন আলী সরকার ও প্রথম আলো দিনাজপুর প্রতিনিধি শৈশব রাজু।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শিক্ষার্থী ও বন্ধুসভার বন্ধুদের উদ্দেশে বিজোড়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল বকুল বলেন, ‘দিনাজপুর বন্ধুসভার উদ্যোগে তোমরা গাছ উপহার পাচ্ছ; আজ এই গাছ লাগাও, কয়েক বছর পরে দেখবে এই গাছ তোমাকে ফল দিচ্ছে, ফুল দিচ্ছে, ছায়া দিচ্ছে, ওষুধ দিচ্ছে। তখন দেখবে তোমাদের মনে কত আনন্দ। গাছের উপকারের শেষ নেই। অবশ্যই যথাযথভাবে গাছগুলো লাগিয়ে, এগুলোর যত্ন নেবে। আর যাঁরা গাছ বিতরণ করছেন, তাঁরা সবাই তোমাদের মতোই শিক্ষার্থী। তোমরাও একদিন তাদের মতো বড় হয়ে ভালো ভালো কাজ করবে।’
সমাজসেবক এরশাদুজ্জামান মোল্লা বন্ধুসভার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, ‘বর্তমান পরিবেশকে সুস্থ রাখতে গাছের বিকল্প নেই। আজ যে গাছ পাবে, এটাতে তোমাদের নিজেদের পাশাপাশি সমস্ত পরিবেশ উপকৃত হবে। বাড়ির আশপাশে একটু জায়গাও যেন পড়ে না থাকে। গাছ লাগাও, দেশ বাঁচাও।’
উপহারের গাছ পেয়ে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী জাহেদ ইবনে বলে, ‘এই গাছ আমাদের জীবন বাঁচাবে। অবশ্যই এটিকে ভালো করে লাগাব এবং এর যত্ন নেব।’
বন্ধুদের সাংগঠনিক কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আনিকা আক্তার বলে, ‘গাছ পেয়ে খুব ভালো লাগছে। ভবিষ্যতে আমিও আপনাদের মতো সাংগঠনিক কাজে যুক্ত হতে চাই।’
অনুভূতি প্রকাশ করে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আল মামুন বলে, ‘গাছ পাওয়ার এই অনুভূতি বলে শেষ করা যাবে না। গাছ আমাদের পরম বন্ধু। অক্সিজেনের পাশাপাশি গাছ থেকে ফুল, ফল এবং জ্বালানিও পাওয়া যায়। আমি জলপাইগাছ পেয়েছি। এটি বাড়ির উঠানে লাগাব। ধন্যবাদ আপনাদেরকে।’
কর্মসূচিতে বন্ধুদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চন্দ্র অধিকারী, সহসভাপতি সুব্রত সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক মনোরঞ্জন সিংহ, তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক দীপু রায়, বইমেলা সম্পাদক সাবিত হোসাইন, জেন্ডার ও সমতাবিষয়ক সম্পাদক সুমা আক্তার, বন্ধু সাব্বির হাসান, দিয়া বসাক, বিরোশ রায়, জাহিন নেওয়াজসহ অন্য বন্ধুরা।
এর আগে প্রথম ধাপে ৫ সেপ্টেম্বর দিনাজপুর জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলার বাতাসন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ব্র্যাকের সৌজন্যে পাওয়া গাছ রোপণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঁচ শতাধিক কাঁঠালগাছ, নিমগাছ, আমগাছ ও কদমগাছের চারা বিতরণ করেন বন্ধুরা। একই দিনে পার্শ্ববর্তী কৃষ্ণনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আরও পাঁচ শ চারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ ও রোপণ করা হয়। বন্ধুদের সঙ্গে সহযোগিতা করেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। একই দিনে দিনাজপুর সরকারি কলেজের দর্শন ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ডলফিন ক্লাবের সহযোগিতায় রোপণ করা হয় আরও এক শ গাছ।
দ্বিতীয় ধাপে জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়নে শিডিউল কাস্ট উচ্চবিদ্যালয়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহায়তায় বৃক্ষরোপণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয় এক হাজার চারা। তৃতীয় ধাপে খানসামা উপজেলার পাকেরহাট গণগ্রন্থাগারের সহায়তায় রোপণ করা হয় আরও এক হাজার গাছ। শেষ ধাপে পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ঐক্য’র সহায়তায় রোপণ করা হয় আরও এক হাজার গাছ।
সভাপতি, দিনাজপুর বন্ধুসভা