সিলেটের চার বন্ধুসভার সঙ্গে জাতীয় পর্ষদের সাংগঠনিক সভা

নগরের চৌহাট্টা এলাকার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ, সিলেট, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি ও এমসি কলেজ বন্ধুসভার বন্ধুদের একাংশছবি: বন্ধুসভা

সারা দেশের বন্ধুসভার বন্ধুরা বছরব্যাপী দারুণ সব কাজ করে থাকেন। আর সেই কাজ দেখতে যখন জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের বন্ধুরা আসেন, তখন স্থানীয় বন্ধুদের উৎসাহ কয়েক গুণ বেড়ে যায়।

বন্ধুসভার উদ্যোগে নগরের চৌহাট্টা এলাকার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলছে ১৫ দিনব্যাপী বইমেলা। এবার নিয়ে দশমবারের মতো নিজেদের উদ্যোগে এই আয়োজন করছে সিলেট বন্ধুসভা। ৯ ফেব্রুয়ারি বইমেলার সপ্তম দিন বন্ধুদের উৎসাহ দিতে ঢাকা থেকে সিলেট বইমেলা পরিদর্শনে এসেছেন জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের বন্ধুরা।

কেবল যে মেলা পরিদর্শন ও বন্ধুদের উৎসাহ দিয়েছেন তা নয়; একই সঙ্গে বইমেলা প্রাঙ্গণে সাংগঠনিক সভাও সম্পন্ন করেন বন্ধুরা। সভায় উপস্থিত ছিলেন বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জাফর সাদিক, সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন মল্লিক, সাংগঠনিক সম্পাদক নেওয়াজুল মওলা, ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার উপদেষ্টা শামসুদ্দোহা সাফায়াত, সহসভাপতি মাহমুদা বুশরা, সাধারণ সম্পাদক নাঈমা সুলতানা, জেন্ডার ও সমতাবিষয়ক সম্পাদক শারমিন আরা তিশা, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শেখ কাব্য এবং বন্ধুসভার ডিজিটাল কনটেন্ট সহকারী তাহসিন আহমেদ। আরও উপস্থিত ছিলেন সিলেট, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি ও এমসি কলেজ বন্ধুসভার অন্তত ৬০ বন্ধু।

সাংগঠনিক সভা
ছবি: বন্ধুসভা

বেলা সাড়ে তিনটায় শুরু হওয়া সভায় জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জাফর সাদিক এমন দুর্দান্ত একটি বইমেলা আয়োজনের জন্য সিলেট বন্ধুসভাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমরা চাই, সব বন্ধুসভা এমন সেরা সেরা কাজ করুক। বন্ধুরা বইমেলা করুক, বই পড়ুক। প্রতিটি কাজে জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ সব সময় পাশে আছে। আজকে সিলেটে এসে আপনাদের সঙ্গে দেখা করা সেই উদ্দেশ্যেই।’ অনেক সময় দেখা যায়, বন্ধুসভাগুলো ভালো ভালো কাজ করলেও প্রয়োজনীয় প্রচারের অভাবে তা সেভাবে সবাই জানতে পারেন না। তাই প্রতিটি কাজের নিউজ ও ছবি অবশ্যই করতে হবে জানিয়ে জাফর সাদিক বলেন, ‘নিউজে এমন ছবি দেবেন, যাতে ইভেন্টের কাজও উঠে আসে।’

খুব শিগগিরই দ্রব্যমূল্য ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ শুরু করা হবে। এ ছাড়া ‘এসো মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনি’ শিরোনামে ভিডিও ডকুমেন্টারি তৈরি, বিভিন্ন ঘরোয়া অনুষ্ঠান করা, বিভিন্ন জ্ঞানী লেখকের বই নিয়ে পাঠচক্র আয়োজন করতে বন্ধুদের আহ্বান জানান জাফর সাদিক।

জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন মল্লিক বলেন, ‘দেশের সেরা বন্ধুসভাগুলোর মধ্যে সিলেট অন্যতম। এত বড় একটি বইমেলার আয়োজনই প্রমাণ করে কেন তারা সেরা।’

এর আগে শুরুতেই পরিচয় পর্ব সম্পন্ন হয়। সিলেট, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি ও এমসি কলেজ বন্ধুসভার বিভিন্ন কাজের অগ্রগতির খোঁজখবর নেন জাতীয় পর্ষদের নেতারা। কীভাবে সংগঠনকে আরও গতিশীল করা যায় এবং বন্ধুদের বেশি বেশি সম্পৃক্ত করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা করা হয়। এ সময় উপস্থিত বন্ধুদের উদ্দেশে বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন জাতীয় পর্ষদের সাংগঠনিক সম্পাদক নেওয়াজুল মওলা। তিনি বলেন, ‘কাজ বাস্তবায়ন করতে হলে সাংগঠনিক পরিকল্পনার বিকল্প নেই। সামনে জাতীয় সম্মেলন, সমাবেশ আছে। সেগুলোতে অংশগ্রহণ করতে হবে। সারা বছরের কাজের প্রতিবেদন রাখতে হবে। কাজের সূচি তৈরি করতে হবে। পরিবেশবিষয়ক কাজ করতে হবে। যাঁরা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশকে বিশ্বাস করেন, তাঁরাই বন্ধুসভার বন্ধু। আমাদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে হবে।’ নেওয়াজুল মওলা আরও বলেন, ‘সব বন্ধুসভা নিজস্ব কিছু কাজ রাখার চেষ্টা করবে, যেটা দিয়ে সারা দেশের মানুষ আপনাদের একনামে চিনবে। মাঠপর্যায়ে গিয়ে আরও বেশি কাজ করতে হবে।’

বক্তব্য দিচ্ছেন জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জাফর সাদিক
ছবি: বন্ধুসভা

সিলেট বন্ধুসভার সভাপতি অন্তর শ্যাম বলেন, ‘বিগত ৯ বছর যাবৎ আমরা বইমেলা করছি। এবার দশমবারের মতো বইমেলার আয়োজন করেছি। প্রায় বন্ধুরই যাত্রা শুরু হয়েছে বইমেলা দিয়ে। ভবিষ্যতে আমরা আরও বড় পরিসরে নতুন কিছু করার পরিকল্পনা করছি।’ এমসি কলেজ বন্ধুসভার সভাপতি সুমন মিয়া বলেন, ‘আমরা প্রতি শুক্র ও শনিবার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়াই। আমরা নিজস্ব বইমেলাও করি।’

মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি বন্ধুসভার বন্ধুরা বলেন, ‘আমরা বন্যার সময় বন্যার্তদের ত্রাণ দিয়েছি। বইয়ের প্রতি নিজেদের জ্ঞানকে আরও প্রসারিত করতে বিভিন্ন পাঠাগার ভ্রমণেরও পরিকল্পনা আছে।’ শাবিপ্রবি বন্ধুসভাও আগামী দিনে তাদের বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা জানায়।

আমরা অনেক সময় কাজের চাপে মানসিক সমস্যায় পড়ে যাই। এ থেকে কীভাবে উত্তরণ পাওয়া যায় এবং মনোবল শক্ত ও নিজেকে হাসিখুশি রাখা যায়, তা নিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দেন সাইকোথেরাপিস্ট ও ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সহসভাপতি মাহমুদা বুশরা। ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক নাঈমা সুলতানা বলেন, ‘আমাদের পাঠচক্র ও স্বেচ্ছাসেবী কাজের মাধ্যমে তৈরি হয় যোগাযোগ ও একে অপরের সঙ্গে বন্ধুত্ব। সিলেট বইমেলার মতো ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন আগে দেখিনি। ১০ বছর ধারাবাহিকতার সঙ্গে বইমেলা আয়োজন করা সত্যিই গৌরবের।’

সাংগঠনিক সভা শেষে বইমেলা ঘুরে দেখেন সবাই। একপর্যায়ে জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের বন্ধুদের মঞ্চে ডেকে নিয়ে উপস্থিত দর্শনার্থীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে বন্ধুসভা নিয়ে কথা বলেন সভাপতি জাফর সাদিক, সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন মল্লিক ও সাংগঠনিক সম্পাদক নেওয়াজুল মওলা। এ সময় জাতীয় পর্ষদকে শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করেন সিলেট বন্ধুসভার বন্ধুরা।

ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকেল পাঁচটা। বইমেলা প্রাঙ্গণের ঠিক মাঝখানে শুরু হয় বইমেলায় বন্ধুর বইয়ের পঞ্চম পর্ব। এবারের লেখক বন্ধু ছিলেন সিলেট বন্ধুসভার সহসভাপতি হিমাদ্রি শর্মা এবং সঞ্চালনা করেন জাতীয় পর্ষদের সভাপতি জাফর সাদিক। এই পর্বে উঠে আসে বই ও লেখালেখি নিয়ে নানা কথা।

বন্ধু, সিলেট বন্ধুসভা