‘পল্লী-সমাজ’ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত একটি উপন্যাস। এতে মোট ১৯টি পরিচ্ছেদ রয়েছে। প্রথম ৯টি পরিচ্ছেদ ১৩২২ বঙ্গাব্দের আশ্বিন, অগ্রহায়ণ ও পৌষ সংখ্যা ‘ভারতবর্ষ’ মাসিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এই ৯টি পরিচ্ছেদে উপন্যাসটি শেষ করার কথা ভাবলেও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পরে আরও ১০টি পরিচ্ছেদ রচনা করেন। ১৩২২ বঙ্গাব্দের মাঘ মাসে (১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ জানুয়ারি) ভারতবর্ষ পত্রিকার মালিক গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় অ্যান্ড সন্স এই ১৯টি পরিচ্ছেদ পুস্তকাকারে প্রকাশ করেন। ১৩৫৫ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ মাসে পল্লী-সমাজের নাট্যরূপ ‘রমা’ প্রকাশিত হয়।
ঔপনিবেশিক শৃঙ্খলাবদ্ধ ভারতবর্ষের ক্ষয়িষ্ণু সমাজের আর্তনাদকে অন্তরে ধারণ করে পীড়িত–বঞ্চিতদের ব্যথার গল্প নিয়ে বাংলা সাহিত্যে আগমন করেন অমর কথাশিল্পীখ্যাত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৭৬-১৯৩৮)। বাঙালির পারিবারিক জীবনের নানা টানাপোড়েনের পাশাপাশি সামাজিক ও জাতীয় জীবনের সংকটকে তুলে এনেছেন নিজের লেখায়। এরই প্রেক্ষিতে উপনিবেশ–শৃঙ্খলিত বাংলার পল্লি সমাজের অনাচার ও ক্ষুদ্র গ্রাম-রাজনীতির পটভূমিকায় রচনা করেছেন ‘পল্লী-সমাজ’। উপন্যাসে সব অনাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে রমেশদের সচেতন দ্রোহ ও বিপ্লবের মাধ্যমে শরৎচন্দ্র উত্তরণের উপায় নির্দেশ করেছেন। ফলে ওই সময়ে উপন্যাসটি সাড়া ফেলে। সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত হলে, আন্দোলনের ইশতেহার রূপে কর্মীদের মধ্যে হাতে লিখিত সংখ্যা প্রচারিত হয়।
জমিদারদের নিষ্ঠুর দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে অসহায় প্রজাদের চিরকালের হাহাকার ধ্বনিত হয়েছে ‘পল্লী-সমাজ’ উপন্যাসে। এই উপন্যাসের কাহিনিধারায় বর্ণিত হয়েছে— বাংলার পল্লি জীবনের নিচুতা ও ক্ষুদ্র রাজনীতির পটভূমিকায় এক আদর্শ যুবক-যুবতীর সম্পর্ক ও বিশেষ করে তাদের অভিশপ্ত প্রেমকাহিনি। এসেছে মহাজন ও জমিদার শ্রেণির স্বার্থান্বেষী চরিত্র। আগুনের শেষ, ঋণের শেষ ও শত্রুর শেষ রাখতে নেই—এ চিন্তাধারার মধ্যে পড়ে যায় প্রগতিশীল সব আবেগ ও কার্যকলাপ। তাতে নষ্ট হয় সমাজ, বাধাগ্রস্ত হয় সমাজ সচেতনতা। তবু রমেশরা থেমে থাকে না। তারা আছে বলেই সমাজ আলোকিত হয়। সেই আলোকেই আমরা বাস্তব জীবনের স্বপ্ন দেখি। সমাজে এত সব ঘুণেধরা অনিয়ম, তার সঙ্গে দুটি নর-নারীর প্রেমগাথা লিখেছেন উপন্যাসে।
২১ অক্টোবর উপন্যাসটি নিয়ে পাঠের আসর করেছে সিলেট বন্ধুসভা। প্রথম আলো সিলেট অফিসের বন্ধুসভা কক্ষে এটি অনুষ্ঠিত হয়। পাঠচক্রে বইটির প্রকাশকাল, মূল বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেন বন্ধু রেজাউল হক। তিনি বলেন, ‘শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় শুধু নারীর স্নেহশীলতা ও মানবিক হৃদয়াবেগের রূপকার নন, সামাজিক তথা জাতীয় অনাচার ও সংকটেরও সার্থক রূপকার। আর এ সংকটকে শুধু বর্ণনাদাতাই নন, সংকট নিরসন চেষ্টার উপায় নির্দেশকও বটে।’
পাঠচক্রে আরও উপস্থিত ছিলেন বন্ধু সমীর বৈষ্ণব, দেব রায় সৌমেন, ফারহানা হক, ফয়সাল আহমেদ, সূবর্ণা দেব, অনুপমা দাস, জুনায়েদ আহমেদ, কৃত্য ছত্রী, ধীমহি ধৃতি, সৌম্য মন্ডল, প্রনব চৌধুরী, ওয়াসিফ হাসনাত, আসমান আহমেদসহ অন্য বন্ধুরা।
পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, সিলেট বন্ধুসভা