‘চলো না ঘুরে আসি অজানাতে, যেখানে নদী এসে থেমে গেছে’—পুরোনো দিনের চিরসবুজ এই গান যেন বারবার স্মরণ করিয়ে দেয় কোনো এক অজানায় হঠাৎ ঘুরে আসার কথা। বাংলাদেশের প্রকৃতির বুকেও যেকোনো ঋতুতে ঘুরে বেড়ানো যেন এক অনন্য অভিজ্ঞতা। সেই অভিজ্ঞতাকে আরও গভীর করে তোলে শীত কিংবা বর্ষার ছোঁয়া। ঠিক তেমনই এক মনোমুগ্ধকর দিন ছিল ১৩ সেপ্টেম্বর। সেদিন চট্টগ্রাম বন্ধুসভার বন্ধুরা মিলিত হয়েছিল ‘বর্ষায় বর্ষাভোজনে’। মুষলধারে বৃষ্টি আর স্নিগ্ধ পরিবেশের মধ্যে পতেঙ্গা সৈকতের কাছাকাছি হালিশহর সেনানিবাসের গানার্স ট্রেনিং এরিয়া পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল বন্ধুদের মিলনমেলায়।
সেদিনের পরিবেশ যেন প্রকৃতির এক অপূর্ব রূপ ধারণ করে। আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, চারদিকে সবুজের সমারোহ এবং অঝোর বৃষ্টি। সব মিলিয়ে দিনটি ছিল সত্যিই অপূর্ব। বন্ধুরা মিলে খেলাধুলা, নাচ, গান, অভিনয় এবং কায়াকিংয়ের মতো আকর্ষণীয় সব আয়োজনে বর্ষাভোজন হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত।
সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে বন্ধুরা মিলিত হন চট্টগ্রাম বন্ধুসভার অফিসে। সেখান থেকে ঠিক ১০টায় বাসযোগে যাত্রা শুরু হয় গানার্স ট্রেনিং এরিয়ার উদ্দেশে। বাসে বন্ধুরা সম্মিলিতভাবে এক সুরে গান, ছবি তোলা, নানান হাস্যরসে মেতে ওঠেন। গন্তব্যে পৌঁছানোর পর বন্ধু নুরুজ্জামান খান ও মাসুদ রানার নেতৃত্বে দুটি দল গঠন করা হয়। গানার্সের ভেজা মাঠে ক্রিকেট খেলার মুহূর্তটি ছিল অনবদ্য। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে ভিজে খেলায় লড়াই হয় হাড্ডাহাড্ডি। বিজয়ী হয়েছে নুরুজ্জামান খানের দল।
এ ছাড়া ছিল লুডু, চিপস্টারসহ নানা ধরনের খেলার আয়োজন। হলুদ ও সবুজ—দুটি দলে বিভক্ত হয়ে বন্ধুরা এসব খেলায় অংশ নেন। উত্তেজনা যেমন ছিল, তেমনই সবার মিলেমিশে আনন্দ করার অভিজ্ঞতাও অসাধারণ।
সাংস্কৃতিক পর্ব ছিল একটু ব্যতিক্রম। লটারি করে যাঁর ভাগ্যে যে কাগজটি ওঠে, সেই কাগজের লেখা অনুযায়ী নাচ, গান কিংবা অভিনয় করে দেখাতে হবে। বেশ মজার এই আয়োজনে বন্ধুদের উল্লাস এবং তাঁদের ভেতরের লুকায়িত প্রতিভা দেখা ছিল উপভোগ করার মতো।
অনুষ্ঠান শেষে সবাই মেতে ওঠেন কায়াকিংয়ে। গানার্স ট্রেনিং এরিয়ার লেকের মধ্যে বোট নিয়ে কায়াকিংয়ের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা ছিল অন্য রকম। বোট ভাড়া করা, ছবি তোলা—সবই যেন আনন্দের একেকটি অংশ। অবশ্য বর্ষাভোজনের আসল আকর্ষণ ছিল খিচুড়ি। ঝুম বৃষ্টিতে খিচুড়ি না খেলে কি জমে? ধোঁয়া ওঠা খিচুড়ি, সঙ্গে ডিম, বেগুনভাজা, আচার আর মাংসের স্বাদ সবার ক্লান্ত মন মুহূর্তেই তরতাজা করে দেয়। একসঙ্গে বসে খিচুড়ি উপভোগ করা আর জমজমাট আড্ডা বর্ষাভোজনকে করে তোলে স্মৃতিময়।
অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বন্ধুরা বলেন, ‘বর্ষায় বর্ষাভোজন শুধু একটি মিলনমেলা নয়, বরং এটি ছিল বন্ধুত্বের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার এক সুন্দর উপলক্ষ। বৃষ্টির মধ্যে প্রকৃতির সান্নিধ্যে কাটানো এই দিনটি স্মৃতির পাতায় বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে, যা অনেক দিন ধরে সবার মনে গেঁথে থাকবে।’
আয়োজনের সমন্বয়ক হিসেবে ছিলেন বন্ধু মাসুদ রানা, সাইদ আল সোহেল ও রুমিলা বড়ুয়া। অনুষ্ঠান শেষে চট্টগ্রাম বন্ধুসভার অফিসকক্ষে বিভিন্ন খেলায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পুরস্কার তুলে দেন চট্টগ্রাম বন্ধুসভার উপদেষ্টা শিহাব জিসান ও ফাহিম উদ্দিন।
বন্ধু, চট্টগ্রাম বন্ধুসভা