সবাই মিলে যক্ষ্মা প্রতিরোধ করতে হবে

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘যক্ষ্মা সচেতনতাবিষয়ক প্রচারণা’ নিয়ে দিনব্যাপী কর্মশালা
ছবি: বন্ধুসভা

‘সারা দেশে প্রতিদিন মারা যাচ্ছেন অসংখ্য যক্ষ্মা রোগী। অথচ এর তেমন কোনো প্রচার নেই। সংখ্যাটি ভয়াবহ হলেও আমরা এ নিয়ে আতঙ্কিত বোধ করছি না। কিন্তু করোনা মহামারিতে এর থেকে কম মানুষ মারা গেলেও অনেক বেশি আতঙ্কিত হয়েছি। করোনা প্রতিরোধে সচেষ্ট হয়েছি। যক্ষ্মা নিয়ে কিন্তু আমরা তেমন ভাবছি না। সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের যে জনবল আছে, তা দিয়ে যক্ষ্মা প্রতিরোধ সম্ভব নয়। এ জন্য রোগটি প্রতিরোধে কাজ করছে নানা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা।’ বলছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন এস এম মাহমুদুর রশিদ।

যক্ষ্মার বিনা মূল্যে পরীক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে সরকার। তবু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। দরকার আরও ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচারণা। এবার এ কার্যক্রমে যুক্ত হলো প্রথম আলো বন্ধুসভা। ৬ আগস্ট এ নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে দিনব্যাপী কর্মশালা। ইউএসএআইডির পৃষ্ঠপোষকতায় ও আইসিডিডিআরবির পরিচালনায় এর আয়োজন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভা। কর্মশালায় ২৫ জন বন্ধু অংশ নেন।

সিভিল সার্জন এস এম মাহমুদুর রশিদ বলেন, ‘করোনা মহামারি মোকাবিলায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে পাড়া-মহল্লা, ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যায়ে কাজ করে সফলতা পাওয়া গেছে। এ কাজের কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জ মডেল হিসেবে খ্যাতি লাভ করে এবং জেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদকও পেয়েছেন। যক্ষ্মা প্রতিরোধে আমরা সে ধরনেরই একটি কর্মসূচি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। সেটি নিয়ে আলোচনাও হচ্ছে। এ ধরনের কর্মসূচিতে বন্ধুসভা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

কর্মশালায় বক্তব্য দেন জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির জেলা সার্ভিল্যান্স মেডিকেল অফিসার আসহাব শাহরিয়ার, প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার সভাপতি সাঈদ মাহমুদ। সঞ্চালনা করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার সহসভাপতি আরাফাত মিলেনিয়াম। যক্ষ্মাবিষয়ক আলোচনা, চাইল্ড টিবি, অ্যাডাল্ট টিবি, ডকুমেন্টারি ও প্রেজেন্টেশন পর্ব পরিচালনা করেন আইডিডিআরবি পরিচালিত ইউএনএআইডিস অ্যালায়েন্স ফল কমব্যাটিংটিবি (এসিটিবি) ইন বাংলাদেশ কার্যক্রমের মেডিকেল অফিসার আহসান তাকিব।

কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারীরা
ছবি: বন্ধুসভা

আহসান তাকিব যক্ষ্মা রোগের বিস্তার ও ভয়াবহতা, রোগের লক্ষণ, শিশুদের যক্ষ্মা ও লক্ষণ, রোগনির্ণয়, চিকিৎসা সম্পর্কে বর্ণনা দেন। চিকিৎসা চলাকালীন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে করণীয় বিষয়ে আলোচনা করেন। যক্ষ্মা সম্পর্কে প্রচারণার মাধ্যমে রোগী শনাক্ত করতে মানুষকে হাসপাতালে পাঠানোর জন্য বন্ধুসভার বন্ধুদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

পরে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে পাঁচটি গ্রুপে ভাগ করে কর্মশালায় অর্জিত জ্ঞানের ওপর গ্রুপভিত্তিক আলোচনা করা হয়। শেষে সবার মধ্যে সনদ বিতরণ করা হয়। সনদ বিতরণ করেন সিভিল সার্জন এস এম মাহমুদুর রশিদ।

কর্মশালায় অংশ নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক ঈষিতা খাতুন বলেন, ‘প্রথমে যক্ষ্মা বলতে শুধু হাঁচি–কাশি, রক্তসহ কফ, ফুসফুসের সমস্যাকেই বুঝতাম। এখন কর্মশালায় এসে যক্ষ্মা সম্পর্কে আরও অনেক কিছু জানতে পারলাম। যেমন যক্ষ্মা বিভিন্ন গ্রন্থিতে, পেটে, হাড়ে, ব্রেনে হতে পারে। ফলে মেরুদণ্ডও বাঁকা হতে পারে। এ ছাড়া রোগটি শনাক্তকরণ দুভাবেও করা যায়। একটি কফ পরীক্ষা, অন্যটি বুকের এক্স–রের মাধ্যমে। আশা করি আমরা এ থেকে নিজেরা সচেতন হব এবং অন্যদের সচেতন করতে কাজ করব।’

অর্থ সম্পাদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভা