শুধু রোপণ করেই শেষ নয়, গাছকে সন্তানের মতো লালন করতে হবে

নোয়াখালী বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিছবি: বন্ধুসভা

‘আর নয় প্লাস্টিক দূষণ, জীবন বাঁচাতে বৃক্ষরোপণ’ প্রতিপাদ্যে পাঁচ পর্বে জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি করেছে নোয়াখালী বন্ধুসভা। এর অংশ হিসেবে বন্ধুরা অর্জুন, বহেরা, হরীতকী, মেহগনি, আম, কাঁঠাল, বরই, জলপাই, ঝাউগাছ, শিশু, আমলকী, জাম, লিচুগাছসহ ফলদ, বনজ, ঔষধিসহ বিভিন্ন প্রজাতির ১ হাজার ৬৮০টি গাছের চারা বিতরণ করেন।

গত ২৪ জুলাই অরুণ চন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি শুরু হয়। এ পর্বে ২০০ শিক্ষার্থীকে বৃক্ষ বিতরণ ও স্কুল প্রাঙ্গণে গাছ রোপণ করেন বন্ধুরা। বৃক্ষবন্ধু হিসেবে নির্বাচিত হয় দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তামজিদুল ইসলাম।

দ্বিতীয় পর্বে ১২ আগস্ট বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর উচ্চবিদ্যালয়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালিত হয়। এ পর্বে ৩০০ শিক্ষার্থীকে বৃক্ষ বিতরণ এবং বিদ্যালয়ের আঙিনায় শতাধিক গাছ রোপণ করা হয়। এ সময় নোয়াখালী বন্ধুসভার উপদেষ্টা সুমন নূর বলেন, ‘এই মাটি, পরিবেশ বাঁচাতে হলে প্লাস্টিক দূষণ কমাতে হবে। বেশি বেশি গাছ রোপণ এবং সেগুলোর যথাযথ পরিচর্যা করতে হবে।’

চারা গাছ রোপণ।

উপদেষ্টা লায়লা পারভীন বলেন, ‘গাছ শুধু রোপণ করেই শেষ নয়, একে নিজের বন্ধু এবং সন্তানের মতো লালন করতে হবে। একটা সময় এই গাছ আমাদের ফল, ফুল, ছায়া দেবে; সে–ই হবে আমাদের বন্ধু।’

উপদেষ্টা মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘নোয়াখালী বন্ধুসভা নানাবিধ সামাজিক কাজ করে থাকে। তার মধ্যে বৃক্ষরোপণ অন্যতম।’ এ সময় তিনি পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণের গুরুত্বারোপ করেন।

একলাশপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসলেহ উদ্দিন বলেন, ‘বর্তমান সময়ে এত বেশি বৃক্ষনিধন হচ্ছে। ফলে ওজোনস্তর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নোয়াখালী বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি আমাদের পরিবেশের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’

নোয়াখালী বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি
ছবি: বন্ধুসভা

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালী বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি আসিফ আহমেদ ও সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ দোলন। তাঁরা পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টিক দূষণ রোধ, প্লাস্টিকের বিকল্প ব্যবহার নিয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

এই পর্বে বৃক্ষবন্ধু হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে একলাশপুর উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা। সে নিজ উদ্যোগে চলতি বছর ১৬টি গাছ রোপণ করেছে। তাকে উপহারস্বরূপ ৫টি গাছ দেওয়া হয়।

তৃতীয় পর্বে ২৫ আগস্ট বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালিত হয় সদর উপজেলায় মাইজদী বালিকা বিদ্যানিকেতন স্কুলে। এ সময় উপস্থিত বন্ধুসভার উপদেষ্টা নিলয় মিলন বলেন, ‘বিগত কয়েক বছর তাপমাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে পৃথিবী একসময় মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। এ থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় আমাদের অনেক বেশি গাছ লাগাতে হবে।’

গাছ উপহার পেয়ে খুশি শিক্ষার্থীরা।

মাইজদী বালিকা বিদ্যানিকেতন স্কুলের প্রধান শিক্ষক রোকেয়া সুলতানা বলেন, নোয়াখালী বন্ধুসভার এমন উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের পরিবেশসচেতন করে তুলবে। এ সময় তিনি ভবিষ্যতে এ ধরনের উদ্যোগে নোয়াখালী বন্ধুসভার পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

এই পর্বে বৃক্ষবন্ধু হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল আশফি ও অষ্টম শ্রেণির নুসাইবা জাহান। এ বছর আশফি ১২টি, নুসাইবা ১৪টি চারা গাছ রোপণ করেছে। পরে স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২৫০টি গাছের চারা বিতরণ করেন বন্ধুরা। এ ছাড়া স্থানীয়দের মধ্যে ১৮০টি চারা বিতরণ ও রোপণ করা হয়।

চতুর্থ পর্বে ৩১ আগস্ট সদর উপজেলার লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের ফতেহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৫০ শিক্ষার্থীর মধ্যে চারা বিতরণ করে নোয়াখালী বন্ধুসভা। এ বছর একাই ১৬টি গাছ রোপণ করায় বৃক্ষবন্ধু নির্বাচিত হয় পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী উম্মে মরিয়ম।

গাছ বিতরণ।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ফতেহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন বলেন, ‘তোমাদের মতো কোমলমতি শিশুরাই ভবিষ্যতের সুন্দর পৃথিবী বিনির্মাণের হাতিয়ার। তোমাদের হাতেই সযত্নে বেড়ে উঠবে আমাদের স্বপ্নের সবুজ বিপ্লব। তোমাদের বেশি বেশি গাছ লাগাতে হবে।’

নোয়াখালী বন্ধুসভার সাংগঠনিক সম্পাদক সানি তামজীদ বলেন, ‘প্লাস্টিকের দূষণ প্রতিরোধে আমাদের প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে হবে। টিফিনের পর প্লাস্টিকের প্যাকেট যত্রতত্র না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে।’

একই দিন পঞ্চম পর্বে মোহাম্মদ আবদুস ছাত্তার উচ্চবিদ্যালয়ে চারা গাছ রোপণ ও বিতরণের মধ্য দিয়ে নোয়াখালী বন্ধুসভার কর্মসূচি শেষ হয়। বিদ্যালয়ের ৪০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে গাছের চারা বিতরণ করেন বন্ধুরা। সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী তনুশ্রী পাল এ বছর সাতটি গাছ রোপণ করায় তাকে বৃক্ষবন্ধু নির্বাচন করা হয়।

গাছ উপহার পেয়ে খুশি শিক্ষার্থীরা।

মোহাম্মদ আবদুস ছাত্তার উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পলাশ চন্দ্র শীল বলেন, ‘বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ছি। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মতো সামাজিক উদ্যোগগুলোই পারে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণ দিতে।’

নোয়াখালী বন্ধুসভার পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক শাহিদা রেশমি ওজোনস্তর বাঁচাতে বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা আলোকপাত করেন। কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাজকির হোসেন ও ধ্রুব ভূঁইয়া, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সম্পাদক নজরুল ইসলাম, প্রশিক্ষণ সম্পাদক জাহিদুল হাসান, দপ্তর সম্পাদক নয়ন চন্দ্র কুরী, বন্ধু শান্ত চন্দ্র দে, কানিজ ফাতেমা, হামিম, ফাতিকুর রহমানসহ অনেকে।

দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক, নোয়াখালী বন্ধুসভা