ঝালকাঠি বন্ধুসভার উদ্যোগে একুশের প্রথম প্রহরে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টায় বন্ধুরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে বীর শহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ শেষে উপদেষ্টা ছবির হোসেন বলেন, ‘১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেসকোর প্যারিস অধিবেশনে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় এবং সেখানে ১৮৮টি দেশ সমর্থন জানালে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোতে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে।’
প্রথম আলোর প্রতিনিধি মাহমুদুর রহমান পারভেজ বলেন, ‘আজ এমন একটি দিন, যে দিন না এলে আমরা কখনোই মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারতাম না। পেতাম না একুশের চেতনার হাত ধরে লাল-সবুজ পতাকা ও স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ।’
মহান ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট এক দিনে তৈরি হয়নি, বাঙালি জাতির আত্মান্বেষণ ও অধিকার আদায়ের সচেতনতার বহিঃপ্রকাশ এই অমর একুশ। যার ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন–সংলগ্ন আমতলায় ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয়। নুরুল আমিন সরকার আরোপিত ১৪৪ ধারা ভঙ্গের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ছাত্ররা। ছাত্রসভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক, ১০ জন মিছিল করে ১৪৪ ধারা ভাঙবেন। ছাত্রসমাজ প্রতিবাদ মিছিল করে ১৪৪ ধারা ভাঙল। পুলিশ বাহিনীর গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অনেকে শহীদ হন। সেদিন যদি সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারেরা মায়ের ভাষার দাবিতে প্রাণ না দিতেন, তাহলে কখনোই আমরা রাষ্ট্রভাষা বাংলা পেতাম না।
সেই আন্দোলন কেবল ভাষার জন্য ছিল না, ছিল পাকিস্তানি শাসন-শোষণের রক্তচক্ষুর বিরুদ্ধে বাঙালির দৃঢ় প্রতিবাদ হিসেবেও। নানাভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকেরা বাঙালিকে দমন-পীড়ন করার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। বাঙালির সচেনতা ও প্রতিবাদী দুর্বার আন্দোলনে তারা বারবার পিছু হটতে বাধ্য হয়। একুশে ফেব্রুয়ারি মানেই তাই মাথা নত না করার এক রক্তাক্ত ইতিহাস, যার হাত ধরে আমরা অর্জন করেছি আমাদের স্বাধীনতা।
একুশের ভাষাশহীদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত দিনটি আমাদের গর্ব ও অহংকার। ভাষা আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের ঐতিহ্য। ভাষার মাধ্যমেই আমরা প্রকাশ করি আমাদের ভাবনা, আমাদের অনুভূতি। বাংলাভাষা সুস্পষ্ট ও শুদ্ধরূপে বলব।
কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন বন্ধু শাকিল হাওলাদার, সহসভাপতি মুহিত খান, সাব্বির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক বীথি শর্মা বণিক, সাংগঠনিক সম্পাদক রাহাত মাঝি, অর্থ সম্পাদক রোহান বিন নাসির, সাংস্কৃতিক সম্পাদক চাঁদনী জাহান, প্রচার সম্পাদক মো. রাফি, মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক তহমিনা আইরিন, কার্যনির্বাহী সদস্য আজিজুল হক, আরাফাত হোসেন, জান্নাতুল ইসলাম, বন্ধু সৈয়দ হান্নান, উজ্জ্বল দুয়ারী, মাহমুদ হাসান, মাহিদুল ইসলাম, শাহরিয়ার ইসলাম, মুবিন ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, তারিকুল ইসলাম, কুশাল সাহা, মো, রাকিব, সুমন দুয়ারী প্রমুখ।
সাধারণ সম্পাদক, ঝালকাঠি বন্ধুসভা