পাঠের আসরের বিষয় চন্দ্রাবতীর ‘দস্যু কেনারামের পালা’

ভৈরব বন্ধুসভার ১৭২তম পাঠের আসরছবি: আনাস খান

দীনেশচন্দ্র সেন সম্পাদিত ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’ একটি সংকলন গ্রন্থ, যা পূর্ব ময়মনসিংহ অঞ্চলে প্রচলিত ১০টি পালাগান নিয়ে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। মৈমনসিংহ গীতিকার অন্যতম পালাগান হলো ‘দস্যু কেনারামের পালা’, যার রচয়িতা কবি চন্দ্রাবতী। চন্দ্রাবতী ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম বাঙালি নারী কবি। তিনি অন্যান্য কাব্য ছাড়াও পিতার আদেশে রামায়ণ রচনা করেছিলেন। লেখনী শক্তির দ্বারা পৌঁছে গিয়েছেন সর্বসাধারণের কাছে। তাঁর বিশেষ পরিচিতির কারণ মলুয়া (কাব্য), দস্যু কেনারামের পালা, রামায়ণ (অসমাপ্ত)। এই গানগুলো প্রাচীনকাল থেকে মানুষের মুখে মুখে প্রচারিত হয়ে আসছে। ভৈরব বন্ধুসভার ১৭২তম পাঠের আসরে কথাগুলো বলেন পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক তানসি নাহার।

১৫ জানুয়ারি বিকেলে প্রথম আলো ভৈরব অফিসে মুদ্রিত বই পড়ার দলগত আসর পাঠচক্রে বসেন ভৈরব বন্ধুসভার বন্ধুরা। এবারের বিষয় ছিল চন্দ্রাবতীর ‘দস্যু কেনারামের পালা’। সঞ্চালনা করেন তানসি নাহার। পাঠ আলোচনার শুরুতে তিনি বলেন, পালাগানের নায়ক অর্থাৎ কেনারামের জন্ম, বেড়ে ওঠা, দস্যু দলের নেতা হওয়া, বংশীদাসের সংস্পর্শে এসে তার জীবনে করা ভুলগুলো উপলব্ধি করা, অতঃপর নিজেকে শুধরিয়ে ধর্মের পথে হাঁটা। এই সবকিছুই কবি তাঁর পালায় খুব দৃশ্যমানভাবে তুলে ধরেছেন।’

আলোচনা করছেন উপদেষ্টা সুমাইয়া হামিদ
ছবি: আনাস খান

উপদেষ্টা সুমাইয়া হামিদ বলেন, ‘কেনারামকে তার মা–বাবা মনসা দেবী থেকে পূজার বিনিময়ে ক্রয় করেছিলেন। কেনারাম তার জীবদ্দশায় কোথাও স্থির ছিল না। সে দস্যু দলের নেতা হলেও অসহায়-নিপীড়িতদের হত্যা করত না। ধনীর ধন নিয়ে সে মাটিতে চাপা দিয়ে দিত। কারণ, তার যুক্তি ছিল ধনীর ধন এনে গরিবকে দিলে তা আবার ঘুরেফিরে ধনীর কাছেই যাবে।’

প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক সুমন মোল্লা প্রতিক্রিয়ায় জানান, ‘দস্যু কেনারাম একজন দস্যু হলেও সে সমাজ থেকে ধনী-গরিবের বৈষম্য দূর করতে চেয়েছিল। তার দার্শনিক ও আর্থিক জ্ঞান দুটিই উপলব্ধি করার মতো। আমরা অনেক কিছু পড়ি জানার জন্য। কিন্তু সবকিছু ধারণ করি না। মৈমনসিংহ গীতিকা আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্য। এটি ধারণ করতে হবে।’

সভাপতি প্রিয়াংকা বলেন, ‘আমার বই পড়ার অভ্যাস করেছে পাঠচক্র। যাত্রা শুরুটা হয় পাঠচক্রকে ঘিরেই। আজকের সমৃদ্ধ আলোচনায় শিখলাম অনেক কিছু।’
মৈমনসিংহ গীতিকার দুটি উল্লেখযোগ্য গীতিনাট্য মহুয়া ও চন্দ্রাবতী নিয়ে মঞ্চনাটক প্রদর্শন করেছে ভৈরব বন্ধুসভা। এর মধ্যে মহুয়া দুইবার মঞ্চায়িত হয়। প্রতিটি মঞ্চনাটক দর্শকপ্রিয়তা পায়।

সাবেক সভাপতি নাহিদ হোসাইন বলেন, ‘বড় হতে হলে বই পড়তে হবে, পত্রিকা পড়তে হবে। পাঠচক্রের আসরে আমি খুঁজে পাই জ্ঞানের অক্সিজেন। মৈমনসিংহ গীতিকার আলোচনায় পরিচিত হলাম নতুন কিছু শব্দের সঙ্গে।’ সাধারণ সম্পাদক মানিক আহমেদ বলেন, ‘বই জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেয়, এই সত্য ভৈরব বন্ধুসভা ধারণ করে। আর তাই তো বই পড়ার আসর পাঠচক্র আমাদের মূল আয়োজনের একটি।’

পাঠের আলোচনায় আরও যুক্ত হন সহসভাপতি শরীফুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান, কার্যনির্বাহী সদস্য রিফাত হোসেন, সাবেক পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক জান্নাতুল মিশু, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আনাস খান, প্রচার সম্পাদক রাসেল রাজ, দপ্তর সম্পাদক জিহাদ, বন্ধু অপু, মাহফুজ, তন্নিমা ও জুঁই।

পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, ভৈরব বন্ধুসভা