মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে লেখা সৈয়দ শামসুল হকের উপন্যাস ‘নিষিদ্ধ লোবান’। ১৯৭১ সালের যুদ্ধে জ্বলছে দেশ, ঢাকা ছেড়ে গ্রামে আসতে বাধ্য হয় বিলকিস। স্বামী আলতাফ জীবিত না মৃত, তা সে জানে না। পরিবারের বাকি সদস্যদের সন্ধানে জলেশ্বরীর দিকে পা বাড়ায়। নবগ্রামের পথে অচেনা তরুণ সিরাজের সঙ্গে পরিচয়। সিরাজের মানা করা সত্ত্বেও বিলকিস পরিবারের খোঁজে যেতে চায়। অগত্যা সিরাজ তার সঙ্গী হয়।
জলেশ্বরীতে পা রেখে যেন মনে হয় মৃত্যুপুরী। কেউ কোথাও নেই। পরিবারের সদস্যদের হন্যে হয়ে খোঁজে বিলকিস। জানতে পারে, তারা পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ থেকে বাঁচতে নদীর ওপারে পাড়ি দিয়েছে। ব্রিটিশ আমলের মুসলিম লীগের স্থানীয় নেতা আলেফ মোক্তারের কাছ থেকে জানতে পারে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। গ্রামের বাজারে পড়ে আছে অনেক লাশ! লাশের কবর দেওয়া নিষেধ পাকিস্তানি বাহিনীর নির্দেশে, যেন লাশ ছিড়ে খায় শিয়াল-শকুনে। আপনজনদের মৃতদেহের এমন অশ্রদ্ধা বিলকিস মেনে নিতে পারে না। তারা সিদ্ধান্ত নেয়, সব লাশের কবর দেবে দুজনে।
উপন্যাসে বিলকিস-সিরাজের মধ্যে দেখা গেছে ভাইবোনের এক অটুট সম্পর্ক, যারা পাকিস্তানিদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ হিসেবে গ্রামবাসীদের লাশ কবর দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করে। বইয়ে লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন তৎকালীন বাঙালিরা প্রত্যক্ষ–পরোক্ষভাবে যুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও বিলকিস-সিরাজ পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে পাকিস্তানি বাহিনীর আদেশ অমান্য করে লাশ করব দেওয়ার মাধ্যমে।
সৈয়দ শামসুল হকের উপন্যাস ‘নিষিদ্ধ লোবান’ নিয়ে পাঠচক্রের আসর করেছে সিলেট বন্ধুসভা। প্রথম আলো সিলেট অফিসের বন্ধুসভা কক্ষে এটি অনুষ্ঠিত হয়। বই পর্যালোচনায় বন্ধু শতাব্দী দত্ত বলেন, ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে উপজীব্য করে বাংলা সাহিত্যে রচিত উপন্যাসগুলোর মধ্যে লেখক সৈয়দ শামসুল হকের “নিষিদ্ধ লোবান” অন্যতম সেরা।’
পাঠপরিচিতিতে বন্ধু নাহিয়ান হিয়া বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধকে যাঁরা দেখেননি, সাহিত্যের মাধ্যমে যাঁরা একাত্তরের যুদ্ধের চিত্র জানতে চান, তাঁদের জন্য “নিষিদ্ধ লোবান” বইটি নিঃসন্দেহে উপযুক্ত হবে।’
পাঠের আসরে আরও উপস্থিত ছিলেন বন্ধু দেব রায় সৌমেন, ফয়সাল আহমেদ, প্রণব চৌধুরী, সাজন বিশ্বাস, সৌম্য মণ্ডলসহ অন্য বন্ধুরা।
পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, সিলেট বন্ধুসভা