প্রথম আলো কোনো দলের মুখপত্র না হয়ে দেশের মুখপত্র হয়েছে

মুন্সিগঞ্জে প্রথম আলোর ২৬তম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানছবি: বন্ধুসভা

সমাজ পরিবর্তন ও সামাজিক সম্প্রীতি গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে প্রথম আলো। অন্যায় ও অপশক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পত্রিকাটি শুরু থেকেই সাহসী ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করছে। এ জন্য হুমকি-ধমকি, হামলা, মামলা—এমনকি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া বন্ধ করে দেয় ক্ষমতাসীনেরা। এরপরও প্রথম আলো দমে যায়নি।

দীর্ঘ ২৬ বছরের এই পথচলায় প্রথম আলোর প্রতি পাঠকদের ভালোবাসা ও বিশ্বাস বিন্দুমাত্র কমেনি। সত্য তথ্যের জন্য কোটি মানুষের ভরসার জায়গা প্রথম আলো। দিন যত যাচ্ছে প্রথম আলোর প্রতি পাঠকের চাওয়া ও আস্থা আরও বাড়ছে।

১০ নভেম্বর মুন্সিগঞ্জে প্রথম আলোর ২৬তম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন অতিথিরা। দুপুর ১২টার দিকে জেলা প্রেসক্লাবের সাংবাদিক শফিউদ্দিন আহমেদ মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মুন্সিগঞ্জ বন্ধুসভা।

সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। বন্ধুসভা সভাপতি নুরুন্নবী মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল ইসলামের সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রথম আলোর মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি ফয়সাল হোসেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী নোমান আল মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন ছিল সমাজ ও দেশের প্রতিটি স্তরের বৈষম্য দূর করার জন্য। মানুষের বাক্‌স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার জন্য। সামাজিক সম্প্রতি গড়ে তোলার জন্য। আর এ কাজগুলো প্রথম আলো সূচনালগ্ন থেকে করে আসছে। ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানের কঠিন দিনগুলোয় সাহস, সততা ও বস্তুনিষ্ঠতার সঙ্গে সংবাদ পরিবেশনের জন্য প্রথম আলোকে ধন্যবাদ জানাই। ভবিষ্যতেও বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে প্রথম আলো সাহসী ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।’

মুন্সিগঞ্জ সরকারি হরগঙ্গা কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুন্সি সিরাজুল হক বলেন, ‘প্রথম আলো সংবাদে যেমন ব্যতিক্রম, তাদের অন্য সব আয়োজনও ব্যতিক্রম। তাদের অনুষ্ঠানে কোনো ক্ষমতাধর নয়, বরং খুঁজে খুঁজে গুণী ব্যক্তিদের আনা হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময় শুনি এই পত্রিকা বিএনপির মুখপত্র, ওই পত্রিকা আ.লীগের মুখপত্র। কোনো পত্রিকা জামায়াত, জাতীয় পার্টির মুখপত্র। সেখান থেকে প্রথম আলো কোনো দলের মুখপত্র না হয়ে দেশের মুখপত্র হয়েছে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার করতে গিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর রোষানলে পড়েছে। প্রতিটি সংবাদমাধ্যমকে এমন হওয়া উচিত।’

একই কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. ফারুখ মিয়া বলেন, ‘প্রথম আলো তাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিভিন্ন আয়োজন ও নতুন নতুন স্লোগানে সাজিয়ে থাকে। এবার ছাত্র-জনতার আন্দোলন নিয়ে “জেগেছে বাংলাদেশ” স্লোগানে সাজিয়েছে। প্রথম আলো বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার পাশাপাশি জনকল্যাণমূলক কাজ করছে। শিল্প–সাহিত্য, জ্ঞানচর্চায় ভূমিকা রাখছে। একজন সচেতন পাঠক যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ প্রথম আলোতেই খোঁজ করেন। কারণ, প্রথম আলো কখনোই পেশাদারত্বের সঙ্গে আপস করেনি।’

‘বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো, গাছ লাগানো, সামাজিক আন্দোলনসহ বিভিন্ন ভালো কাজ বাস্তবায়িত হচ্ছে প্রথম আলোর বন্ধুসভার মাধ্যমে। প্রথম আলোর জন্য সব সময় শুভকামনা। আগামী দিনের পথচলা সুদীর্ঘ হোক,’ যোগ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সুজন হায়দার, মুন্সিগঞ্জের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী মৌমিতা তাসনিম খান ও শাহরিয়ার আমিন।

আলোচনা পর্ব শেষে ডেঙ্গু ও সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে মানবিক অবদান রাখায় মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক সাইদুর রহমান হিমেলকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ ছাড়া মুন্সিগঞ্জের কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ করা হয়।