‘মুক্তিযুদ্ধ আমাদের আদর্শ। আমরা যেন মুক্তিযুদ্ধকে না ভুলি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই, অধিকার আদায়ের লড়াই, আমাদের সম্মানের লড়াই। কিন্তু যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছিলাম, তা আজও বিদ্যমান রয়েছে। এসব বৈষম্য দেখে শরীরের রক্ত ফুটে ওঠে। কিন্তু প্রতিবাদ বা লড়াই করার সামর্থ্য বয়সের কাছে হার মেনেছে। এসব বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের দাঁড়াতে হবে। প্রতিবাদ জানাতে হবে। বৈষম্য দূর করে নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করতে হবে। রেখে যেতে হবে আগামীর প্রজন্মের জন্য বৈষম্যহীন একটি সমাজব্যবস্থা।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনি’ অনুষ্ঠানে বন্ধুদের উদ্দেশে এ কথা বলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার হরিপুর মহল্লার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিরুল ইসলাম (৬৯)। নিজ বক্তব্যে তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন নানা স্মৃতির ঝাঁপি তুলে ধরেন। বর্ণনা করেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকারদের অত্যাচার-নির্যাতনের ঘটনা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার বিভিন্ন ঘটনাও তুলে ধরেন তিনি। যা শুনে উপস্থিত বন্ধুদের কারও চোখ সিক্ত হয়ে যায়। ঘটনাগুলো সবার মনে গভীর দাগ কাটে।
৩১ অক্টোবর জেলা শহরের জেলা স্কাউটস ভবনে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভা। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত চলে অনুষ্ঠান। এতে বন্ধুসভার বন্ধুরা ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন।
প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বন্ধু ফারাহ্ উলফাৎ বলেন, ‘স্বাধীনতাসংগ্রামের ইতিহাস আমরা বইয়ে পড়েছি। আজ প্রথমবারের মতো সরাসরি কোনো মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে শুনলাম। ঘটনাগুলো শুনে গায়ে কাটা দিয়েছে। সরাসরি শুনে খুব ভালো লাগল। আমরা তা মনে রাখার চেষ্টা করব।’
বন্ধু এ এইচ এম মাহিমুল আজম বলেন, ‘আমরা বইয়ে পড়েছি মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে। আজ সরাসরি একজন মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের বর্ণনা শুনলাম। মুক্তিসংগ্রামের চেতনাকে আমরা লালন করি। আগামীতেও তা থাকবে আমাদের হৃদয়ে।’
পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক আনিফ রুবেদ বলেন, ‘আমার বড় চাচা ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাঁকে পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে ধরিয়ে দিয়েছিল আমাদেরই এলাকার রাজাকাররা। পরিবারের সদস্যরা অনেক দিন রাজাকারের মাধ্যমে পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে ঘুরলেও তাঁর লাশ ফেরত পায়নি। দেশকে স্বাধীন করতে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, যাঁরা যুদ্ধ করেছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে। কৃতজ্ঞ থাকতে হবে।’
সভাপতি আরাফাত মিলেনিয়াম বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের চেতনা। এ চেতনাকে আমাদের বুকে লালন করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ না হলে আমরা স্বাধীনতার স্বাদ পেতাম না। অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ দেশ। এ স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে। সব ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের দাঁড়াতে হবে।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি মো. আসাদুজ্জামান, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আসিফ আহমেদ, জেন্ডার ও সমতাবিষয়ক সম্পাদক আলীউজ্জামান নূর, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সম্পাদক জাহিদ হাসান, বন্ধু ফাতিমা খাতুন, ফাবিহা ফারজানা, হাবিবা বিনতে সিফা, আল মাহমুদ, নাফিউল হাসান, মঈন আহমেদ, সাকিব ইসলাম, সোহান আলী, জুবায়ের আহমেদ, আহমেদ ওয়ালিদ, রকিবুল ইসলাম, মেরাজুল ইসলাম, সারওয়ার জাহানসহ অন্য বন্ধুরা।
জেন্ডার ও সমতাবিষয়ক সম্পাদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভা