‘জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে পরিবেশের প্রতি সচেতন হতে হবে’

নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জীববৈচিত্র্য দিবসের আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন নোয়াখালী বন্ধুসভার সভাপতি আসিফ আহমেদছবি: বন্ধুসভা

পৃথিবী অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণুজীব থেকে শুরু করে বিশাল আকৃতির জড়বস্তুর সমন্বয়ে গঠিত। পৃথিবীর গতিময়তা এবং প্রাণীর জীবনাচরণে পরিলক্ষিত হয় নানা বৈচিত্র্য। নদী নাব্যতা হারিয়ে ফেলছে, বনাঞ্চল ধ্বংস করে মরূকরণ ডেকে আনা, সময়ে-অসময়ে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাতছানি, বন্য প্রাণীর জীবন বিপদাপন্ন; একই সঙ্গে প্রকৃতির জন্য উপকারী বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এর সবকিছুই হলো জীববৈচিত্র্যের অংশ।

তাই প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে ও জলবায়ুর মান অক্ষুণ্ন রেখে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য বিশ্বব্যাপী ২২ মে পালন করা হয় জীববৈচিত্র্য দিবস। এ উপলক্ষে ২৬ মে নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজন করা হয় উপকূলীয় বন বিভাগের আয়োজনে বর্ণাঢ্য র‌্যালি এবং আলোচনা সভা। অংশগ্রহণ করেন নোয়াখালী বন্ধুসভার বন্ধুরাও।

অতিথি ছিলেন নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইসমাইল, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুস সালাম, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু ইউসুফ, সাংবাদিক মো. মনিরুজ্জামান ও নোয়াখালী বন্ধুসভার সভাপতি আসিফ আহমেদ।

তাঁদের আলোচনায় উঠে আসে পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তোলা এবং জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা। মোহাম্মদ আবদুস সালাম বলেন, ‘পৃথিবী দিন দিন ধ্বংসের মুখে ধাবিত হচ্ছে। তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন দুর্যোগ হচ্ছে। এই সুন্দর পৃথিবীকে অবাসযোগ্য করে তোলার পেছনে আমরা সবাই দায়ী। ইকোসিস্টেম সচল রাখতে বাস্তুতন্ত্রের সব খাদ্যশিকলের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তুলতে জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব রয়েছে।’

জীববৈচিত্র্য দিবস উপলক্ষে নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপকূলীয় বন বিভাগের আয়োজনে বর্ণাঢ্য র‌্যালি এবং আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন নোয়াখালী বন্ধুসভার বন্ধুরা
ছবি: বন্ধুসভা

সাংবাদিক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশের জাতীয় পাখি দোয়েল। দিন দিন এই পাখির সংখ্যা কমতে কমতে এখন একেবারে বিলুপ্ত প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে। এখন আর বাস্তবে দোয়েল পাখির দেখা পাওয়া যায় না। জীববৈচিত্র্যের এ ধ্বংসের পেছনে দায়ী আমরা মানুষ।’

নোয়াখালী বন্ধুসভার সভাপতি আসিফ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের চারপাশে কত ছোট ছোট প্রাণের বিস্তার রয়েছে। আমরা যদি এসব প্রাণীর প্রতি দয়াশীল না হই, অহেতুক ভয়-আতঙ্কে থেকে মাকড়সা, তেলাপোকা, টিকটিকি, ব্যাঙ মেরে ফেলি; সে ক্ষেত্রে জীববৈচিত্র্য তো ধ্বংস হবেই। একই সঙ্গে পৃথিবী থেকে এসব প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটতে পারে।’

পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে যেমন প্রয়োজন প্রাণের বিস্তার, ঠিক তেমনি সবুজের সমারোহ ঘটাতে হবে। তবেই সবুজে সবুজ অরণ্যে চারপাশ সুন্দর রূপ ধারণ করবে। এ প্রসঙ্গে নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘আমরা মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত, অর্থাৎ সৃষ্টির সেরা জীব। অথচ আচরণ ব্যবহার দিয়ে আমরা প্রমাণ করে দিই, আমরা কতটা নিকৃষ্ট। অতিরিক্ত লাভের আশায় পশুহত্যা করে পশু চামড়া রপ্তানি করি, নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ ধরি, গাছ কেটে বনভূমি ধ্বংস করি। একটা দেশের ন্যূনতম যতটুকু বন থাকা আবশ্যক, সেটুকুও রক্ষা করতে পারছি না। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে পরিবেশের প্রতি সচেতন হতে হবে। তবেই পৃথিবী আবার সুন্দর হয়ে উঠবে।’

এ বছর জীববৈচিত্র্য দিবসের মূল প্রতিপাদ্য, ‘পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ।’ জীববৈচিত্র্য দিবসে আলোচনার সমাপ্তি ঘোষণা করতে গিয়ে বন কর্মকর্তা আবু ইউসুফ বলেন, ‘জীববৈচিত্র্য বাঁচাতে আমাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ অবস্থান থেকে বৃক্ষরোপণ করতে হবে। গাছের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। সামনেই বৃক্ষরোপণের সবচেয়ে বড় সুযোগ বর্ষা মৌসুম আসতেছে।’

সভায় নোয়াখালী বন্ধুসভার পক্ষ থেকে আরও অংশগ্রহণ করেন সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রহিম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক তাজকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শিমুল, পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক আফরিনা আনিকা, দপ্তর সম্পাদক ধ্রুব ভূঞা, দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক আরাফাত শিহাব, ম্যাগাজিন সম্পাদক নাফিস আহমেদ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক নাহিদা ইতু, কার্যকরী সদস্য নয়ন চন্দ্র কুরিসহ আরও অনেকে।

প্রচার সম্পাদক, নোয়াখালী বন্ধুসভা