‘লেখক বন্ধুদের গল্প শুনে লেখালেখিতে আগ্রহী হচ্ছেন অন্যরা’

অমর একুশে বইমেলা থেকে ‘বন্ধুর বই’ দ্বিতীয় মৌসুমের একটি পর্বছবি: জাকারিয়া জাকি

‘বইমেলাজুড়ে বন্ধুসভা যে আয়োজনটা করছে, এটা এই সময়ের জন্য খুবই জরুরি ছিল। বিশেষ করে লেখকদের বইয়ের কথা পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে এ আয়োজন ভূমিকা রাখছে।’

লেখালেখি ও লেখক বন্ধুদের উৎসাহিত করতে বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের উদ্যোগে অমর একুশে বইমেলা থেকে ‘বন্ধুর বই’ অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় মৌসুমে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন কবি আলতাফ শাহনেওয়াজ। গত বছরের সফলতার ধারাবাহিকতায় এ বছর বন্ধুর বইয়ের দ্বিতীয় মৌসুম অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশে বইমেলা-২০২৫ থেকে সরাসরি। সহযোগী হিসেবে ছিল বিশ্বখ্যাত মোবাইল ব্র্যান্ড HONOR

প্রথম আলো বন্ধুসভার বন্ধুরা প্রতিনিয়ত নানা মাধ্যমে লেখালেখি করেন। অনেকেই প্রতিবছর একাধিক বই প্রকাশ করেন। বইমেলায়ও প্রকাশিত হয় অনেকের বই। এ বছরও অমর একুশে বইমেলায় সারা দেশের অনেক বন্ধুর বই প্রকাশিত হয়েছে। এবারের বইমেলায় যেসব বন্ধুর নতুন বই কিংবা পুরোনো বইয়ের নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে, তাঁদের বই সম্পর্কে আলোচনা ও প্রচারণার লক্ষ্যে বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ বইমেলা থেকে সরাসরি ‘বন্ধুর বই’ নামে লাইভ অনুষ্ঠান আয়োজন করে। বন্ধুসভার ফেসবুক পেজ থেকে মেলা চলাকালে প্রতিদিন বিকেল চারটায় এক বা একাধিক লেখক বন্ধুকে নিয়ে এই লাইভ প্রচারিত হয়। পাশাপাশি বন্ধুসভার ওয়েবসাইটে মাসব্যাপী প্রতিটি বইয়ের পর্যালোচনা ও সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।

বন্ধুর বইয়ের একটি পর্বে যুক্ত হয়ে লেখক ও গবেষক আশফাকুজ্জামান বলেন, ‘সারা দেশব্যাপী বন্ধুসভার এত এত বন্ধু, তাঁরা দেখছে যে বন্ধুরা যখন বই লেখে, আরেক বন্ধুরা তাঁদের বই নিয়ে কথা বলে; তখন কিন্তু সেই বন্ধুটা নিশ্চয়ই মনে করে, যদি আমিও বই লিখি, আমিও লেখক হিসেবে পরিচিতি পাব, আমাকেও মানুষ জানবে। এটা একটা বড় পাওয়া।’

বন্ধুর বইয়ের দ্বিতীয় মৌসুম
ছবি: বন্ধুসভা

১ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে এ আয়োজন। বন্ধুর বইয়ে মোট ২৮টি পর্ব প্রচারিত হয়েছে। এতে অংশ নিয়েছেন ২৯ লেখক বন্ধু এবং সঞ্চালনা করেছেন ১৭ বন্ধু। প্রতিটি পর্বই ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা ও দেশব্যাপী সাড়া ফেলেছে। লেখক বন্ধু হিসেবে অংশ নিয়েছেন মাসউদ ইমরান, আলতাফ শাহনেওয়াজ, আশফাকুজ্জামান, সাইদুল হাসান, মাহমুদা মুহসিনা বুশরা, জাকির হোসেন, সাইফুল্লাহ সাদেক, আফনান আহমেদ রাশেদ, আতিকুর রহমান, নাঈম আহমেদ, হুসাইন মুহাম্মাদ রাসেল, মোহাম্মদ ত্বোয়া-হা, এম এম উজ্জ্বল, রোকেয়া আশা, হাসিন ইসরাক, শুভ্রনীল হৃদু, শান্তা আক্তার, জাকারিয়া কামাল, শরিফ খান, ইমরান আকন্দ, শামসুজ্জামান সোহাগ, বিশ্বজিৎ দাস, ফাহিমা সুমাইয়া, বোরহান আহমেদ, কাইস বিন আহমদ, নাদিয়া নিতুল ইসলাম, রমজান মাহমুদ, রশীদ এনাম ও কামরান চৌধুরী।

সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন ফরহাদ হোসেন মল্লিক, হাসান মাহমুদ সম্রাট, সাইমুম মৌসুমী বৃষ্টি, অনিক সরকার, নাঈমা সুলতানা, হামিদা জান্নাত, মেঘা খেতান, তৌহিদুল ইসলাম, ওয়াসিমা তাসনিম, আশফাকুর রহমান, গিয়াসউদ্দিন মুন্না, সাবিরা সুলতানা, কাভি সিকান্দার, সুমাইয়া জামান, মিরাজ আলম, আদিবা মাটি ও আনোয়ার হোসেন।

নন্দিত এই আয়োজনের বিষয়ে জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জাফর সাদিক বলেন, ‘গত বছর হঠাৎ করেই আমরা বন্ধুর বই কার্যক্রমটা শুরু করি। মূলত সারা দেশে আমাদের যেসব বন্ধুরা লেখালেখি করেন, বইমেলায় বই বের হয়; আমাদের মনে হলো এই লেখকদের একসঙ্গে করে, তাঁদের কাছ থেকে লেখালেখির বিষয়ে গল্প শোনা এবং এর মাধ্যমে অন্য বন্ধুদের লেখালেখির প্রতি আগ্রহী করে তোলা যায়। এ বছর দ্বিতীয় মৌসুমে সেটারই প্রতিফলন দেখা গেল। লেখক বন্ধুদের গল্প শুনে লেখালেখিতে আগ্রহী হচ্ছেন অন্যরা।’

আয়োজনে যুক্ত হওয়া সব লেখক, সঞ্চালক, শুভানুধ্যায়ীসহ কার্যক্রম বাস্তবায়নে যাঁরা অবদান রেখেছেন, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে জাফর সাদিক বলেন, ‘আমরা সফলভাবে বন্ধুর বইয়ের দ্বিতীয় মৌসুমটা শেষ করতে পেরেছি। এটা আমাদের প্রাপ্তি। এ বছর প্রথমবারের মতো এই কার্যক্রমের সঙ্গে স্মার্টফোন ব্র্যান্ড HONOR-কে পেয়েছি। তাদের সহযোগিতা আমাদের কাজ করা আরও সহজ করে দিয়েছে।’

বন্ধুরা শুধু সামাজিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকেন না, পাশাপাশি তাঁরা লেখালেখির চর্চা করেন উল্লেখ করে জাতীয় পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন মল্লিক বলেন, ‘বন্ধুর বই আমরা গত বছর শুরু করেছিলাম। এর মাধ্যমে সারা দেশের যেসব বন্ধু বই লেখেন, তাঁদেরকে সবার সামনে পরিচিত করে দেওয়াটাই লক্ষ্য। প্রথম মৌসুমে যে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি, তারই ধারাবাহিকতায় এবার দ্বিতীয় মৌসুম হলো।’