জয় সে চিত্ত ভেঙেছে যে সংশয়

বিচারকদের সঙ্গে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরা
ছবি: বন্ধুসভা

বিতর্ক এমন এক শিল্প, যা মানুষকে যুক্তিশীল চিন্তা করতে শেখায় এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জাগরণ ঘটায়। দেশে দেশে যখন যুদ্ধবিগ্রহ জনজীবনে অশান্তি বয়ে আনছে, ঠিক তখনই বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিতার্কিকেরা দেখিয়ে দিচ্ছেন, পেশিশক্তির অসুরকে মোকাবিলা করতে পারে বিবেক, বুদ্ধি ও যুক্তি। শান্তিপূর্ণভাবে সর্বজনীন মতৈক্যে পৌঁছাতে শেখায় বিতর্ক। আমরা নিজেদের বিশ্বাস ও চিন্তাধারাকে সত্য বলে মনে করি। এ জন্য মাঝেমধ্যে তর্কে লিপ্ত হই। কিন্তু এই তর্ক থেকেই শুরু হয় রক্তপাত ও দাঙ্গা–হাঙ্গামা। সেখানে বিতর্ক এমন এক শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে আসে, যেখানে প্রত্যেকেই সমান সুযোগপ্রাপ্ত হয়ে নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজের মানসপটে লালিত মূল্যবোধকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারে।

সৃষ্টির নবমন্ত্রে দিনবদলের প্রত্যয় নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা ৯ ডিসেম্বর আয়োজন করে ‘আন্তবিভাগ বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০২২’। সবুজ পাহাড়ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রাচুর্যে ভরপুর ২ হাজার ১০০ একরের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সকাল থেকেই শাটল ট্রেনে চড়ে বিতার্কিকেরা আসতে থাকেন। তাঁদের স্বাগত জানায় চবি বন্ধুসভার বন্ধুরা। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হলেও ক্যাম্পাসে লাগে উৎসবের ছোঁয়া।

পূর্ব নিবন্ধনের ভিত্তিতে প্রতিযোগিতায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি, অর্থনীতি, লোকপ্রশাসন, সমাজতত্ত্ব, বাংলাদেশ স্টাডিজ, ম্যানেজমেন্ট, আইইআর এবং নাট্যকলা বিভাগের বিতর্ক দল অংশ নেয়। এই আট দল থেকে চারটি দল সেমিফাইনালে এবং সেখান থেকে দুটি দল ফাইনাল রাউন্ডে উত্তীর্ণ হয়। নকআউট পদ্ধতিতে বিতর্কের ফরম্যাট ছিল বাংলা সংসদীয় বিতর্ক। চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেয় লোকপ্রশাসন এবং আইইআর বিভাগ। প্রস্তাবনা ছিল, ‘সংসদ বিশ্বাস করে, বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির মধ্যে আবদ্ধ’।

সরকারি দলে অংশ নেন লোকপ্রশাসন বিভাগের তাসমিয়া মোস্তফা, আবদুল্লাহ আল জোবায়ের ও কাশফিয়া তাহসিন। বিরোধী দলে ছিলেন আইইআর বিভাগের নাফিসা সাদাফ, সায়মা বিনতে ইসলাম ও শেখ মাহমুদ হাসান। চ্যাম্পিয়ন হয় আইইআর। সেরা বিতার্কিক নির্বাচিত হন নাফিসা সাদাফ। বিচারক হিসেবে ছিলেন বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক বিতার্কিক উত্তম রায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাইদ আহসান খালিদ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক বিতার্কিক ফাল্গুনী মজুমদার, বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশনের সহসভাপতি সাইফুদ্দীন মুন্না, চিটাগং ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সহসভাপতি অমিত হাসান, মিনহাজুল ইসলাম, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক কায়েস মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ, অ্যাসোসিয়েট মিডিয়া অ্যান্ড অনলাইন অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি মারজুক-ই-ইলাহী এবং চিটাগং ইউনিভার্সিটি স্কুল অব ডিবেটের সভাপতি নাজমুল তুষার।

উত্তম রায় বলেন, ‘যখন একজন বিতার্কিকের আত্মবিশ্বাস হবে যে গ্যালারিতে ২০০ মানুষ থাকলেও সবাই তাঁর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবেন, তখনই একজন বিতার্কিকের বিতর্ক–সাধনা সফল হবে।’ সব শেষে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক, চবি বন্ধুসভা