মুক্তির সংগ্রামে মানবিক সত্যের অনুসন্ধান ‘সময়ের প্রয়োজনে’

নোয়াখালী বন্ধুসভার পাঠচক্রের আসরছবি: বন্ধুসভা

‘আমার পুলাডারে মারছস। বউডারে নিয়া গেছস। মাইয়াডারে পাগল করছস। আমার সোনার সংসার পুড়ায়া দিছস। আল্লার গজব পড়ব। আল্লাহর গজব পড়ব...।’ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে জহির রায়হানের লেখা ‘সময়ের প্রয়োজনে’ গল্পে এক বৃদ্ধ পাকিস্তানি বাহিনীর এক সদস্যের মৃতদেহকে কুপিয়ে কুপিয়ে এভাবে আর্তনাদ করছিলেন।

জহির রায়হানের লেখা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্প ‘সময়ের প্রয়োজনে’ নিয়ে পাঠচক্রের আসর করেছে নোয়াখালী বন্ধুসভা। ২৮ নভেম্বর বিকেলে জেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এটি অনুষ্ঠিত হয়। পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক শাহিদা রেশমির সঞ্চালনায় পরিচয়পর্ব শেষে বন্ধুরা আলোচনা করেন গল্প নিয়ে।

দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক সাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘গল্পটি মুক্তিযুদ্ধকালীন একজন মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিকের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা। গল্পটিতে ছোট ছোট অংশে যুদ্ধের সময়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা লেখক সাবলীল ভাষায় তুলে ধরেছেন।’

সাংগঠনিক সম্পাদক সানি তামজীদ বলেন, ‘এটি শুধু মুক্তিযুদ্ধের সময়েরই গল্প নয়, বরং রচনাটি সর্বকালের মুক্তি ও সংগ্রামের এক চিরন্তন প্রতিচ্ছবি ধারণ করে। গল্পে লেখক যুদ্ধে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে একটি  প্রশ্ন উত্থাপন করেন। যুদ্ধ কেন করা হচ্ছে? তার উত্তরে একেকজন একেক যুক্তি দিচ্ছিলেন। কেউ বলছেন নিজের জন্য, কেউ বলছেন দেশের জন্য, কেউ বলছেন প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে এসেছি।’

স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গল্পটি পড়ে মনে হলো এ যেন চব্বিশের জুলাই আন্দোলন। যেখানে কেউ রাস্তায় নেমেছিল ছাত্র-জনতা নিহত হচ্ছে বলে, কেউ নেমেছিল স্বৈরাচারী সরকারের পতনে, কেউ নেমেছিল নিজের অধিকার আদায়ে।’

দপ্তর সম্পাদক নয়ন চন্দ্র কুরী বলেন, ‘এটি জহির রায়হানের একটি বহুমুখী প্রতিভার উদাহরণমূলক রচনা।’

সহসাংগঠনিক সম্পাদক আরাফাত শিহাব বলেন, ‘গল্পে গল্পকথক একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার বুকপকেটে একটি চিঠি পাওয়ার কথা উল্লেখ করেন। যাতে লেখা ছিল, “মা আমি ভালো আছি, আমার জন্য চিন্তা করো না।” যেই চিঠি শেষ পর্যন্ত মায়ের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। এটি হৃদয় স্পর্শ করা ঘটনা।’

পাঠচক্রে আরও উপস্থিত ছিলেন সভাপতি উম্মে ফারহিন, কার্যকরী সদস্য জুনাইন কাউসার ও বন্ধু শান্ত চন্দ্র দেসহ অন্য বন্ধুরা।

পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, নোয়াখালী বন্ধুসভা