নোবিপ্রবি বন্ধুসভার উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী স্বাধীনতা বইমেলা

বইমেলার উদ্বোধন করেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. আনিসুজ্জামান এবং শিক্ষাবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক বিপ্লব মল্লিকছবি: বন্ধুসভা

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো তিন দিনব্যাপী স্বাধীনতা বইমেলা। এটির আয়োজন করেছে নোবিপ্রবি বন্ধুসভা। ৫ থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত নোবিপ্রবির শান্তিনিকেতনে এই বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়।

৫ মার্চ বেলা ১১টায় বইমেলার উদ্বোধন করেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. আনিসুজ্জামান এবং শিক্ষাবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক বিপ্লব মল্লিক। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী অধ্যাপক নাজমুস সাকিব, ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রভাষক মোজাম্মেল হক ভূঁইয়া, শিক্ষাপ্রশাসন বিভাগের প্রভাষক জাহিদ হাসান, নোবিপ্রবি বন্ধুসভার সভাপতি আবু রায়হান, সাধারণ সম্পাদক নাহিন সুলতানাসহ অন্যান্য বন্ধু ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো তিন দিনব্যাপী স্বাধীনতা বইমেলা
ছবি: বন্ধুসভা

তিন দিনব্যাপী এই বইমেলা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে। প্রিয় লেখক ও পছন্দের বই কিনতে শিক্ষার্থীদের ছিল উপচে পড়া ভিড়। উপকূলের অক্সফোর্ডখ্যাত নোবিপ্রবিতে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত বইমেলায় এসে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। স্বাগত জানিয়েছেন নোবিপ্রবি বন্ধুসভার এমন অভিনব উদ্যোগের।

উদ্বোধনের পর অধ্যাপক বিপ্লব মল্লিক বলেন, ‘নোবিপ্রবি বন্ধুসভাকে ধন্যবাদ জানাই এমন বুদ্ধিবৃত্তিক একটা চর্চা শুরু করার জন্য। আশা করি, আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ার মানসিকতা তৈরি করবে এই বইমেলা।’ প্রক্টর অধ্যাপক মো. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘বই আমাদের জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। যাঁদের ঘরে বই নেই, তাঁরা দরিদ্র। যাঁর ঘরে বই আছে, সে কখনো দরিদ্র নয়। তাই বই নিয়ে এই অভিনব কার্যক্রমকে স্বাগত জানাই।’

সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান নাজমুস সাকিব বলেন, ‘এটা খুব ভালো উদ্যোগ। তোমরা এবার ছোট পরিসরে আয়োজন করেছ, সামনে আরও বড় হবে।’

প্রিয় লেখক ও পছন্দের বই কিনতে শিক্ষার্থীদের ছিল উপচে পড়া ভিড়
ছবি: বন্ধুসভা

মেলার তৃতীয় দিন বই কিনতে এসে ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘যাঁরা এই উদ্যোগটার পেছনে ছিলেন, তাঁদের অনেক ধন্যবাদ জানাই। কারণ, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এটা অনেক দরকার ছিল। আশা করি, এই ধরনের কাজ আরও বেশি হবে এবং সামনে আরও বড় পরিসরে এই বইমেলা হবে। যাঁরা আয়োজক আছেন, তাঁদের প্রতি আহ্বান থাকবে, যেন পরবর্তী সময়ে আরও বড় পরিসরে, নতুনভাবে বইমেলার আয়োজন করতে পারেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতিও অনুরোধ করব, এই বিষয়গুলোকে যেন তারা আরও উৎসাহিত এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা করেন।’

নিজের ক্যাম্পাসে এমন আয়োজনে মুগ্ধ সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। বইমেলায় আসা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন, ‘বইমেলায় এসে আমি অনেক বেশি অনুপ্রাণিত। বই আমাদের প্রকৃত বন্ধু। বইমেলাতে এসে মনে হলো আমাদের ভালো বন্ধুত্বের মতো বইয়ের সঙ্গেও প্রকৃত বন্ধুত্ব হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বইয়ের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক যত নিবিড় ও ঘনিষ্ঠতর হবে, সেই মানুষ তত উন্নত চিত্তের অধিকারী হবে। এত সুন্দর আয়োজনের জন্য বন্ধুসভার বন্ধুদের ধন্যবাদ জানাই।’

বইমেলায় নোয়াখালী বন্ধুসভার বন্ধুরা আসেন
ছবি: বন্ধুসভা

প্রথমবারের মতো বইমেলার আয়োজন করতে পেরে এবং সবার এত সাড়া পেয়ে উচ্ছ্বসিত নোবিপ্রবি বন্ধুসভার বন্ধুরাও। সভাপতি আবু রায়হান বলেন, ‘আমাদের চিন্তাশক্তির বিকাশ, সৃজনশীলতা বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি একজন ভালো মানুষ হতে বই সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই বই পড়ার প্রতি উৎসাহিত করতে আমাদের আয়োজন “স্বাধীনতা বইমেলা”। বছরজুড়েই বিভিন্ন সময়ে বইমেলার আয়োজন হোক, এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে মার্চ মাসে আমাদের এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে।’

প্রথমা প্রকাশনের সহযোগিতায় আয়োজিত এই বইমেলায় ছিল শিশুতোষ বই, কিশোর থ্রিলার, সায়েন্স ফিকশন, রাজনীতি, অর্থনীতি, কবিতা, অনুবাদ, উপন্যাস, গল্পসহ সাহিত্যের প্রায় সব শাখার চার শতাধিক বই। ছিল নোবিপ্রবিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী এবং কর্মরত শিক্ষকদের বইও। বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান, কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক চন্দন আনোয়ারের বই ছিল বইমেলায়। ছিল একই বিভাগের অধ্যাপক, কবি ও প্রাবন্ধিক মাসুদ রহমান এবং সহকারী অধ্যাপক, শিশুসাহিত্যিক নাজিয়া ফেরদৌসের বই।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও নোয়াখালীর মাইজদী শহর থেকেও অনেকে এসেছেন বইমেলায়। মাইজদী থেকে মায়ের সঙ্গে আসা দশম শ্রেণি পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী বলে, ‘আমি থ্রিলার বই অনেক পছন্দ করি। এখানে অনেক থ্রিলার বই দেখে ভালো লাগছে। তিনটি থ্রিলার বই কিনেছি।’ নোয়াখালী বন্ধুসভার সভাপতি আসিফ আহমেদও এসেছিলেন বন্ধুদের নিয়ে। নোবিপ্রবি বন্ধুসভার এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন তাঁরাও।

পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, নোবিপ্রবি বন্ধুসভা