ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের সামনে টিনশেডের একটি ভাড়া বাসায় ২৭ বছর ধরে বসবাস করছেন মফিজ উদ্দিন (৭০) ও জুলেখা খাতুন (৬০) দম্পতি। দুজনই কিডনি রোগী। নিজের ভূমি বলতে কিছু নেই। তাঁদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায়। চার মেয়ে ও এক ছেলে থাকলেও কেউই মা–বাবার খোঁজখবর নেয় না এখন।
বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও জীবিকার তাগিদে কখনো অন্যের বাড়িতে কাজ করে, কখনো দিনমজুরির কাজ করে সংসার চালান তাঁরা। প্রথম আলোর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রথম ধাপে ‘একটি ভালো কাজ’-এর অংশ হিসেবে এই বৃদ্ধ দম্পতিকে একটি দোকান করে দিয়েছে গাজীপুর বন্ধুসভা, যাতে তাঁরা স্থায়ীভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন।
গাজীপুর সদরের পশ্চিম ভূরুলিয়ায় অবস্থিত ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের বিপরীত পাশে ‘বন্ধুসভা পিঠাঘর’ নামের দোকানটি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এখানে বিভিন্ন ধরনের পিঠা ও চা-বিস্কুট পাওয়া যাবে। ২৫ অক্টোবর দোকানটি হস্তান্তর এবং পিঠা-চা কিনে খেয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বন্ধুসভার সদস্যরা।
বন্ধুরা নিজেদের অর্থ ও উপদেষ্টাদের সহযোগিতায় এই মানবিক কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করেন। দোকানের জন্য চাল, ডাল, আটা, গুড়, চিনি, নারকেল, চুলা, কেটলি, কাপ, ছাঁকনি, চা, বিস্কুট, রুটি, বেকারি পণ্যসহ যাবতীয় সব সরঞ্জাম সরবরাহ করে দিয়েছেন তাঁরা।
দোকান পেয়ে বৃদ্ধা জুলেখা খাতুন বলেন, ‘হয়তো কোনো ভালো কাজ করছিলাম বলেই আল্লাহ আপনাগো আমাগোর জন্য পাঠাইছে। আমি আর আমার স্বামী দুইজনই কিডনি রোগী। আমাদের দেখার কেউ নাই। আপনারা এই দোকানটা কইরা দিয়া অনেক উপকার করছেন।’
দোকান হস্তান্তরের সময় উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো গাজীপুর প্রতিনিধি মাসুদ রানা, বন্ধুসভার উপদেষ্টা সাংবাদিক এ কে এম শিশির, রেজাউল করিম, সময় টেলিভিশনের নিজস্ব প্রতিবেদক মেহেদী হাসান ও গাজীপুর মডেল ইনস্টিটিউটের সেকশন অফিসার মিঠু সরকার। তাঁরা বন্ধুসভার এই মানবিক উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
প্রথম আলোর গাজীপুর প্রতিনিধি মাসুদ রানা বলেন, বন্ধুসভার সদস্যরা শুরু থেকেই ভালো কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। এবার একটি দরিদ্র পরিবারকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান করে দেওয়া হয়েছে।
গাজীপুর বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন বলেন, ‘বন্ধুরা টানা তিন দিন ধরে বাজার করা, দোকান সাজানোসহ সব কাজ করেছে। এমন একটি কাজ করতে পেরে মনে শান্তি লাগছে।’
‘একটি ভালো কাজ’ কর্মসূচির দ্বিতীয় ধাপে ২৬ অক্টোবর জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন প্ল্যাটফর্মের ‘মুগ্ধ সুপেয় পানির কর্নার’ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে দিয়েছেন গাজীপুর বন্ধুসভার বন্ধুরা। এই কর্নার থেকে যাত্রী ও পথচারীরা নিয়মিত পানি পান করেন। পাশাপাশি প্ল্যাটফর্মের কিছু অংশ ও পানি পানের সব পাত্রও পরিষ্কার করে দেন। জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টারের অনুমতি নিয়ে এই কাজ করা হয়।
এরপর বন্ধুরা স্টেশনমাস্টারের সঙ্গে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা নিয়ে কথা বলেন। কীভাবে ‘মুগ্ধ সুপেয় পানির কর্নার’ ও পানির পাত্রগুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখা যায়, এ নিয়ে আলোচনা করা হয়। স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে থাকা দোকানদারদের ময়লা–আবর্জনা সঠিক জায়গায় ফেলার ব্যাপারেও পরামর্শ দেন।
সভাপতি বাবুল ইসলাম সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘বন্ধুরা কয়েক দিন থেকে নিজেদের কাজ রেখে বিভিন্নজনের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে এমন একটি মহৎ ও মানবিক কাজ করেছে।’
কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি জহিরুল ইসলাম, সাংগঠনিক আশিকুর রহমান, প্রচার সামিউল ইসলাম, জেন্ডার ও সমতাবিষয়ক সম্পাদক আবিদা সুলতানা, প্রশিক্ষণ সম্পাদক শাহরিয়ার মণ্ডল, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া আলাউদ্দিন ইমু, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মারফুয়া সিয়াম, বন্ধু তানিয়া আক্তার, রাবেয়া আক্তার, নিহাল হোসেন, মো. ইসমাইল, নাজমুল হোসাইন, সাগর আহম্মেদ, তামিম মণ্ডল, শাওন আহম্মেদ, বায়জীদ সরকার, রবিউল ইসলাম প্রমুখ।
বন্ধু, গাজীপুর বন্ধুসভা