বর্তমান সময়ে পরিবেশের অবনতির সঙ্গে সঙ্গে নিরাপদ খাদ্য, সবুজ শহর এবং টেকসই জীবনধারার চাহিদা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। শহরাঞ্চলে যেহেতু জমির অভাব, সেখানে ছাদকৃষি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প হিসেবে উঠে এসেছে। ছাদকৃষি শুধু চাহিদা মেটানোর উপায়ই নয়, এটি শহরের পরিবেশ রক্ষায়ও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে ‘ছাদকৃষির সম্ভাবনা ও তাৎপর্য’ বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা করেছে দিনাজপুর বন্ধুসভা।
২৮ জুন বিকেলে প্রথম আলো দিনাজপুর অফিসে এটি অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন নগরজীবনে পরিবেশবান্ধব চাষাবাদে আগ্রহী নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। আলোচক হিসেবে ছিলেন দিনাজপুরের বিরল উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান ইমাম। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে ছাদকৃষির উপকারিতা, ব্যবস্থাপনা, সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ ও সেগুলোর সমাধান।
মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, ‘ছাদকৃষি শুধু শখ নয়, এটি একটি বিজ্ঞানসম্মত ও লাভজনক কার্যক্রম। একটু পরিকল্পনা ও পরিচর্যা করলে একজন নগরবাসী নিজের ছাদে পুষ্টিকর ও বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করতে পারেন। এটি যেমন স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যের নিশ্চয়তা দেয়, তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে।’ তিনি আরও বলেন, বর্তমানে অনেকেই টব বা ড্রাম ব্যবহার করে ছাদে চাষ করছেন। কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—মাটি ও জৈব সার ব্যবস্থাপনা, সেচপদ্ধতি, ছাদের পানি নিরোধকতা ও রোদ-বাতাসের অনুকূলতা সঠিকভাবে নিশ্চিত করলেই ছাদকৃষি সফলভাবে পরিচালনা করা সম্ভব।
দিনাজপুর বন্ধুসভার সভাপতি শবনম মুস্তারিনের সঞ্চালনায় এর আগে শুভেচ্ছা বক্তব্যে প্রথম আলোর দিনাজপুর প্রতিনিধি রাজিউল ইসলাম বলেন, ‘বন্ধুসভা শুধু সাংস্কৃতিক বা পাঠচক্রভিত্তিক কার্যক্রমেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং সমাজসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাস্তবমুখী কার্যক্রমেও যুক্ত হচ্ছে। এই ছাদকৃষি কর্মশালার মাধ্যমে আমরা চেয়েছি সবাইকে আরও পরিবেশবান্ধব, স্বাস্থ্যসম্মত ও টেকসই জীবনধারার দিকে উৎসাহিত করতে।’
কর্মশালায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী, গৃহিণী, অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবীসহ অনেকে ছাদকৃষি নিয়ে নিজেদের আগ্রহের কথা জানান। দিনাজপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সুইটি রায় বলেন, ‘আগে জানতাম না ছাদে এত কিছু চাষ করা যায়। আজকের কর্মশালা আমাকে প্রেরণা দিয়েছে নিজে কিছু করার। এখন বুঝতে পারছি, পরিকল্পিতভাবে ছাদে টমেটো, লাউ, ধনেপাতা, পেঁয়াজ, এমনকি মসলাজাতীয় ফসলও চাষ করা যায়। এবার নিজেই একটি ছোট ছাদবাগান তৈরি করব।’
গৃহিণী লাজু রহমান বলেন, ‘ছাদকৃষি আমাদের জন্য নতুন একটি দিগন্ত খুলে দিয়েছে। যাঁরা অবসরে আছেন, তাঁদের জন্য এটি মানসিক প্রশান্তির পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর ব্যস্ততা। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। আজকের কর্মশালার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে নিজের পরিবারের খাদ্যচাহিদা নিজ থেকেই মেটানোর চেষ্টা করব।’
কর্মশালার সমাপ্তি ঘোষণা করেন দিনাজপুর বন্ধুসভার উপদেষ্টা শাহজাহান সাজু। তিনি বলেন, ‘আজকের কর্মশালা প্রমাণ করেছে, মানুষের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তনের ইচ্ছা আছে, শুধু দরকার সঠিক দিকনির্দেশনা। বন্ধুসভা সব সময়ই জ্ঞানভিত্তিক, সচেতনতামূলক কার্যক্রমে বিশ্বাসী। আমরা আগামী দিনে ছাদকৃষি নিয়ে ধারাবাহিক কর্মশালার আয়োজন করব, যাতে দিনাজপুরের প্রতিটি ছাদ সবুজে রঙিন হয়ে ওঠে।’
আয়োজন সহযোগী হিসেবে ছিল লুমিনাস গ্রুপ ও নাঈম অ্যাগ্রো। কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে একটি করে গাছের চারা ও জৈব সার বিতরণ করা হয়।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, দিনাজপুর বন্ধুসভা