বন্ধুসভার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে চট্টগ্রামে আনন্দ আয়োজন

চট্টগ্রাম বন্ধুসভার ‘নূতনের আহ্বানে’ অনুষ্ঠানছবি: বন্ধুসভা

বন্ধুত্ব, মানবতা, একতা আর ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ ২৭ বছরের পথচলায় প্রথম আলো বন্ধুসভা আজ শুধু একটি সংগঠন নয়, একটি অনুভূতি, একটি পরিবার। এই যাত্রার উদ্‌যাপনে ভরপুর উচ্ছ্বাস, সৃজনশীলতা এবং সাংস্কৃতিক আবেগে মুখর হয়ে ওঠে চট্টগ্রাম বন্ধুসভার ‘নূতনের আহ্বানে’ অনুষ্ঠান। ১৪ নভেম্বর বিকেলে প্রথম আলো চট্টগ্রাম অফিসের ছাদে এটি অনুষ্ঠিত হয়।

১১ নভেম্বর ২৭ বছরে পদার্পণ করেছে প্রথম আলো বন্ধুসভা। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন চট্টগ্রাম বন্ধুসভার সহসভাপতি রুমিলা বড়ুয়া। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে। এরপর বন্ধুসভার প্রয়াত উপদেষ্টা মিনহাজ হোসাইনকে স্মরণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করা হয়।

চট্টগ্রাম বন্ধুসভার ‘নূতনের আহ্বানে’ অনুষ্ঠান।

সন্ধ্যার আকাশে সূর্য তখন প্রায় অস্তমিত, জ্বলে ওঠে কৃত্রিম আলো। একে একে শুরু হয় বন্ধুদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। শুরুতেই কবিতা পাঠ করেন বন্ধু সাজিয়া আফরিন। তিনি আবৃত্তি করেন পূর্ণেন্দু পত্রীর লেখা ‘সেই গল্পটা’। একে একে গান পরিবেশন করেন দেবমিতা নন্দী, তিথি তালুকদার, দেবশ্রী নন্দী ও জয় চক্রবর্ত্তী। সঞ্চালিকা রুমিলা বড়ুয়াও উপস্থিত বন্ধুদের অনুরোধে একটি গান পরিবেশন করেন। শিল্পীদের গিটারে সঙ্গ দেন বন্ধু মিশেল শর্মা।

দ্বৈত নৃত্য পরিবেশন করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা ও তিথি তালুকদার। তাঁদের নৃত্য খুব উপভোগ্য হয়। এরপর অর্থ সম্পাদক ফয়সাল হাওলাদার কার্ড ও ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে জাদুর ভেলকি দেখান। শেষাংশে কবি মহাদেব সাহার ‘এক কোটি বছর হয় তোমাকে দেখি না’ আবৃত্তি করেন ম্যাগাজিন সম্পাদক কামরান চৌধুরী।

পরিবেশনার ফাঁকে ফাঁকে অনুষ্ঠানের সমন্বয়কারীরা তাঁদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। সমন্বয়কারী ছিলেন নুরুজ্জামান খান, ফয়সাল হাওলাদার, জয় চক্রবর্ত্তী ও সামিয়া সুলতানা।

সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান খান বলেন, ‘বন্ধুসভা হলো আমাদের প্রাণের সংগঠন। এই বন্ধুসভাই আমাদের মধ্যে মানবতা, সম্প্রীতি, শিষ্টাচারের মতো গুণগুলোকে আরও সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করে। বিভিন্ন সংগঠন আছে যারা নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ের ওপর কাজ করে; কিন্তু বন্ধুসভা সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষামূলকসহ বহুমাত্রিক বিভিন্ন কাজ করে থাকে।’

ফয়সাল হাওলাদার বলেন, ‘বন্ধুসভা হলো আমাদের কাছে দ্বিতীয় পরিবারের মতো। যা কিছুই হোক, আমরা যেমন পরিবারকে ছাড়তে পারি না, তেমনি হাজার ব্যস্ততায়ও আমাদের বন্ধুরা ঠিকই সব আয়োজনে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেন।’

বন্ধুদের উদ্দেশে কার্যনির্বাহী সদস্য জয় চক্রবর্ত্তী বলেন, ‘বন্ধুসভা সব সময় অন্যের মতামতে বিশ্বাসী। তাই আমাদের যেকোনো অনুষ্ঠান বিষয়ে আপনাদের ভালো লাগা বা কোন কোন বিষয় সংশোধন করলে অনুষ্ঠানের সৌন্দর্য আরও বাড়বে—এমন সব বিষয় আমাদের জানাবেন।’

চট্টগ্রাম বন্ধুসভার ‘নূতনের আহ্বানে’ অনুষ্ঠান।

কার্যনির্বাহী সদস্য সামিয়া সুলতানা বলেন, ‘বন্ধুসভার জন্য যেকোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করতে আমার বরাবরই ভালো লাগে। সবাই মিলে কাজ করা হলো বন্ধুসভার নীতি। কাজগুলো তখন সহজে হয়ে যায়।’

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বের শুরুতেই অনেকগুলো চিরকুট থেকে প্রত্যেক বন্ধুকে একটি করে চিরকুট বেছে নিতে বলা হয়। এর মধ্যে নির্দিষ্ট ৬টি চিরকুটে আলাদা করে লেখা ছিল ‘শুভ’, ‘জন্মদিন’, ‘প্রথম আলো’, ‘বন্ধুসভা’, ‘চট্টগ্রাম’, ‘২৭’। যেই ছয়জন বন্ধুর কাছে এই বিশেষ ৬টি চিরকুট ছিল, তাঁদের ডাকা হয় মঞ্চে। তাঁদের তখন নতুন ৬টি চিরকুট থেকে একটি করে বেছে নিতে বলা হয়। সেই চিরকুটে লেখা ছিল ‘নাচ’, ‘গান’ ও ‘কবিতা’। যার চিরকুটে যা লেখা ছিল সেই বন্ধুকে তাৎক্ষণিক তা পরিবেশন করে দেখাতে হয় মঞ্চে। ফলে কেউ প্রথমবারের মতো মঞ্চে নেচেছেন, কেউবা গেয়েছেন গলা খুলে। এর মধ্যে তিনজন বন্ধুকে পুরস্কার দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন দেবমিতা, নুসরাত ও মারুফ।

শেষ পর্বে আসে কেক কাটার পালা। বন্ধু সামিয়া সুলতানা নিজের হাতে বানিয়ে এনেছিলেন কেক।

কার্যনির্বাহী সদস্য, চট্টগ্রাম বন্ধুসভা