বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে চট্টগ্রাম বন্ধুসভার ‘স্মৃতিচারণে বধ্যভূমি’

বধ্যভূমিতে প্রদর্শিত হওয়া যুদ্ধ চলাকালীন খণ্ডচিত্র, চিঠি ঘুরে ঘুরে দেখছেন বন্ধুরাছবি: বন্ধুসভা

যাঁরা আলোর পথ দেখাতেন, তাঁদের নিভিয়ে দিয়েছিল ঘাতকেরা! কিন্তু আলো কখনো নেভে না! ছড়িয়ে পড়ে সবখানে, আর সে আলোয় আলোকিত আমাদের বাংলাদেশ!

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর গভীর রাতে ঘাতকদের হাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছিলেন এই দেশের ভবিষ্যতের আলোকবর্তিকারা। শুধু ১৪ ডিসেম্বরই নয়, ’৭১-এর ২৫ মার্চ থেকে শুরু করে যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত ঘাতকেরা নির্মমভাবে হত্যা করে দেশের আলোকবর্তিকাদের, বিভিন্ন স্থানে গণকবর দেয়; যা পরে বধ্যভূমি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

এই আলোকবর্তিকাদের স্মরণ করে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বন্ধুসভা ১৪ ডিসেম্বর বিকেলে নগরীর পাহাড়তলী বধ্যভূমিতে আয়োজন করে ‘স্মৃতিচারণে বধ্যভূমি’। ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ শপথে বলীয়ান হয়ে পাহাড়তলী বধ্যভূমিতে বন্ধুসভার বন্ধুরা শ্রদ্ধায় অবনতচিত্তে স্মরণ করেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। বিকেল চারটায় পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন বন্ধুরা। এরপর শহীদদের স্মরণে পালন করা হয় নীরবতা।

ঘাতকদের হানা থেকে বাঁচতে পারেনি চট্টগ্রাম। যুদ্ধ-পরবর্তী চট্টগ্রামেও বিভিন্ন স্থানে গণকবর পাওয়া যায়। যা প্রমাণ করে কী পরিমাণ নির্যাতন হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে ঘাতকেরা। এত বাজে পরিমাণে হত্যাযজ্ঞ তারা চালিয়েছে যে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা এখনো প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক কামরান চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরীর ৬১ বধ্যভূমির ৫৮টিতেই নেই কোনো স্মৃতিচিহ্ন। যদিও প্রশাসন এটি নিয়ে কাজ করছে, বেশ কিছু স্থানে স্মৃতিচিহ্ন দৃশ্যমানের পথে। আমাদের উচিত এই স্মৃতিচিহ্নগুলো সংরক্ষণ করে আগলে রেখে তাঁদের আদর্শের আলো সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া।’

বন্ধু চৌধুরী সিয়াম এলাহী বলেন, ‘বুদ্ধিজীবীদের হত্যার মাধ্যমে দেশকে মেধাশূন্য করার যে অপচেষ্টা হয়েছিল, তার ক্ষত আজও বয়ে বেড়াচ্ছে জাতি।’

আয়োজনের সমন্বয়কারী হিসেবে ছিলেন প্রচার সম্পাদক সাকিব জিশান এবং পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক কামরান চৌধুরী। আরও উপস্থিত ছিলেন কার্যনির্বাহী সদস্য জয় চক্রবর্ত্তী, বন্ধু চৌধুরী সিয়াম এলাহী, বইমেলা সম্পাদক শান্ত বড়ুয়া, বন্ধু দীপজয় বড়ুয়া।

সূর্য ডোবার মুহূর্তে পাহাড়তলী বধ্যভূমি থেকে বন্ধুরা বিদায় নিলেও শহীদদের সেই স্মৃতি অম্লান হয়ে রইল আমাদের চেতনায়। আমরা বিশ্বাস করি, যত দিন এই লাল-সবুজ পতাকা উড়বে, তত দিন প্রতিটি বধ্যভূমি হয়ে থাকবে প্রেরণার বাতিঘর। বিনম্র শ্রদ্ধা সব শহীদ বুদ্ধিজীবীর প্রতি।

প্রচার সম্পাদক, চট্টগ্রাম বন্ধুসভা