রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছেলেবেলা’ তাঁর আত্মজীবনীর প্রথম খণ্ড। যেখানে তিনি নিজের শৈশব থেকে কৈশোরের প্রারম্ভকাল পর্যন্ত নানা স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা অকপটে বর্ণনা করেছেন। এটি কোনো কঠোর কালানুক্রমিক ইতিহাস নয়, বরং স্মৃতির খাতায় আঁকা কিছু উজ্জ্বল ও জীবন্ত ছবি, যা তাঁর মনের খেয়ালে একে একে ফুটে উঠেছে।
৮ আগস্ট রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছেলেবেলা’ নিয়ে পাঠচক্রের আসর করে সিলেট বন্ধুসভা। প্রথম আলো সিলেট অফিসের বন্ধুসভাকক্ষে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
পাঠচক্রে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর সোশ্যাল মিডিয়া মডারেটর পৃথা পারমিতা নাগ। তিনি বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ শৈশব থেকেই স্বাধীনচেতা ছিলেন। সেই স্বাধীনতার কারণেই তাঁর ছেলেবেলা ছিল এতটা অনন্য ও সুন্দর।’
বইটির প্রকাশকাল, মূল বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেন বন্ধু ফয়সাল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘“ছেলেবেলা” শুধু রবীন্দ্রনাথের শৈশবের গল্প নয়, এটি আমাদের শৈশবের গল্প মনে করিয়ে দেয়। বইটি পড়ে মনে হয়েছে, সময় বদলালেও শৈশবের আনন্দ, কৌতূহল আর স্বপ্ন চিরকাল একই রকম থাকে। রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা অনেক প্রাণবন্ত ছিল বলেই হয়তো আমরা তাঁর কাছে থেকে এত ভালো লেখা উপহার পেয়েছি।’
বইয়ের শুরুতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরবাড়ির পরিবেশ, বিস্তৃত আঙিনা, গৃহশিক্ষক ও আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্কের নানা দিক তুলে ধরেন। তিনি ছিলেন জমিদার পরিবারের সন্তান, কিন্তু শৈশবের দিনগুলো তাঁর একেবারেই বিলাসী ছিল না। বরং অনেক সময় তিনি নিজেকে সীমাবদ্ধ ও একঘেয়ে পরিবেশে আবদ্ধ মনে করতেন। বিদ্যালয়জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়েও তিনি খোলাখুলি বলেছেন, যেখানে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার কাঠিন্য তাঁর কল্পনাশক্তিকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।
‘ছেলেবেলা’তে শৈশবের দুষ্টুমি, অলস দুপুরে ছাদের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতি গভীর টান, এমনকি শৈশবের নিঃসঙ্গতা—সবকিছুর বর্ণনা মেলে। কোথাও রয়েছে হাস্যরস, কোথাও ভাবুকতা, আবার কোথাও কৌতূহলী শিশুমনের প্রশ্ন। এই বই কেবল রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণা নয়, এটি উনিশ শতকের কলকাতার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটেরও মূল্যবান দলিল।
পড়তে পড়তে মনে হয় যেন পাঠকও তাঁর সঙ্গে ঠাকুরবাড়ির সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠছেন, বাগানে হাঁটছেন বা নদীর ধারে বসে বাতাস উপভোগ করছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শৈশবের স্বাধীনচেতা মন ও সীমাবদ্ধতার মধ্যে লুকিয়ে থাকা অসীম কল্পনার জগৎ পাঠককে একদিকে নস্টালজিক করে তোলে, অন্যদিকে অনুপ্রেরণাও জোগায়।
‘ছেলেবেলা’ তাই শুধু একটি আত্মজীবনী নয়; এটি সময়, মানুষ, সমাজ ও শৈশবের মিলিত প্রতিচ্ছবি, যা সাহিত্যের সৌন্দর্যে চিরকাল প্রাসঙ্গিক থেকে যাবে।
পাঠচক্রে আরও উপস্থিত ছিলেন বন্ধু দেব রায় সৌমেন, সমীর বৈষ্ণব, সমরজিৎ হালদার, সূবর্ণা দেব, ফারিহা হক, শতাব্দী দত্ত, প্রত্যাশা তালুকদার, প্রীতম তালুকদার, মাহবুব ফেরদৌস, অম্লান রায়, অমিত দেবনাথ, সৌম্য মণ্ডল, দূরন্ত, আদনানসহ অন্যান্য বন্ধুরা।