‘ভাষা মানুষের পরিচয়ের অন্যতম উপাদান। এটি কেবল ভাব বিনিময়ের মাধ্যমই নয়, এটি জাতির ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক। মাতৃভাষা হলো একটি জাতির আত্মপরিচয়ের প্রতীক, যা সমাজ সংস্কৃতির গভীর ভিত্তি গঠন করে। ভাষার গুরুত্ব উপলব্ধি করে ১৯৫২ সালে বাংলার মানুষ অধিকার আদায়ে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। সেই আন্দোলনের স্মরণেই ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, যা ভাষাগত ঐক্য সংস্কৃতির বৈচিত্র্যর প্রতীক হিসেবে পালিত হয় সারা পৃথিবীতে। এই দিন মর্যাদা রক্ষা ও সংস্কারের জন্য অনুপ্রেরণা জোগায়।’
খুলনা বন্ধুসভার উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মর্তুজা আহমেদ। গত ২২ ফেব্রুয়ারি অনলাইনে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শেখ আল এহসান বলেন, ‘বাংলা ভাষা এমন একটি ভাষা, যে ভাষার জন্য মানুষ প্রাণ দিয়েছে। অকাতরে যুদ্ধে যাওয়ার মতো করে জীবন বিলিয়ে দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আদালতে বাংলা ভাষায় রায় দিতে হবে। যেন বাংলা ভাষার ব্যবহার, চর্চা, গবেষণা বেশি বেশি ছড়িয়ে পড়ে।’
মহাদেব সাহার ‘একুশের গান’ কবিতার লাইন উদ্ধৃত করে খুলনা পাবলিক কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তাকদীরুল গনি বলেন, ‘একুশ মানেই মুক্তিযুদ্ধ ফিরে আসছে। সেই সাহসেই বুক পেতে দেওয়া তারুণ্যে ফিরে আসছে। তারুণ্যের চোখে দুর্জয় শপথ ফিরে আসছে। এই যে তারুণ্যের কথা, যাদের দুর্জয় শপথ ফিরে আসার কথা। আমরা এই ২৪-শে এসেও তারুণ্যের শপথ খুঁজে পেয়েছি। আমাদের দীর্ঘদিনের চাওয়া যে গণতন্ত্র, মানুষের মৌলিক অধিকার—সেগুলো থেকে বঞ্চিত থেকে থেকে একটি বিস্ফোরণ দেখতে পেলাম; এটিই আমাদের ’৫২-এর স্পিরিট। এটিই আমাদের একুশের চেতনা।’
তাকদীরুল গনি বলেন, ‘আমরা মনে করে থাকি একুশ একটি ভাষা। আসলে একুশ একটি বিস্ফোরণ, একুশ একটি বিপ্লব এবং সেই বিপ্লবের ধারাবাহিকতায় আজ আমরা ফেব্রুয়ারির সেই একুশের কথা বলছি।’
সরকারি আযম খান কমার্স কলেজের অধ্যাপক তারক চাঁদ ঢালি বলেন, ‘কত মায়ের বুক খালি করে আজকের এ বাংলা ভাষাকে পাওয়া। নদী যখন শুকিয়ে যায়, নদী তার বহমানতা চিহ্ন রেখে যায়। মানুষ যখন মরে যায়, তখন তার পদচিহ্ন রেখে যায়। আকাশ যখন ঘুমাতে যায়, তার পদচিহ্ন এঁকে যায় তারায় তারায়। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন যে উজ্জ্বলতা, সেটি এই ভূখণ্ডের মানুষের মননে–মগজে, চিন্তায় এত বেশি প্রমিত হয়ে রয়েছে যে এ অঞ্চলে ন্যায়সংগত যত আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে, তার উৎসদ্বার হয়ে উঠেছে ভাষা আন্দোলন।’
খুলনা সভাপতি কাজী মাসুদুল আলম বলেন, ‘মাতৃভাষা বাংলার আলোচনা বেশি বেশি দরকার।’ সঞ্চালনা করেন খুলনা বন্ধুসভার সহসভাপতি এম এম মাসুম বিল্লাহ। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক জুঁই আক্তার ও বন্ধু রিশিতা।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, খুলনা বন্ধুসভা