জামালপুরের তিরুথা এলাকার বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সী মতি মিয়া। তাঁর পরিবারে স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে, যার মধ্যে মেয়েটি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। কাজ করতে গিয়ে দুইবার পা ভেঙে যাওয়ায় চরম দুরবস্থায় তিনি কাঁধে বাঁশ নিয়ে বিক্রি করে কোনোমতে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
মতি মিয়ার অসহায় অবস্থা দেখে জামালপুর বন্ধুসভার উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর সেলিম ফেসবুকে সাহায্যের আবেদন করে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে কয়েকজন হৃদয়বান মানুষের সহায়তায় দোকানঘরটি অবকাঠামো প্রস্তুত করা হয়। এবার জামালপুর বন্ধুসভার বন্ধুরা দোকানটিকে পূর্ণতা দিলেন।
‘স্বনির্ভরতার পথে এক পদক্ষেপ’ স্লোগানে বন্ধুরা মতি মিয়ার দোকানে প্রয়োজনীয় প্রায় ৯০ শতাংশ সামগ্রী সরবরাহ করে দিয়েছেন। মতি মিয়া যেন নিশ্চিন্তে বেচাকেনা করতে পারেন, সে জন্য তাঁরা দোকানের তাকগুলো হরেক রকম পণ্যে সাজিয়ে দেন। সরবরাহ করা সামগ্রীর মধ্যে ছিল—চিপস, মটরভাজা, চানাচুর, বিস্কুট, গুঁড়া দুধ, চকোলেট, শম পাপরি, ডাল ভাজা, চা পাতা, নিত্যপ্রয়োজনীয় মুদিসামগ্রী যেমন আলু, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মসুর ডাল, লবণ, সয়াবিন তেল, শর্ষের তেল, নুডলস, প্রসাধনসামগ্রী যেমন শ্যাম্পু, টুথপেস্ট, গুঁড়া সাবান, মশার কয়েল ও বেচাকেনার জন্য দাঁড়িপাল্লা, ওজন করার বাটখারা ও জিনিসপত্র রাখার গামলা ইত্যাদি।
‘মতি মিয়ার দোকান’ নামের সাইনবোর্ডটিও বন্ধুসভার পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। প্রথম আলোর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘একটি ভালো কাজ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে জামালপুর বন্ধুসভার পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২৪ অক্টোবর মতি মিয়ার দোকান উদ্বোধন করা হয়।
বন্ধুসভার উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ‘প্রথম আলো সংবাদের পাশাপাশি মানুষের কল্যাণে, সমাজ পরিবর্তনে যে ভূমিকা রাখছে, তা অনন্য। বন্ধুসভার আজকের এই উদ্যোগ শুধু একটি সহায়তা নয়, বরং একটি পরিবারের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার চেষ্টা।’
প্রথম আলোর জামালপুর প্রতিনিধি আবদুল আজিজ বলেন, ‘প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা সারা দেশে বন্ধুসভার পক্ষ থেকে প্রতিবছরই একটি ভালো কাজ করি। সেই কাজের অংশ হিসেবে আজকে আমরা এই চাচার এখানে এসেছি। বন্ধুসভার পক্ষ থেকে আমরা যারা এসেছি, সবাই মিলে নিজেদের ব্যক্তিগত অর্থে চাচাকে কিছু সহযোগিতা দিয়েছি। চাচাকে কীভাবে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আরও সহযোগিতা করা যায়, সেটিও আমরা দেখব।’
মতি মিয়াকে তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করতে বলা হলে তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন এবং বলেন, ‘আমি আপাতত কিছু বলতে পারব না।’ এ সময় পাশে থাকা উপদেষ্টা সিফাত আবদুল্লাহ্ মতি মিয়াকে জানান, এই উপকারের পেছনে মূলত জামালপুর বন্ধুসভার শিক্ষার্থীরা এগিয়ে এসেছে। তিনি মতি মিয়াকে অনুরোধ করেন, এই তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য যেন তিনি মন থেকে দোয়া করেন।
কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন জামালপুর বন্ধুসভার উপদেষ্টা নাজমুল হাসান, মহসীন কাকন, সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক রুবেল হাসান, বইমেলা সম্পাদক আমীর হামজা, সাংস্কৃতিক সম্পাদক রাসেল মিয়া, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি সম্পাদক বিজয় হাসান, পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক সামিতা তাবাসসুম, প্রশিক্ষণ সম্পাদক সাদিয়া সিদ্দিকা, ম্যাগাজিন সম্পাদক প্রত্যাশা পাল, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সম্পাদক ফারজানা আক্তার, কার্যনির্বাহী সদস্য জুবায়ের আহমেদ, বন্ধু মাসুদ, তোফা, আবিদা, বাকী বিল্লাহ, শৈলী, আরিফ, অপ্সরা পালসহ অনেকে।
উপদেষ্টা, জামালপুর বন্ধুসভা