জন্মের ঠিক দুই মাস আগে মারা যান শিশু জিসানের (৫) রিকশাচালক বাবা মো. রানা। সংসার চালানোর উপায় না পেয়ে ছোট্ট শিশুকে নিয়ে মা সোনিয়া আক্তার চলে আসেন স্বল্প আয়ের মা–বাবার বাড়িতে। শিশুটির বয়স যখন দুই বছর, তখন মা সোনিয়া আক্তার আবারও বিয়ে করে চলে যান নতুন সংসারে। কিন্তু সেই সংসারে ঠাঁই হয়নি জিসানের। মা–বাবার আদর ছাড়াই ছোট্ট শিশুটি এখন বড় হচ্ছে নানা তরিকুল ইসলাম ও নানি লাভলী বেগমের কাছে। অভাবের সংসারে নাতিকে ঈদের নতুন কাপড় কিনে দিতে পারেননি নানা-নানি। ৭ এপ্রিল পঞ্চগড় বন্ধুসভার বন্ধুরা জিসানের হাতে রঙিন জামা ও তার নানির হাতে তুলে দিয়েছেন একটি খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেট।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের ঘটিয়ারপাড়া গ্রামে নানা-নানির সঙ্গে থাকে শিশু জিসান। নতুন জামা পেয়ে জিসানের চোখেমুখে হাসির ঝিলিক। বলল, ‘নানিরঠে (নানির কাছে) টাকা নাই তো। এইতানে (এ জন্য) মোক (আমাকে) জামা কিনে দেয়নি।’
শুধু শিশু জিসানই নয়, এদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রথম আলো বন্ধুসভার পক্ষ থেকে ‘সহমর্মিতার ঈদ’ কর্মসূচি উপলক্ষে পঞ্চগড় সদর ও বোদা উপজেলার কয়েকটি গ্রামে ৪০ শিশু ও তাদের পরিবারের মধ্যে রঙিন জামা ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পঞ্চগড় বন্ধুসভার উপদেষ্টা আতাউর রহমান, প্রথম আলোর পঞ্চগড় প্রতিনিধি রাজিউর রহমান, পঞ্চগড় বন্ধুসভার সভাপতি রায়হান শরীফসহ অন্য বন্ধুরা।
জেলার বোদা উপজেলার ইসলামপুর, পঞ্চগড় সদর উপজেলার ঘাটিয়ারপাড়া, বাগানবাড়ি, মসজিদপাড়া, রৌশনাবাগ, ডুডুমারী, গোফাপাড়া, গড়িনাবাড়িসহ কয়েকটি এলাকায় ঘুরে ঘুরে শিশুদের হাতে এসব জামা ও তাদের পরিবারগুলোকে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। এর আগে বন্ধুরা খুঁজে খুঁজে শিশুদের তালিকা তৈরি করেন।
চার বছর বয়সী নাতি সিয়ামের জন্য নতুন জামা ও খাদ্যসামগ্রী পেয়ে ঘাটিয়ারপাড়া এলাকার শেফালি বেগম বলেন, ‘মোর বেটি সেলিনা আক্তারের আগের স্বামীর লগত ছাড়াছাড়ি যেলা হয়, সেলা নাতিডার বয়স মাত্র দুই বছর। পরে বেটিডাক অন্যঠে বিহায় (বিয়ে) দিছু। কিন্তু নাতিডা মোরঠে রহচে। বেশ কয়েক বছর আগোত মোর স্বামীর লগত মোর ছাড়াছাড়ি হইচে। এ্যালা (এখন) ইট ভাঙার কাজ করে নাতিডাক নিয়ে কুনোমতে চলেছু। এইবার ঈদোত নাতিডাক জামা কিনে দিবা পারুনি। তুমুরা (আপনারা) জামা দিলেন, খাবার দিলেন খুপে উপকার হইল বাপু।’
পঞ্চগড় বন্ধুসভার সভাপতি রায়হান শরীফ বলেন, ‘প্রতিবছর ঈদুল ফিতরে প্রথম আলো বন্ধুসভা সহমর্মিতার ঈদের আয়োজন করে থাকে। এবারও আমরা ৪০ শিশুকে নতুন জামা ও তাদের পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছি। সমাজে যাঁরা বিত্তবান আছেন, তাঁরা যদি এভাবে প্রতিবেশীসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ান, তাহলে ঈদের আনন্দ সবাই ভাগাভাগি করে নেওয়া সম্ভব।’