চবি বন্ধুসভার বার্ষিক সাংগঠনিক ভ্রমণ

মিরসরাইয়ের মহামায়া লেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার বন্ধুরাছবি: বন্ধুসভা

‘পৃথিবী একটি বই। আর যাঁরা ভ্রমণ করেন না, তাঁরা এর মাত্র একটি পৃষ্ঠা পড়েন।’ আলজেরিয়ান দার্শনিক সেন্ট অগাস্টিনের এই উক্তিকে সার্থক বাস্তবায়ন করতে বার্ষিক সাংগঠনিক ভ্রমণ আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা। তবে দিনটি শুধু ভ্রমণে সীমাবদ্ধ না থেকে পরিণত হয় নবীন ও সাবেকদের মিলনমেলায়।

৮ জুন সকাল সাড়ে ছয়টায় অর্ধশত বন্ধুর অংশগ্রহণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বাসযোগে রওনা করেন চবি বন্ধুসভার বন্ধুরা। গন্তব্য মিরসরাইয়ের মহামায়া লেক। ভ্রমণে নবীনদের পাশাপাশি যোগ দেন বন্ধুসভার সেই সব বন্ধু, যাঁরা সংগঠন থেকে বিদায় নিলেও শিকড়ের টানে, প্রাণের টানে এখনো ফিরে আসেন বারবার। সাবেক দুই সহসভাপতি রাজীব বিশ্বাস ও মাইনুল মোর্শেদ এবং সাহিত্য সম্পাদক রুদ্র ফারাবির উপস্থিতি পুরো আয়োজনকে করে তুলে আরও প্রাণবন্ত। সারাটা পথ তাঁরা নাচে-গানে, আড্ডায় মাতিয়ে রাখেন।

কিছুক্ষণের মধ্যে বাস পৌঁছে যায় প্রথম গন্তব্য মহামায়া লেকে। অনন্য সুন্দর এই লেক দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক। চারদিকে জলরাশি আর অদূরে ছোট ছোট পাহাড়। লেকের দুইধারে জনবসতি নেই বললেই চলে, পাহাড়-টিলা দিয়ে ঘেরা। মহামায়া লেককে প্রকৃতি যেন সাজিয়েছে তার নিজ হাতে। কী নেই সেখানে; নীল জলরাশি, ছোট-বড় পাহাড়-টিলা, ঝরনা, বুনো হাতির দল কিংবা বুনো হাঁস—সবকিছুরই দেখা পাওয়া যায়।

মহামায়া লেককে বিদায় জানিয়ে চলে আসি আমাদের পরের গন্তব্য অনিন্দ্যসুন্দর রূপসী ঝরনায়। এটি মিরসরাই উপজেলার সর্বদক্ষিণে বড় দারোগারহাটের উত্তরে পাহাড়ের কোলে অবস্থিত। শহুরে নাগরিক জীবন ও পড়াশোনার ব্যস্ততা ভুলে সবাই যেন প্রকৃতির মধ্যে নিজেকে হারাতে ব্যস্ত। মূল সড়ক থেকে নেমে বেশ কিছুটা পথ হাঁটলে ঝরনার দেখা পাওয়া যাবে। ট্র্যাকিংয়ের সময় সবার মুখে একটাই প্রশ্ন, ‘কোথায় ঝরনা? আর কত দূর?’ আঁকাবাঁকা গ্রামীণ সবুজ শ্যামল মেঠো পথ পার হয়ে পাহাড়ের পাদদেশে গেলেই শোনা যাবে ঝরনার পানি গড়িয়ে পড়ার অপরূপ নূপুরধ্বনি। দুই পাশে সুউচ্চ পাহাড়। শাঁ শাঁ শব্দে উঁচু পাহাড় থেকে অবিরাম শীতল পানি গড়িয়ে যাচ্ছে ছড়া দিয়ে। মেঘের মতো উড়ে আসা শুভ্র এ পানি আলতো করে ছুঁয়ে দেখলেই শীতল পরশ মুহূর্তে ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে। তবে এখন বর্ষার ভরা মৌসুম না হওয়ায় পানি একটু কম।

ঝরনায় স্নান ও হালকা বিশ্রামের পর দুপুরের খাওয়ার পালা। স্থানীয় একটি হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে নিই। ক্লান্তির পর এই খাবার ছিল অমৃতসমান।
বিকেল সাড়ে চারটায় দিনের শেষ গন্তব্য বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকতের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করি। সেখানে পৌঁছে কেউ কেউ চলে যান সমুদ্রে পানি দিয়ে শরীর ভেজাতে, আবার কেউবা সারা দিনের ক্লান্তি দূর করতে সমুদ্রপাড়ে নির্মল বাতাসের সঙ্গে শেষ বিকেলের সূর্যাস্ত উপভোগ করেন।

মিরসরাইয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার বন্ধুরা
ছবি: বন্ধুসভা

সহসভাপতি তন্ময় দত্ত জানান, এবারের সাংগঠনিক ভ্রমণটি চবি বন্ধুসভার হয়ে তাঁর শেষ ভ্রমণ। তাই এর স্মৃতি অনেক দামি। তিনি বলেন, ‘চবি বন্ধুসভার ভ্রমণ প্রতিবারই সুন্দর হয়। এ বছর বাড়তি পাওনা হিসেবে ছিল ভ্রমণে তিনজন সাবেক বন্ধুকে পাশে পাওয়া। তাঁরা ভ্রমণকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছেন। আর যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, সবাই বেশ ভালো কাজ করেছেন। পুরো একটা দিন, সাবেক-বর্তমান সবাইকে সঙ্গে নিয়ে, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খুব আনন্দে কেটেছে। ঝরনা, সাগর, লেক এবং মাঝপথে হাতির দেখা পাওয়া—সব মিলিয়ে ষোলোকলা পূর্ণ হয়েছে।’

সাগরপাড়ে সময় উপভোগ করতে করতে কখন যে সন্ধ্যা হয়ে এল, বুঝতেই পারলাম না। এবার ঘরে ফেরার তাড়া। বাসে ফিরে অনুষ্ঠিত হলো বহুল কাঙ্ক্ষিত র‍্যাফেল ড্র। বিদায় নেওয়ার আগে সাবেক সহসভাপতি রাজীব বিশ্বাসের কণ্ঠে—
‘যত দূরে যাই, জানি না তো কবে
জেনে রেখো শুধু, ফের দেখা হবে
যত দূরে যাই, জানি না তো কবে
জেনে রেখো শুধু, ফের দেখা হবে’

গানটি সবাইকে আবেগঘন করে দেয়। ভ্রমণ সার্থক করার পেছনে যাঁদের অবদান সবচেয়ে বেশি ছিল তাঁরা হলেন আহ্বায়ক আফিয়া আনজুম, সহ-আহ্বায়ক সাজিদ আনোয়ার, তাহসান বিন আজিজুল ও সদস্যসচিব আবদুল হালিম। সার্বিক সহযোগিতা করেন সাধারণ সম্পাদক নুসরাত পাইরিন, সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আকরাম ও সহসভাপতি হাফিজুল ইসলাম।

কার্যকরী সদস্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা