চিত্রাঙ্কন ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা

চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাছবি: বন্ধুসভা

প্রকৃতি আর শিল্পচেতনা—এই দুই বিষয় একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে। ধর্ম-বর্ণ-বয়সনির্বিশেষে প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে শিল্পচেতনা সুপ্ত থাকে। এটিকে প্রকাশ করতে এবং সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে আমাদের নানা আয়োজন। তাই ভাষার এই মাসে সবার প্রতিভা এবং চেতনা উজ্জীবিত করতে জামালপুর বন্ধুসভার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। অংশগ্রহণ করে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা।

আয়োজনে আরও ছিল অনলাইন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা; যেখানে পুরো বাংলাদেশ থেকে লেখা পাঠান অনেকে। এসব লেখার মধ্যে ছিল ছোটগল্প, রচনা, কবিতা ও চিত্রাঙ্কন। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা সম্পন্ন হয় ১৩ ফেব্রুয়ারি, জামালপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অডিটরিয়ামে। বিষয় ছিল ভাষা আন্দোলন। ভাষাশহীদদের স্মরণে শিক্ষার্থীরা নানা রকম দৃশ্যপট অঙ্কন করে। তাতে ফুটে উঠেছে ১৯৫২ সালের সেই মিছিল, যেখানে শহীদ হয়েছিল সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অনেকে।

বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ
ছবি: বন্ধুসভা

প্রথমবারের মতো অনলাইন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অনেক সাড়া পাওয়া যায় দেশের অন্যান্য জেলা থেকেও। দূরদূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা রচনা, কবিতা, চিত্রাঙ্কন পাঠাতে শুরু করে। লেখা পাঠানোর সময়সীমা ছিল ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

সর্বশেষ ২১ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টায় জামালপুরের সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজে এই প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হয়। উপস্থিত ছিলেন সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. হারুন-অর-রশিদ, উপাধ্যক্ষ খেলনা রানী দেব, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবদুল হাই আল হাদী, ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ মনোয়ার, শিক্ষক সংসদের সম্পাদক শাকের আহমেদ চৌধুরী, রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. রাশেদুল ইসলাম এবং জামালপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী শিক্ষক হিশাম আল মহান্নাভ স্যারগন।

চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় দুই ক্যাটাগরিতে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়সহ মোট ৬টি পুরস্কার দেওয়া হয়। এ ছাড়া ৩টি পুরস্কার দেওয়া হয় অনলাইনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে। নবম-দশম শ্রেণি ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছে দিবা আফরোজ, দ্বিতীয় হয়েছে মেহেজাবিন, তৃতীয় হয়েছে শাহনুন জাহান। ষষ্ঠ-সপ্তম-অষ্টম শ্রেণি ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছে নুসরাত জাহান, দ্বিতীয় হয়েছে তাসফিয়া আনিশা ও তৃতীয় হয়েছে সামিহা জায়দী। অনলাইন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রথম হয়েছে ফাহরিয়া জান্নাত, দ্বিতীয় হয়েছে নাসিম আলী এবং যৌথভাবে তৃতীয় হয়েছে রাইসা রুবাইয়েত ও মোছা. লামিয়া। তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. হারুন-অর-রশিদ।

চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা
ছবি: বন্ধুসভা

অধ্যক্ষ হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘এ রকম লেখালিখি আমাদের স্বাধীনতার পক্ষে, ভাষার পক্ষে এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যত দিন যাবে, শাণিত হবে। লেখালেখির দ্বারা দেশ সমৃদ্ধ হবে এবং তোমাদের লেখার অভ্যাস ও সাহিত্যচর্চা অব্যাহত রাখবে।’ সঞ্চালনায় ছিলেন জামালপুর বন্ধুসভার সভাপতি ডা. জাকারিয়া জাকি।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক কামরুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক স্নিগ্ধা, সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল হাসান, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক নাহিদুল ইসলাম, বইমেলা সম্পাদক কাকন মিয়া, ম্যাগাজিন সম্পাদক সোমাইয়া সুলতানা, কার্যনির্বাহী সদস্য নাইমা সুলতানা, জিনেদিন জিদান, বন্ধু অন্তরা চৌধুরী, রাসেল মিয়া, ফাহিম আহমেদ, মুস্তাকিম বিল্লাহ, সাজ্জাদ হোসেন, শাকিল আহমেদ, রুবেল হাসান প্রমুখ।

বেলা শেষে প্রকৃতির ধূসর আভায় চারদিক যখন শ্রান্ত হয়ে আসে, ফাগুনের রূপ আর রং জানান দেয় আমি এখনো রয়েছি। কোমল এই শিক্ষার্থীদের তুলির আঁচড়ে রাঙা হয়েছিল শেষের সময়গুলো। তাদের অর্জন, উপহার আর কিছু ভালো লাগার মুহূর্ত মিলেমিশে একাকার হয়ে বন্দী রয় ক্যামেরার ফ্রেমে। আমরা আমাদের ভালো লাগাটুকু নিয়ে ফিরে আসি নিজ নিজ গন্তব্যে।

সভাপতি, জামালপুর বন্ধুসভা