সমাজে ধর্ম-জাতি-শ্রেণিভেদ, নারী চরিত্রের দৃঢ়তা, দুর্বলদের ওপর জুলুমসহ নানা দিক থেকে ফুটে ওঠেছে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পরিণীতা’ উপন্যাসে। বইটি নিয়ে ২২ সেপ্টেম্বর রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজে পাঠের আসর নিয়ে বসেন ভৈরব বন্ধুসভার বন্ধুরা। সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বইপড়ুয়া একদল শিক্ষার্থী।
১৮৩তম পাঠের আসরের সঞ্চালক ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মানিক আহমেদ। পাঠচক্রটির মাধ্যমে কলেজ পর্যায়ের পাঠচক্রের দ্বিতীয় আসরটি সম্পন্ন হয়। পর্যায়ক্রমে ভৈরবের অন্যান্য কলেজগুলোতেও পাঠচক্রের ফেরি করবে ভৈরব বন্ধুসভা।
প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক সুমন মোল্লা বলেন, ‘বই পড়ি, জীবন গড়ি’ শিরোনামে আমাদের এই কার্যক্রম শুরু। দীর্ঘ ৯ বছর ধরে ভৈরব বন্ধুসভা মুদ্রিত বই পড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে নিয়মিত পাঠচক্র করে যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মের কাছে মুদ্রিত বই হোক জ্ঞানের দিশারী।
গ্রন্থ আলোচনার শুরুতে লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে আলোচনা করেন মানিক আহমেদ। তিনি বলেন, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অপ্রতিদ্বন্দ্বী জনপ্রিয়তার জন্য তিনি ‘অপরাজেয় কথাশিল্পী’ নামে খ্যাত।
‘পরিণীতা’ উপন্যাসটি ১২টি পরিচ্ছেদে বিভক্ত। প্রথম ৬টি পরিচ্ছেদ আলোচনা করেন বন্ধু জান্নাতুল মিশু। তাঁর আলোচনায় উঠে আসে উপন্যাসের চরিত্র বিশ্লেষণ, প্রেম, বিচ্ছেদ। বাকি ৬টি পরিচ্ছেদ নিয়ে আলোচনা করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন। আলোচনায় তিনি বিচ্ছেদ, পরিণতি এবং পুরো উপন্যাসের বিষয়বস্তু তুলে ধরেন।
পরিণীতায় সমাজের উঁচু-নিচ, জাত-পাতের ভেদাভেদের পাশাপাশি চমৎকার একটি রোমান্টিক কাহিনি ওঠে এসেছে। শেষে নায়ক-নায়িকার মিলন যেন উপন্যাসের নামকরণকে স্বার্থক করেছে।
গ্রন্থ আলোচনায় আরও যুক্ত হন শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকেরা। একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মাইমুনা বলে, ‘উপন্যাসটি একবার পড়েছিলাম। কিন্তু এতটা স্পষ্ট ছিলাম না। ধন্যবাদ ভৈরব বন্ধুসভাকে। আজকের আসর থেকে উপন্যাসটি সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেয়েছি।’
সভাপতি প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘প্রযুক্তির এই বিশ্বে মুদ্রিত বই পড়ার দলগত চর্চা আমাদের দীর্ঘ কয়েক বছরের। তরুণদের অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে এই চর্চা।’
রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‘উপন্যাসটি চমৎকার। তখনকার সমাজের নানা প্রথা এবং দিক ওঠে এসেছে। তৎকালীন সমাজ প্রথার একটি গঠনমূলক চিত্র ফুটে ওঠেছে।’
কলেজের প্রতিষ্ঠাতা জনাব রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বন্ধুসভা মানেই ভিন্ন কিছু। নতুন কিছু, যেখানে সৃজনশীলতার ছোঁয়া থাকবে। আজকের আয়োজনে উপস্থিত থাকতে পেরে খুব ভালো লাগছে।’
গ্রন্থ আলোচনা শেষে শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল কুইজ প্রতিযোগিতা। কুইজ পর্ব পরিচালনা করেন পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক তানসি নাহার। এই পর্বের বিজয়ীরা হলো— গুলে জান্নাত, আনিকা আক্তার, কানিজ গাউছিয়া, পান্না ও মাইশা আক্তার। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার হিসেবে তুলে দেওয়া হয় কিশোর আলো ম্যাগাজিন।
পাঠের আসরটি ভৈরব বন্ধুসভার ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। লাইভে মন্তব্য করে নূর ই লাইলা বলেন, ‘“পরিণীতা” আমার খুব প্রিয় একটা উপন্যাস। প্রথম যখন পড়েছিলাম, মনের গভীরে খুব নাড়া দিয়েছিল। অনেক দিন পর আবার শুনছি।’
শ্যামল কান্তি বলেন, খুব সুন্দর আয়োজন। এই পাঠচক্র চলুক অনন্তকাল।
লাইভটি সমন্বয় করেন বন্ধু নাহিদ হোসাইন। পরবর্তী পাঠের আসর বসবে সরকারি হাজী আসমত কলেজ প্রাঙ্গণে।
পাঠচক্র ও পাঠাগার সম্পাদক, ভৈরব বন্ধুসভা