আঁখি বেগমের চিকিৎসার দায়িত্ব নিল গোয়ালন্দ বন্ধুসভা

গোয়ালন্দ বন্ধুসভার উদ্যোগে আঁখি বেগমকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসক দেখানো, পরীক্ষা–নিরীক্ষা করাসহ ওষুধ কিনে দেওয়া ও অর্থ সহযোগিতা করা হয়ছবি: বন্ধুসভা

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের নতুনপাড়ার আঁখি বেগম (৫৫)। স্বামী আবেদ আলীকে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করাতে ভিটামাটি বিক্রি করেও বাঁচাতে পারেননি। নিঃস্ব আঁখি বেগম এখন আশ্রয় নিয়েছেন জেলার পাংশা উপজেলার এক আত্মীয়ের বাড়ি। স্বামীর মৃত্যুতে তিনি আরও অসহায় হয়ে পড়েছেন।

আঁখি বেগমের যেখানে দিন চলে না, সেখানে নিজের চিকিৎসার খরচ জোগাড় করবেন কীভাবে। এমন পরিস্থিতিতে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে গোয়ালন্দ বন্ধুসভা। তাঁকে ফরিদপুরের আধুনিক হাসপাতাল আল–জারা স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসক দেখানো, পরীক্ষা–নিরীক্ষা করাসহ ওষুধ কিনে দেওয়া ও অর্থ সহযোগিতা করা হয়েছে। কোনো জমি বা আবাসস্থল না থাকায় বর্তমানে আঁখি বেগম এক নিকটাত্মীয়ের বাড়ি পাংশায় আশ্রিতা হিসেবে আছেন। তাঁর জন্য জরুরি প্রয়োজন একটু থাকার ব্যবস্থা ও দীর্ঘ সময় নিয়ে নিজের চিকিৎসা করানো।

বিষয়টি জানার পর গত ২৫ অক্টোবর আঁখি বেগমকে নিয়ে বন্ধুসভার সদস্যরা ছুটে যান ফরিদপুরের আধুনিক হাসপাতাল আল–জারা স্পেশালাইজড হাসপাতালে। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ ফজলুল হকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা করানো হয়। প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা–নিরীক্ষা শেষে তাঁকে ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় টাকা।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো রাজবাড়ী প্রতিনিধি এম রাশেদুল হক, আল–জারা স্পেশালাইজড হাসপাতালের চেয়ারম্যান শামীম আশরাফ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুর রহমান, গোয়ালন্দ বন্ধুসভার সভাপতি অম্বরেশ চক্রবর্তী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিক মণ্ডল, সদস্য স্কুলশিক্ষক ফরহাদ হোসেন প্রমুখ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর নতুনপাড়ার বাসিন্দা আবেদ আলী কয়েক বছর ধরে ফুসফুস ছিদ্র হওয়াসহ শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিজের সামান্যটুকু জমি ও ভিটাবাড়ি বিক্রি করেন। সবকিছু হারিয়ে গোয়ালন্দ পৌরসভার বদিউজ্জামান ব্যাপারীপাড়ার একজনের পরিত্যক্ত বাড়িতে আশ্রয় নেন। স্ত্রী আঁখি বেগমও দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। একমাত্র ছেলে আশিক মণ্ডল জেলার পাংশা উপজেলায় শ্রমজীবী হিসেবে কষ্টে দিন পার করছেন। দুই মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দিলেও তাঁদেরও আর্থিক অনটনে দিন কাটছে। এমন অবস্থায় আবেদ আলী ও আঁখি বেগম দম্পতির পাশে গিয়ে দাঁড়ায় গোয়ালন্দ বন্ধুসভা। চলতি বছরের গত ২৪ আগস্ট গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থাকা অবস্থায় আবেদ আলীর খোঁজখবর নেন বন্ধুসভার বন্ধুরা। তাৎক্ষণিক চিকিৎসার দায়িত্বভার নেন এবং আবেদ আলীর হাতে অর্থ তুলে দেন। বেশ কিছুদিন চিকিৎসা গ্রহণের পর সম্প্রতি আবেদ আলী মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর আঁখি বেগম আরও বেশি অসুস্থ হয়ে ভেঙে পড়েন।

গোয়ালন্দ বন্ধুসভার উদ্যোগে আঁখি বেগমকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসক দেখানো, পরীক্ষা–নিরীক্ষা করাসহ ওষুধ কিনে দেওয়া ও অর্থ সহযোগিতা করা হয়।

আঁখি বেগম বলেন, নিজের প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ জমি ছিল। নিজের ও স্বামীর চিকিৎসা করাতে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে সুদে ধার নেন এবং এনজিও থেকে ঋণ নেন। এসব টাকা পরিশোধ ও চিকিৎসা করাতে শেষ সম্বল ভিটাটুকু মাত্র আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি করেন। এর পর থেকে অন্যের বাড়িতে আশ্রিতা হিসেবে থাকছেন। এখনো তাঁর অনেক টাকা দেনা আছে। স্বামীর মৃত্যুর পর পাওনাদারের চাপ ও সংসার কীভাবে চলবে, সেই চিন্তায় দিন দিন আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

ফরিদপুরের আল–জারা স্পেশালাইজড হাসপাতালের চিকিৎসক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ ফজলুল হক বলেন, আঁখি বেগমের অতিমাত্রায় ডায়াবেটিস রয়েছে। শরীরে প্রচুর পরিমাণে অ্যালার্জিসহ আরও কিছু সমস্যা রয়েছে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে ধীরে ধীরে তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। এ জন্য তাঁর নিয়মিত খাওয়াদাওয়া, ওষুধ সেবন ও বাড়তি যত্ন প্রয়োজন। আগামী দুই থেকে তিন মাস নিয়ম মেনে চলতে পারলে অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠবেন তিনি।

গোয়ালন্দ বন্ধুসভার সভাপতি অম্বরেশ চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা আঁখি বেগমের স্বামী প্রয়াত আবেদ আলীর পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। সাধ্য অনুযায়ী চিকিৎসাসহ তাঁর পরিবারের খোঁজখবর রাখা, এমনকি খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন তিনি আর বেঁচে নেই। এখন আঁখি বেগম আছেন, তাঁর চিকিৎসার ভারও আমরা নিয়েছি। আমাদের সাধ্যমতো তাঁর পাশে থাকব।’