শিশুদের মুখে হাসি দেখাতেই যেন বন্ধুদের সার্থকতা

ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভার সহমর্মিতার ঈদ
ছবি: বন্ধুসভা

রাফিয়া, সুমাইয়া, সোহাগ ও জাকারিয়া—ভিন্ন ভিন্ন নামের হলেও তাদের কষ্টটা অভিন্ন। কারও বাবা নেই, কারও নেই মা। আবার কারও মা-বাবা থেকেও নেই। নতুন পোশাক কেনার সামর্থ্য না থাকায় ঈদ এলেই তাদের মন বিষণ্নতায় ভরে থাকে। এই ঈদে ‘সহমর্মিতার ঈদ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে তাদের মতো ৯০ শিশুর হাতে নতুন পোশাক তুলে দিয়েছে ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভা।

একই সঙ্গে স্বল্প আয়ের আরও ৭৫ পরিবারে ঈদের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। প্রতিটি প্যাকেটে ছিল পোলাওর চাল, মুরগি, ভোজ্যতেল, লাচ্ছা সেমাই, ডাল, চিনি, লবণ, গুঁড়া দুধ, মুড়ি, মসলা ও সুগন্ধি সাবান। আজ ২৫ মার্চ ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ চত্বরে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

শহরের খালপাড়ার শ্রমিক নানার কাছে থাকে শিশু দেলোয়ার হোসেন (৬)। মা-বাবা দুজনই অন্য জায়গায় সংসার পেতেছেন। নতুন জামা পেয়ে বেজায় খুশি দেলোয়ার। সে বলে, ‘কী সুন্দর জামা! ঈদে এটা পরে ঘুরে বেড়াব। খুব মজা হবে।’

আরেক শিশু জান্নাতুল ফেরদৌস (৮) বলে, ‘বাবাকে এবার জামা কিনে দিতে বলছিলাম। বাবা বলেছে টাকা নাই। এখানে একটা নতুন জামা পাইলাম, আর জামা কিনতে লাগবে না। জামাটা আমার খুব পছন্দ হইছে। অন্যরা আমার জামা দেখে তাকায় থাকবে।’

খাদ্যসামগ্রী হাতে পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন বৃদ্ধা সাজেদা বেগম (৭২)। শহরের কলেজপাড়ায় মেয়ের বাড়িতে থাকেন তিনি। বিভিন্ন বাড়িতে কাজ করতেন। এখন আর পারেন না। সাজেদা বেগম বলেন, ‘রোজার মাসে খুব কষ্ট হচ্ছিল। ঈদের দিন কী খাব, তা নিয়া চিন্তায় ছিলাম। এসব খাবার পায়ে চিন্তা দূর হইল।’

এর আগে বন্ধুসভার সদস্যরা গত রোববার ও সোমবার পৌর শহর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিশু ও পরিবারের তালিকা তৈরি করেন। সে সময় সবার হাতে নতুন পোশাক ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণের স্লিপ তুলে দেওয়া হয়। সেই স্লিপ নিয়ে তাঁরা ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজে চত্বরে হাজির হন। যাঁরা আসতে পারেনি, তাঁদের বাড়িতে উপহার পৌঁছে দেন বন্ধুরা।

ঈদের খুশি সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে এমন উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়।
ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আখতারুল ইসলাম

বিতরণ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আখতারুল ইসলাম, একই কলেজের সাবেক শিক্ষক নাসরিন জাহান, বন্ধুসভার উপদেষ্টা মাহমুদ হাসান, আরকে স্টেট উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ফেরদৌস আরা, বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক শুভেন্দু কুমার দেবনাথ প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শিহাব।

ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভার সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এলাকায় শিশু আছে, যাদের নতুন পোশাক কেনার সামর্থ্য নেই। তাদের জন্য এই আয়োজন। নতুন জামা হাতে পেয়ে শিশুদের মুখে যখন হাসি ফুটে ওঠে, তখন মনটা ভরে যায়। এই কার্যক্রম আমরা চালিয়ে যেতে চাই।’

ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আখতারুল ইসলাম বলেন, ‘লেখাপড়ার পাশাপাশি বন্ধুসভার সদস্যরা সব সময় ভালো কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। ঈদের খুশি সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে এমন উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়।’

বন্ধুসভার উপদেষ্টা নাসরিন জাহান বলেন, ‘এই অবসর সময়ে বন্ধুসভার সদস্যদের সৃজনশীল আয়োজনে এসে আমি প্রাণ ফিরে পাই। সবাইকে আন্তরিকভাবে সাধুবাদ জানাই।’

কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি মজিবর রহমান খান, ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভার সহসভাপতি আলমগীর হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাবেয়া আপেল, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সম্পাদক এম মারুফ হাসান, প্রশিক্ষণ সম্পাদক সিয়ামুর রশিদ, প্রচার সম্পাদক আলিফ হোসেন, পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মিথিলা আক্তার, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি সম্পাদক তপু রায়, দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক, সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, বন্ধু ফাহিমা নুশরাত, সুলতানুল আরেফিন, মাহবুব আলম তালুকদার, এন্তাজ আলী, মির্জা আকাশ, রাসেল রানা, রিদয় ইসলাম ও তৌফিক তয়ন প্রমুখ।

সাধারণ সম্পাদক, ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভা