তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে ফরিদপুরে কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা

ফরিদপুরে সংবর্ধনা নিতে আসা কৃতী শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস
ছবি: বন্ধুসভা

‘যতই আসুক ঝড়ঝাপটা, যতই আসুক বাধা। সব বাধা পেরিয়ে আগামী দিনের বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরব আমরা। ১০ বছর চেষ্টা করে সাফল্য অর্জন করেছি, কিন্তু এখনো দেশের সম্পদ হতে পারিনি। ভবিষ্যতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে দেশের মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হয়ে সম্পদ হতে চাই।’ এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি জানায় ফরিদপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থী তাহিয়া তাসিম লিনা।

কয়েক দিন ধরে দেশজুড়ে বৃষ্টি হচ্ছে। ৬ অক্টোবরও ব্যতিক্রম হয়নি। সকাল থেকে ফরিদপুরে মুষলধারে বৃষ্টি। শহরের কবি জসীমউদ্‌দীন হলের যে চত্বরে শিখো-প্রথম আলো জিপিএ-৫ কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, সেই চত্বর বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। তবে তা শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসে বাধার সৃষ্টি করতে পারেনি। সকাল আটটা থেকে অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে আসতে থাকে তারা। কেউ কেউ বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে আসে। সৃষ্টি হয় এক উৎসবমুখর পরিবেশের।

সাংস্কৃতিক পর্ব
ছবি: বন্ধুসভা

সকাল ১০টায় সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। মেধাবীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন প্রবীণ শিক্ষক অধ্যাপক আলতাফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। খুব শঙ্কিত ছিলাম। তবে এ মিলনায়তনে ঢুকে হলভর্তি মেধাবীদের দেখে আমার মন ভরে গেছে। মনে হচ্ছে, আজ আমার শিক্ষকজীবন সার্থক হয়েছে। আবার যদি জন্ম নেওয়ার সুযোগ থাকে কিংবা বারবার যদি জন্ম নেওয়ার সুযোগ থাকে, তাহলে আমি শিক্ষক হিসেবে জন্মগ্রহণ করতে চাই।’

সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের গণিত বিভাগের অধ্যাপক রমা সাহা বলেন, ‘আজকের সাফল্য তোমাদের ধরে রাখতে হবে। তোমরা একদিন এ দেশকে নেতৃত্ব দেবে। এ সাফল্য ধরে রাখতে পারলে আমরা নিশ্চিত হতে পারব, যোগ্যদের যোগ্য জায়গায় রেখে যাচ্ছি। এ জন্য সবার আগে ভালো মানুষ হতে হবে। মানুষ হওয়ার সাধনা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে হবে।’ তরুণ–তরুণীদের মুঠোফোনে আসক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে হাটুরে বাজিকর এসেছে। এগুলো হচ্ছে মুঠোফোন ও ল্যাপটপ। এ হাটুরে বাজিকর তোমাদের মূল্যবান সময় কেড়ে নিচ্ছে। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। সামনে আরও অনেক পথ তোমাদের পাড়ি দিতে হবে।’

অনুষ্ঠান শেষে ফরিদপুর বন্ধুসভার বন্ধুরা
ছবি: বন্ধুসভা

শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে অনুভূতি প্রকাশ করে ফরিদপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ফারিয়া আলম, বোয়ালমারী জর্জ একাডেমির দেবনাথ রায় ও মধুখালীর বাগাট উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পীযূষ ব্যানার্জি। তারা বলে, ‘আজ এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসে আমাদের মন ভরে গেছে। আমাদের অর্জন যেন আজ পরিপূর্ণ হলো। এ জন্য শিখো- প্রথম আলোকে ধন্যবাদ জানাই। জীবন শুধু পড়াশোনা নয়, জীবনকে উপভোগ করতে হয়। জীবনকে উপভোগ করার জন্য বই পড়তে হয়, শিল্প–সাহিত্যের সঙ্গে যুক্ত হতে হয়।’

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক প্রবীর কান্তি বালা। সঞ্চালনা করেন ফরিদপুর বন্ধুসভার উপদেষ্টা শিপ্রা গোস্বামী। অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাদকবিরোধী শপথবাক্য পাঠ করান আলোর ইভেন্ট অ্যান্ড অ্যাকটিভেশন বিভাগের সাইদুজ্জামান রওশন। তিনি বলেন, ‘তোমাদের ১০ বছরের যাত্রার সফলতাকে তোমরা আজ উদ্‌যাপন করছ। একদিন তোমাদের জীবন সার্থক হবে। সেই সার্থকতা দেশবাসী যেন উদ্‌যাপন করতে পারেন, সেই স্বপ্ন নিশ্চয়ই তোমরা পূরণ করবে।’

উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল সাইদুজ্জামান রওশনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জিপিএ-৫ পাওয়া চার শিক্ষার্থী জ্যোতি দত্ত, অংকিতা বিশ্বাস, সুপ্রভা চাকী ও জেরিন তাজনিনের সম্মিলিত নৃত্য পরিবেশন। সাংস্কৃতিক পর্বে ‘মন মোর মেঘেরও সংগীতে’ গানের সঙ্গে নাচ পরিবেশন করেন বন্ধুসভার বন্ধু শম্পা কোমল। ‘ও আমার দেশের মাটি’ গানটি পরিবেশন করেন মিঠুন দাস, ‘দে দে পাল তুলে দে হেলা করিস না’ গান পরিবেশন করেন ফরিদপুরের শিল্পী চঞ্চলা মন্ডল। হরবোলা পরিবেশন করেন বন্ধুসভার বন্ধু আব্দুস সবুর। চ্যানেল আইয়ের শিল্পী ইমরান খন্দকার তিনটি গান পরিবেশন করেন।

সাধারণ সম্পাদক, ফরিদপুর বন্ধুসভা