জাতীয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন গোয়ালন্দ বন্ধুসভার তৌকির
দেশব্যাপী প্রতিভা অন্বেষণ জাতীয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা-২০২৩–এ জাতীয় পর্যায়ে লোকসংগীত ও পঞ্চগীতি কবির গান ‘গ’ বিভাগ থেকে শ্রেষ্ঠ হয়েছেন গোয়ালন্দ বন্ধুসভার বন্ধু তৌকির আহমেদ। গত ৩১ জুলাই বিকেলে বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথিরা তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
তৌকির রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ বাজার কলেজ পাড়ার স্কুল শিক্ষক আবদুর রাজ্জাকের ছেলে। বর্তমানে ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি ২০১১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত টানা চার বছর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। ২০১১ সালে দেশাত্মবোধক গান ও লোকসংগীতে জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হন। ২০১২ সালে দেশাত্মবোধক ও লোকসংগীত, ২০১৩ সালে দেশাত্মবোধক, লোকসংগীত ও নজরুলসংগীতে চ্যাম্পিয়ন হন। ২০১৬ সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত শ্রেষ্ঠ লোকসংগীতশিল্পী হিসেবেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
জানা যায়, এ বছর দেশব্যাপী প্রতিভা অন্বেষণ জাতীয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ২০২৩–এ ৬৪টি জেলা জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। ৭টি ক্যাটাগরিতে মোট ১ হাজার ৩৬৫ প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে তৌকির লোকসংগীত ও পঞ্চগীতি কবির গান দুটি ক্যাটাগরিতে জাতীয় পর্যায়ে রাজবাড়ী জেলার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেন। গত ৩০ জুলাই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রীতি সম্মিলনী ও ফল ঘোষণা হয়। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।
৩১ জুলাই বিকেলে জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পুরস্কার বিতরণ করেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। অনুষ্ঠানে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে সম্মাননা ক্রেস্ট, সার্টিফিকেটসহ অর্থ প্রদান করা হয়।
তৌকির আহমেদ জানান, ‘বাবা গোয়ালন্দ লোটাস কলেজিয়েট স্কুলের সহকারী শিক্ষক। মা গৃহিণী। দুই ভাইবোনের মধ্যে বড় বোন রাজিয়ার বিয়ে হয়েছে। গ্রামের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছোট চাচা আবদুর রাজ্জাক গান গাইতেন। ছোটবেলা থেকে চাচা আমাকে সঙ্গে রাখতেন। তাঁর সঙ্গে থেকে গানের প্রতি ঝোঁক বেড়ে যায়। পরে স্থানীয় সংগীত প্রতিষ্ঠান ‘সংস্কৃতি অঙ্গনে’ গান শেখা। এইচএসসি পাসের পর ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগীত বিভাগে পড়াশোনার সুযোগ পাই। নিকটাত্মীয় নাট্যাভিনেতা জিনাত হাকিম ও আজিজুল হাকিমের সান্নিধ্যে থেকে ভবিষ্যতে সংগীত নিয়ে পিএইচডি করার ইচ্ছা আছে। বাংলা সংগীত নিয়ে গবেষণা করা এবং শুদ্ধ সংগীত সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই।’
পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার চেষ্টা করেন তৌকির আহমেদ। জানান, ‘ছোটবেলা থেকে প্রাণের সংগঠন গোয়ালন্দ বন্ধুসভার সঙ্গে জড়িয়ে আছি। এলাকায় থাকা অবস্থায় দীর্ঘদিন বন্ধুসভার সব কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলাম। সাংস্কৃতিক সম্পাদক, সহসাংগঠনিক সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছি। “ভালোর সাথে, আলোর পথে” এই স্লোগান নিয়ে সবার সহযোগিতায় সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।’
গোয়ালন্দ বন্ধুসভার সভাপতি লুৎফর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক শফিক মন্ডল বলেন, ‘বন্ধুসভার বন্ধু তৌকির আহমেদের এমন কৃতিত্বে আমরাও গর্বিত। আমরা তাঁর সাফল্য কামনা করছি।’