বীরাঙ্গনাদের উৎসর্গ করা ‘কখনো আমার মাকে’ ছোটবেলার কাব্যিক রূপ

ভৈরব বন্ধুসভার ১৭৫তম পাঠের আসরছবি: আনাস খান

অতঃপর মায়ের মুখে উচ্চারিত হচ্ছিল, ‘তোমরা সাক্ষী থেকো, আমি আমার যতটুকু করার করে গেছি। আমার যুদ্ধে আমি হারিনি...’— ১১ মার্চ ভৈরব বন্ধুসভার ১৭৫তম পাঠের আসরে মায়ের সঙ্গে যুদ্ধের দিনগুলোতে ফিরে গিয়েছিল উপস্থিত সবাই। এবারের বিষয় ছিল কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের উপন্যাস ‘কখনো আমার মাকে’। সঞ্চালনা করেন পাঠচক্র ও পাঠাগার সম্পাদক তানসি নাহার।

গ্রন্থ আলোচনায় কার্যনির্বাহী সদস্য রিফাত হোসেন বলেন, ‘বইটি পড়তে গিয়ে নিজের মায়ের ছবি কল্পনায় ভেসে উঠছিল বারবার। ফিরে যাই শৈশবের দিনগুলোতে। বইটি গভীর মনোযোগে পড়ে শেষ করেছি। এত সুন্দর লেখা, ভাষার সাবলীলতা! একজন মায়ের শক্তি, সংগ্রাম, ত্যাগ চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে।’

বন্ধু জান্নাতুল মিশু বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের বীরাঙ্গনাদের উৎসর্গ করা আনিসুল হক স্যারের এই বইটি আমাদের সবার ছোটবেলাকে কাব্যিক রূপ দিয়েছে। মায়ের আদর-শাসন, দায়িত্ববান ভাইয়ের অস্তিত্ব সবকিছুই মনে গেঁথে রয়েছে।’

সত্তর দশকের মফস্‌সলের দিনগুলোর বর্ণনা দিয়েই গল্পের শুরু। তারাগঞ্জের ফাল্গুন মাসের জোছনা ভরা চাঁদের আলোর নিচে এক পরিবারের দুই মায়ের সংসারে বড় হচ্ছিল চার ভাইবোন। তাদের বাবা চাকরি হারান অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করার কারণে। বাবা কারাগারে যাওয়ার পর বড় ভাই বাবলু সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। গল্পের শুরুতে লেখক উল্লেখ করেন, ওদের ছোটমা কখনো গান করেননি। এর কারণ একেবারে উপন্যাসের শেষ দিকে হৃদয়বিদারক বর্ণনায় জানা যায়।

গ্রন্থ আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে বন্ধুরা তাঁদের শৈশবের বর্ণনা দিচ্ছিলেন। যে শৈশব ছিল বৃষ্টিতে ভেজার, হারিকেন-কুপির আলোয় পড়তে বসার, তেপান্তরের মাঠে ছোটাছুটি করার শৈশব। সভাপতি প্রিয়াংকা বলেন, ‘বইটি আমি পড়েছি। এটি একটি হার না মানা যোদ্ধা মায়ের গল্প। আনিসুল হকের “মা” উপন্যাসের মতো এটিও তুমুল পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ভৈরব বইমেলায় বন্ধুসভা স্টলে পাঠকের কাছে বইটির বেশ চাহিদা ছিল।’

গ্রন্থ আলোচনায় কার্যনির্বাহী সদস্য রিফাত হোসেন
ছবি: আনাস খান

সাধারণ সম্পাদক মানিক আহমেদ বলেন, ‘চোখের সামনে সব স্মৃতি ভেসে উঠেছে। ফিরে গিয়েছিলাম আবার সেই ছোটবেলায়। মায়ের আদর, শাসন, ভালোবাসা, সবকিছুর স্মৃতিচারণা হচ্ছিল। আমি মনে করি প্রত্যেকের একবার হলেও “কখনো আমার মাকে” বইটি পড়া উচিত।’

প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক এবং বন্ধুসভার উপদেষ্টা সুমন মোল্লা বলেন, ‘এই বছরের কয়েকটি পাঠকনন্দিত বইয়ের মধ্যে “কখনো আমার মাকে” অন্যতম। এটি এরই মধ্যে ১১বার মুদ্রণ হয়েছে। এর আগে মুক্তিযুদ্ধের সত্য ঘটনা নিয়ে লেখা “মা” উপন্যাসটি আনিসুল হকের বইসমগ্রর মধ্যে পাঠকদের মনে বেশি দাগ কেটেছিল। “মা” বইটি নিয়ে ভৈরব বন্ধুসভা ২০১৭ সালে পাঠচক্র করেছিল।’

পাঠের আসরে আরও উপস্থিত ছিলেন ভৈরব বন্ধুসভার উপদেষ্টা আলাল উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ রহমান, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আনাস খান, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক সামির রহমান, পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোশারফ রাব্বিসহ আরও অনেকে।

পাঠচক্র ও পাঠাগার সম্পাদক, ভৈরব বন্ধুসভা