স্বাধীনতার গল্প শোনালেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রফিকুল হক

বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রফিকুল হককে সিলেট বন্ধুসভার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা স্মারক প্রদানছবি: বন্ধুসভা

‘১৯৭১ সালের মার্চে সারা দেশের মতো সিলেটও ছিল ক্ষোভে উত্তাল। ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি উত্থাপনের পর থেকেই ধীরে ধীরে দানা বাঁধতে থাকে স্বাধিকারের আন্দোলন। ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণের পর থেকে সিলেটেও শুরু হয় স্বাধীনতার দাবিতে চূড়ান্ত প্রস্তুতি। মার্চে প্রায় প্রতিদিনই কর্মসূচি পালন করতে থাকেন ছাত্রনেতারা। আর তাতে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেন সাধারণ জনতা। যতই দিন যায়, ততই আন্দোলন বেগবান হতে থাকে। সিলেটে ২৫ মার্চ দিনের শুরুটাই হয়েছিল মিছিলে মিছিলে। অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় সেদিন সকাল থেকেই সিলেটের রাজপথে লাঠি হাতে মিছিলের ঢল নামে। স্বাধীনতার অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত ছাত্র-জনতার বজ্রধ্বনিতে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হতে থাকে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে সেদিন যোগ দেন বিভিন্ন পেশাজীবীরাও।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রফিকুল হক এভাবেই সিলেট বন্ধুসভার বন্ধুদের কাছে স্বাধীনতার গল্প বলে যান। ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনি’ শিরোনামে প্রতিবছর সিলেট বন্ধুসভা আয়োজন করে সিলেটের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে একটি ভিডিও প্রতিবেদন, যেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের গাথা, মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল পরিস্থিতি, যুদ্ধকালীন সময়ে প্রতিকূল পরিবেশে কীভাবে নিজেদের খাপ খাইয়ে দেশকে স্বাধীন করেছেন, সেসব গল্প। প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য নতুন প্রজন্ম যাতে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারে। এ বছরের প্রতিবেদনে থাকছে মুক্তিযোদ্ধা মো. রফিকুল হকের গল্প।

দেশ স্বাধীনের পূর্বে ১৯৪৬ সালের ৩০ জুলাই দক্ষিণ সুরমার কদমতলী গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মো. রফিকুল হক। মরহুম তবারক আলী ও মাতা মরহুমা রুফেজা খানমের চার পুত্রসন্তানের মধ্যে সবার ছোট তিনি। বড় ভাই মরহুম মোহাম্মদ আলী কছির মিয়া ছিলেন সাবেক কন্ট্রাক্টর, অপর ভাই মরহুম মহরম আলী ও শফিকুর রহমান। চার ভাইয়ের মধ্যে দুজন জীবিত থাকলেও অপর দুজন পৃথিবীতে নেই। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা মো. রফিকুল হকের বড় ভাই মোহাম্মদ আলী কছির মিয়া ও মহরম আলী। দুজনকে সিলেটের খাদিমে থাকা পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে ১৯ দিন আটক রেখে নির্যাতনের স্টিমরোলার চালায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

নিজের ভাইদের ওপর পাকিস্তানি হায়েনাদের বর্বরতার কাহিনি বলতে গিয়ে মো. রফিকুল হকের চোখে জল চলে আসে। আলাপচারিতায় তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে সিলেট ও ভারতের সীমান্তবর্তী সুতারকান্দি বর্ডার হয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য গেরিলা ট্রেনিং গ্রহণ করতে ভারত চলে যান। ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে সরাসরি ৪ নম্বর সেক্টরের অধীন বড়লেখা সীমান্ত হয়ে দেশে প্রবেশ করেন। তিনি একজন সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।

মো. রফিকুল হক বলেন, ‘সে সময় আমার বয়স ছিল ২৬ বছর। তোমাদের মতো যুবক, রক্ত গরম। উদ্দেশ্য ও আদর্শ ঠিক ছিল, তাই আমরা স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছি। তাই এখন যুবক যাঁরা আগামীর বাংলাদেশ গঠন করতে চাচ্ছে, উদ্দেশ্য ও আদর্শ ঠিক রেখে এগিয়ে যেতে হবে।’

প্রতিবেদন সঞ্চালনা করেন বন্ধু ফারিহা হক ফিমা এবং পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ছিলেন বন্ধু সুবর্ণা দেব। ক্যামেরায় সহযোগিতা করেন শেখ ফয়সাল এবং সহযোগিতায় ছিলেন সিলেট প্রথমা বুক ক্যাফের ইনচার্জ মামুন পারভেজ। প্রতিবেদনটি সম্প্রচারিত হয়েছে সিলেট বন্ধুসভার ফেসবুক পেজে। প্রতিবেদন দেখুন

সভাপতি, সিলেট বন্ধুসভা