‘ঈদের দিন নতুন জামা পরে সমুদ্রসৈকত ঘুরতে যাব’

কক্সবাজার বন্ধুসভা, কক্সবাজার সিটি কলেজ ও কক্সবাজার সরকারি কলেজ বন্ধুসভার সহমর্মিতার ঈদছবি: বন্ধুসভা

কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক সমুদ্র উপকূলে গড়ে উঠেছে দেশের বৃহৎ শুটঁকি মাছ উৎপাদনের ৭০০টির বেশি মহাল-কারখানা। মহালে শ্রমিকের কাজ করেন ঘূর্ণিঝড়-জ্বলোচ্ছ্বাস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত হয়ে সেখানে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেওয়া অন্তত ৪৫ হাজার মানুষ।

৬ এপ্রিল দুপুরে সেখানকার কোমলমতি ১০০ জন শিশুকে ঈদের নতুন জামা এবং‌ ৫০টি পরিবারের মধ্যে ঈদের খাদ্যসামগ্রী উপহার দিয়েছে কক্সবাজার বন্ধুসভা, কক্সবাজার সিটি কলেজ ও কক্সবাজার সরকারি কলেজ বন্ধুসভা। পশ্চিম কুতুবদিয়া পাড়াতে ‘স্বপ্নজাল’ স্কুলে শিশুদের হাতে নতুন জামা তুলে দেন পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এস এম আকতার কামাল ও প্রথম আলোর কক্সবাজার আঞ্চলিক অফিস প্রধান আব্দুল কুদ্দুস রানা।

বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের আহ্বানে ‘সহমর্মিতার ঈদ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এগুলো বিতরণ করা হয়। বিতরণ কার্যক্রমের শুরুতেই উপস্থিত শিশুদের কাছে কাউন্সিলর আকতার কামাল জানতে চান, ‘তোমরা কেউ ঈদের নতুন জামাকাপড় কিনেছ?’ সবাই তখন না না বলে চিৎকার দেয়।

কয়েকজন শিশু জানায়, তাদের বাবা জেলে ট্রলার নিয়ে সমুদ্রে মাছ ধরেন। এখন হাতে টাকা নেই, তাই নতুন জামা কিনে দিতে পারছেন না।

আকতার কামাল বলেন, ‘প্রথম আলো দেশের সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকা। সংবাদ প্রকাশের পাশাপাশি তারা সমাজের জন্য ভালো অনেক কিছু করে থাকে। আজকে তোমাদের জন্য ঈদের নতুন জামা নিয়ে এসেছে। তোমাদের মা–বাবা নতুন জামা কিনে দিতে পারে নাই; কিন্তু প্রথম আলো বন্ধুসভা তোমাদের মনে রেখেছে।’

নতুন জামা পেয়ে মহাখুশি নয়ন মণি। সে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। নতুন জামা বুকে জড়িয়ে হাসতে হাসতে নয়ন মণি বলে, ‘ঈদের দিন নতুন জামা পরে সমুদ্রসৈকত ঘুরতে যাব।’

নয়ন মণির মা বেবী আকতার জানান, গত ঈদেও তিনি মেয়েকে জামা কিনে দিতে পারেননি। তাঁর স্বামী কাউসার পেশায় জেলে। ঘূর্ণিঝড়ে বসতবাড়ি হারিয়ে এক যুগ আগে তাঁরা মহেশখালীর মাতারবাড়ী থেকে এখানে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন।

নতুন জামা পেয়ে খুশি শিশু সাইমুম (১০) জানায়, ঈদের দিন নতুন জামা পরে সে সৈকতে ঘোড়ার পিঠে চড়বে। তার মা সাবেকুন্নাহার জানান, তিন সন্তানের মধ্যে সাইমুন সবার ছোট। বন্ধুসভার নতুন জামা না পেলে সাইমুনের ঈদ আনন্দ মাটি হতো।

সাবেকুন্নাহারের বাড়ি ছিল সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়াতে। ঘূর্ণিঝড়ে বসতবাড়ি সমুদ্রে বিলীন হলে এখানে নাজিরারটেক উপকূলে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেন।

শুঁটকিপল্লির শিক্ষাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে পশ্চিম কুতুবদিয়া পাড়াতে স্বপ্নজাল স্কুলটি গড়ে তোলেন শাকির আলম নামের একজন কলেজশিক্ষার্থী। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত স্বপ্নজালে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০ জন। আরও কয়েকজন কলেজ শিক্ষার্থী বিনা বেতনে শিশুদের পড়ান। উপকূলের শিশুদের অভাব-সমস্যা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেড়ে ওঠার চিত্র তুলে ধরে স্বপ্নজালের পরিচালক শাকির আলম বলেন, ‘জেলে পল্লিতে শিশুরা দুই বছর আগেও শুঁটকিমহালে শ্রমিকের কাজ করত। এখন পড়াশোনায় আগ্রহী হচ্ছে।’
এ সময় কাউন্সিলর আকতার কামাল স্বপ্নজালের শিশুদের পড়ালেখার বেঞ্চ ও বৈদ্যুতিক সংকট নিরসনের আশ্বাস দেন।

বন্ধুসভার উপদেষ্টা আব্দুল কুদ্দুস রানা বলেন, ‘বন্ধুসভার মাধ্যমে প্রথম আলো এসএসসিতে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা, বিতর্ক উৎসব, গণিত উৎসব, বইমেলা, ফিজিক্স অলিম্পিয়াড, বিজ্ঞানমেলা, প্রিয় শিক্ষক সংবর্ধনাসহ সমাজের জন্য মঙ্গলজনক কাজ করে থাকে। এর মধ্যে প্রতিবছর ঈদুল ফিতরের সময় শিশুদের মধ্যে নতুন জামা এবং দুর্গম এলাকার পরিবারের মধ্যে ঈদসামগ্রী বিতরণ করে আসছে।’

উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানে কক্সবাজার বন্ধুসভার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন পশ্চিম কুতুবদিয়া পাড়া ম্যাজিক বোর্ড‌-স্কুলের পরিচালক ও প্রতিষ্ঠাতা জিমরান মোহাম্মদ সায়েক, কক্সবাজার বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক নুরুল আবছার, রেশমি সুলতানা, কক্সবাজার সিটি কলেজ বন্ধুসভার সভাপতি আসিফ শাওয়াল, কক্সবাজার সরকারি কলেজ বন্ধুসভার সভাপতি শফিকুল মোস্তফাসহ অন্য বন্ধুরা।

সভাপতি, কক্সবাজার সিটি কলেজ বন্ধুসভা