শহীদ আজাদ ও তাঁর মায়ের জীবনের সত্য ঘটনা নিয়ে রচিত ‘মা’

সিলেট বন্ধুসভার পাঠের আসরছবি: বন্ধুসভা

‘মা’ কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুল হক রচিত একটি উপন্যাস। বইটি ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম প্রকাশিত হয়। উপন্যাসটি আনিসুল হকের সবচেয়ে জনপ্রিয় গ্রন্থ। ২০২০ সালে বইটির ১০০তম মুদ্রণ প্রকাশিত হয়। এটি একটি বাস্তব ঘটনাভিত্তিক উপন্যাস। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদ ও তাঁর মায়ের জীবনের সত্য ঘটনা নিয়ে রচিত এই উপন্যাসটির আবেদন মর্মস্পর্শী।

আনিসুল হকের অনবদ্য সৃষ্টি এই উপন্যাস শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আজাদের সত্য ঘটনার ওপর লেখা হয়েছে। যদিও লেখক সত্যি ঘটনার সঙ্গে খানিকটা কল্পনা মিশিয়ে আরও রোমাঞ্চকর করে তুলেছেন। একজন মুক্তিযোদ্ধার শহীদ হওয়ার করুণ কাহিনি এবং একজন মায়ের অপেক্ষা ও পুত্র হারানোর আহাজারি আমাদের হৃদয়কে নাড়া দিয়ে যায়। উপন্যাসে শহীদ আজাদের মৃত্যুর নির্মমতাকে ছাপিয়ে গেছে একজন মায়ের সন্তান হারানোর আহাজারি। এদিক দিয়ে উপন্যাসের নামকরণ সার্থক।

দীর্ঘ ১৪ বছর অপেক্ষার পর মৃত্যুর আগে তিনি বলে গেছেন, তাঁর কবরের ফলকে যেন লেখা হয় শহীদ আজাদের মা।

আজাদের মা দীর্ঘ ১৪ বছর ভাত খাননি, এক বেলা রুটি খেয়ে ছিলেন। শুধু তাঁর ছেলে জেলখানায় থাকার সময় বলেছিল, ‘মা অনেক দিন ভাত খাই না, ভাত খেতে ইচ্ছা করছে, তুমি আমার জন্য ভাত নিয়ে এসো।’ আজাদের মা আর কখনো ছেলেকে ভাত খাওয়াতে পারেননি। আজাদের মা মৃত্যুর আগপর্যন্ত কখনো বিছানায় শোননি। কারণ, তিনি শেষবার ছেলেকে জেলখানার মেঝেতে থাকতে দেখেছিলেন। ছেলের শরীরে শুকিয়ে যাওয়া রক্ত, ফোলা ক্ষতবিক্ষত শরীর দেখে আজাদের মা বিচলিত হয়েছিলেন, কষ্টে তাঁর বুক ফেটে গিয়েছিল। তবু তিনি ছেলেকে বলেছিলেন, যতই অত্যাচার করুক শক্ত হয়ে থাকতে, সহযোদ্ধাদের নাম মুখে আনতে বারণ করেছিলেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সামনে। ফলে মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি শুধু ছেলের জন্য অপেক্ষাই করে গেছেন। কখনো জানতে পারেননি ছেলে মারা গেছে নাকি বেঁচে আছে। দীর্ঘ ১৪ বছর অপেক্ষার পর মৃত্যুর আগে তিনি বলে গেছেন, তাঁর কবরের ফলকে যেন লেখা হয় শহীদ আজাদের মা।

এমন হাজারো মায়ের আত্মত্যাগ, বুকের ভারী নিশ্বাস, আর সন্তান হারানোর আহাজারিতে ভরে আছে বাংলার স্বাধীনতার ইতিহাস। ৩১ মে ‘মা’ উপন্যাসটি নিয়ে পাঠচক্রের আসর করে সিলেট বন্ধুসভা। প্রথম আলোর সিলেট অফিসের বন্ধুসভা কক্ষে এটি অনুষ্ঠিত হয়।

পাঠচক্র সঞ্চালনা করেন সভাপতি অন্তর শ্যাম। পাঠচক্রে বইটির প্রকাশকাল, মূল বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেন বন্ধু ফয়সাল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এই বই পড়ে চোখের কোণ ভিজবে না, তা হতে পারে না। নিজের অজান্তেই চোখের কোণ ভিজে যায়। আজাদের মায়ের আত্মবিশ্বাস আর সাহস সত্যিই প্রশংসনীয়। তা না হলে নিজের কষ্ট করে মানুষ করা ছেলেকে দেশের প্রতি কোরবান কয়জন মা করতে পারে?’

বন্ধু সাদমান বলেন, ‘তাঁর পরিচয়টা শুধু শহীদ আজাদের মা-ই নয়, তিনি নিজেও এক অসমসাহসিকা যোদ্ধা। তিনি বীর, সংশপ্তক; তিনি কেবল জাতির মুক্তিযুদ্ধে ছেলেকে উত্সর্গ করেছেন, তা-ই নয়, সারাটা জীবন লড়ে গেছেন নিজের লড়াই এবং সেই যুদ্ধে তিনি হার মানেননি।’

পাঠচক্রে আরও উপস্থিত ছিলেন বন্ধু সমীর বৈষ্ণব, দেব রায় সৌমেন, দৃষ্টি বর্মন, দীপান্বিতা সেন, সমরজিৎ হালদার, পিয়াস সরকার, সাজন বিশ্বাস, সাবাহ সুন্নাহ রহমান, আরিফা খানম, সাহরিয়ার হক, হাফছা আখতার, প্রীতম দাস, আফনান হোসেনসহ অন্য বন্ধুরা।

পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, সিলেট বন্ধুসভা