ফরিদপুর জেলার সদরপুরের মফিজউদ্দিন হাজিরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ আবদুল খালেক বয়াতি। প্রথম আলো ট্রাস্টের কম্বলটি হাতে তুলে দিতেই তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে ওঠেন। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘বাজানরা, আমরা চইরা মানুষ, বাপ মায়ের কবরও নদী গিল্লা খাইছে। এইবার যে কাল পড়ছে, বুঝতে পারি নাই বাঁচব কি না। কালাইয়া উঠছি। হুনতিছি সামনে শীতের আরও দুইডা ধাক্কা দেবে। ওই শীতে আপনাদের এই কম্বল আমাগো কামে আসবে। ওম দেবে।’
সদরপুর উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ নদবিধৌত চরাঞ্চলে শীতার্ত, দুস্থ ও অসহায় ১৬০টি পরিবারের মধ্যে কম্বল বিতরণ করেছে ফরিদপুর বন্ধুসভা। প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ৪ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে উপজেলার চরনাসিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে তালপট্টি, মফিজউদ্দিনের ডাঙ্গি গ্রামের ১৬০টি পরিবারের মধ্যে এগুলো বিতরণ করেন বন্ধুরা।
ফরিদপুর শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার সড়কপথ এবং ৫ কিলোমিটার নদীপথ ট্রলারে গিয়ে স্থানীয় মফিজউদ্দিন হাজিরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে সমবেত দুস্থদের হাতে এ কম্বল তুলে দেওয়া হয়। প্রবীণ নারী সালমা বেগম (৬৫) বলেন, ‘কম্বল যা আসে, সব নদীর ওই পাড়ের (মূল ভূখণ্ড) মানুষজন পায়। আমাগো কথা কেউ মনে রাহে না। ফিইরাও দেখে না। আপনারা যে আমাগো কথা মনে কইরা নদী পাড়ি দিয়া কম্বল আইনা দিছেন, তাইতেই আমরা খুশি। শীতের বাকি দিনগুলা একটু ওমের মধ্যে থাকতে পারব।’
ফরিদপুর বন্ধুসভার বন্ধুরা যখন শীতার্তদের হাতে কম্বলগুলো তুলে দিচ্ছিলেন, সে সময় উপস্থিত ছিলেন মফিজউদ্দিন হাজিরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সরদার মোহাম্মদ আলী। বন্ধুসভার কর্মকাণ্ড আগাগোড়া লক্ষ করে তিনি কক্ষ থেকে বের হয়ে আসেন। তিনি বলেন, ‘এই উদ্যোগের জন্য বন্ধুদের ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি এ–ও বলতে চাই, সমাজের অন্য যাঁরা শীতবস্ত্র বিতরণ করেন, তাঁরা যেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের দিকে একটু গুরুত্বটা বেশি দেন।’
সরদার মোহাম্মদ আলী আরও বলেন, ‘প্রথম আলো বন্ধুসভার বন্ধুরা সেই ফরিদপুর থেকে অন্তত ৪০ কিলোমিটার দূরে এই প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে এসেছেন। তাঁরা চাইলেই আশপাশের মানুষকে দিতে পারতেন। কিন্তু প্রকৃত দরিদ্র মানুষকে দিতে দুই দিন এই চরে ঘুরে দরিদ্র মানুষের তালিকা করে কম্বল দিয়েছেন। এ কাজটি অন্যরা যদি পালন করতেন, তাহলে প্রকৃত গরিব মানুষেরা উপকৃত হতেন।’
ফরিদপুর বন্ধুসভার সভাপতি মানিক কুন্ডু বলেন, ‘কম্বল বিতরণের আগের দিন বন্ধুসভার দুই বন্ধু এ চর এলাকায় এসে ঘুরে ঘুরে শীতার্তদের বাছাই করে কুপন দিয়ে যান। ৪ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর শহর থেকে ভোরে ইজিবাইক, ট্রলার নিয়ে দুই ঘণ্টার পথ অতিক্রম করে আমরা এ চর এলাকায় এসে কম্বলগুলো বিতরণ করি।’
এ কাজে সার্বক্ষণিক সহযোগিতায় ছিলেন বন্ধু মানিক কুন্ডু, জহির হোসেন, লক্ষ্মণ চন্দ্র মণ্ডল, সুব্রত পাল, মিঠুন দাস, সজীব দত্ত প্রমুখ।
সাধারণ সম্পাদক, ফরিদপুর বন্ধুসভা