সিলেট বন্ধুসভার পাঠচক্রে ‘আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম’

সিলেট বন্ধুসভার পাঠচক্রের আসরছবি: বন্ধুসভা

প্রথাবিরোধী ও বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদ একাধারে ছিলেন কবি, ঔপন্যাসিক, সমালোচক, গবেষক, রাজনৈতিক ভাষ্যকার, ভাষাবিজ্ঞানী ও অধ্যাপক। তাঁরই অনবদ্য রচনা ‘আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম’ ২০০৩ সালে আগামী প্রকাশনী থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়।

কেমন ছিল ৫০ বছর আগের বাংলাদেশ? ’৭১ সাল–পরবর্তী ইতিহাস কেমন ছিল, কতটুকুই-বা জানি? ‘আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম’ বইটিতে উঠে এসেছে সেই সময়কার চিত্র, যখন স্বাধীনতা–পূর্ববর্তী মানুষের আশা-প্রত্যাশা, চাওয়া-পাওয়া, স্বপ্নকে কীভাবে দুমড়ে–মুচড়ে দিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ–পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিরা। এখনো সেই মনোভাব শাসকশ্রেণির মধ্যে রয়েছে, সেই কথাগুলো লেখক হুমায়ুন আজাদ বইটিতে তুলে ধরেছেন।

বইটিতে উঠে এসেছে ১৯৭১ থেকে ২০০২ সালের ধারাবাহিক রাজনৈতিক ঘটানাবলি। শুরু হয়েছিল মুজিবের সময়কাল দিয়ে, তারপর একে একে উঠে আসে খন্দকার মোশতাক, খালেদ মোশাররফ, জিয়াউর রহমান, এরশাদ সাহেবের কাহিনি। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা পাকিস্তানি শোষকদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে নেমেছিলাম, তবে লেখকের নিজস্ব ভাষায়—‘মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি ও মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন মুজিবের দ্বিতীয় সত্তা’। লেখক ’৭২–পরবর্তী কার্যক্রমের জন্যও প্রশ্নবিদ্ধ করতে সংকোচ করেননি। বাংলাদেশের সঙ্গে কীভাবে কিংবদন্তি মেজর জিয়ার নামটি জড়িয়ে পড়ে, তাঁর শাসনকালে কীভাবে বাংলাদেশ রক্তাক্ত, পদদলিত হতে থাকে, তারই প্রেক্ষিতে লেখক আহত কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘হঠাৎ করেই কেউ মুজিব, রবীন্দ্রনাথ হতে পারে না। তবে কেউ কেউ হঠাৎ জিয়া হয়ে সারা দেশকে আলোড়িত করতে পারে।’

মেজর জিয়ার উত্থান-পতন লেখক যেমন বিশ্লেষণ করেছেন, ঠিক তেমনি লেখকের কলমে উঠে এসেছে সবকিছুকে দূষিত করা, কবিতা-নারীকেও বাদ না দেওয়া এরশাদের কাহিনি। ১৯৯০-এর আন্দোলনের পর এরশাদের পতন, বিএনপি-আওয়ামী পালাবদলের শাসনক্ষমতার তুলনামূলক পার্থক্য ও বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে সূক্ষ্ম দিকগুলোকেও লেখক তুলে ধরেছেন। অতীতের ইতিহাসের পাতা উল্টালে একটি জিনিস দেখা যায়, রক্ত সব সময় সাধারণ জনগণ দেয়, আর সুযোগ-সুবিধা ক্ষমতাবান শাসকেরাই ভোগ করেন, যা বর্তমান পরিস্থিতিতেও দেখা যায়।

হুমায়ুন আজাদের মতো এই সময়ে দাঁড়িয়ে আমাদেরও কষ্ট হয়। যদিও জানি, আমরা পুরোপুরি গণতান্ত্রিক অধিকারের মধ্যে বাস করছি না। না, এমন বাংলাদেশ আমরা কখনো চেয়েছি, আর না ভবিষ্যতে চাইব। কিন্তু ওই যে স্বপ্ন দেখি, আমরা বিশ্বাস করি একদিন সোনালি বাংলাদেশে বাস করব। এ স্বপ্ন নিছকই স্বপ্ন হয়ে থাকবে না, হয়তো বাস্তবে রূপ নিতে আরও অপেক্ষা করতে হবে।

২১ মার্চ বইটি নিয়ে পাঠচক্রের আসর করেছে সিলেট বন্ধুসভা। প্রথম আলো সিলেট অফিসের বন্ধুসভা কক্ষে এটি অনুষ্ঠিত হয়।

পাঠচক্রে ‘আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম’ বইটি পর্যালোচনা করেন বন্ধু জুনায়েদ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বইটি নিরপেক্ষ এক সমালোচনা গ্রন্থ। বিভিন্ন শাসনামলের কথা লেখক তুলে ধরেছেন। বইটি পড়ে মনে হয়েছে, আমি এখনকার চিত্র দেখছি।’

বন্ধু কৃত্য ছত্রী বলেন, ‘কোনো এক সময় জেনেছিলাম স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। তখন এই কথাটার মর্মোদ্ধার করতে না পারলেও এই বইটা পড়ে কিছুটা উপলব্ধি করতে পারি।’ এ ছাড়া বইটি পাঠ করেন বন্ধু দৃষ্টি বর্মণ ও ফয়সাল আহমেদ।

পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, সিলেট বন্ধুসভা