শীতকে হার মানিয়ে গণিত জয়ের স্বপ্ন

দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠে অনুষ্ঠিত হয় ডাচ্-বাংলা ব্যাংক প্রথম আলো আঞ্চলিক গণিত উৎসব ২০২৪ছবি: বন্ধুসভা

তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ও হিমেল হাওয়ার সঙ্গে ঘন কুয়াশা। সামান্য দূরের জিনিসও অস্পষ্ট, তবে গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের চোখে স্পষ্ট গণিত জয়ের স্বপ্ন। আবহাওয়া অফিসের হিসাব অনুযায়ী দিনাজপুরে ২৭ জানুয়ারি সকালের তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন শৈত্যপ্রবাহকে হার মানিয়ে দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠে উপস্থিত হয় খুদে শিক্ষার্থীরা।

এদিন দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠে অনুষ্ঠিত হয় ডাচ্-বাংলা ব্যাংক প্রথম আলো আঞ্চলিক গণিত উৎসব ২০২৪। দিনব্যাপী উৎসবে নানা আয়োজনে অংশ নিয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। সকাল নয়টায় জাতীয় সংগীত ও পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু হয়। ‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’ স্লোগানে উৎসবের উদ্বোধন করেন দিনাজপুর সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জলিল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আজকে তীব্র শীত উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ছুটে এসেছে গণিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য। আমরা যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছি, তা কিন্তু গণিতকে বাদ দিয়ে সম্ভব নয়। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ও প্রথম আলোকে ধন্যবাদ, তারা এই খুদে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণিতের প্রতি প্রেম সৃষ্টি করতে কাজ করে যাচ্ছে।’

আঞ্চলিক পর্বে বিজয়ী এক শিক্ষার্থী
ছবি: বন্ধুসভা

এ সময় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংক দিনাজপুর শাখার উপব্যবস্থাপক মোস্তফা হেলাল, আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের উপাধ্যক্ষ সাদেকুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর ঈদগাহ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান, প্রথম আলোর প্রতিনিধি রাজিউল ইসলাম প্রমুখ।

উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে শুরু হয় মূল্যায়ন পরীক্ষা। চারটি ভবনের আটটি রুমে হয় পরীক্ষা। ৪৪০ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে ঘণ্টাব্যাপী পরীক্ষা চলে। দায়িত্বে ছিলেন দিনাজপুর বন্ধুসভার বন্ধুরা ও ঢাকা থেকে আসা একাডেমিক দলের সদস্যরা।
মূল্যায়ন পরীক্ষা শেষে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে গণিতের গান পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। গণিত কীভাবে আবিষ্কৃত হয়েছে, দেশীয় গণনা পদ্ধতি কেন প্রয়োজনসহ নানা প্রশ্ন করে শিক্ষার্থীরা। এসব প্রশ্নের জবাব দেন দিনাজপুর সরকারি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মনোরঞ্জন রায়, মুস্তাফিজুর রহমান, শাহাদাৎ হোসেন, রসায়ন বিভাগের প্রভাষক মনীষ কুমার, নীলফামারীর ডোমার সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক বিশ্বজিৎ দাস, বিরল উপজেলার দুপ্তইড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক একরামুল হক, দিনাজপুর জিলা স্কুলের সহকারী শিক্ষক শাহজাহান সাজুসহ ঢাকা থেকে আসা একাডেমিক দলের সদস্যরা।

প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে মাদক, মুখস্থ ও মিথ্যাকে হাত তুলে ‘না’ জানায় উপস্থিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। শুভেচ্ছা বক্তব্যে বিরল উপজেলার দুপ্তইড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক একরামুল হক বলেন, ‘সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ভালো–মন্দ বোঝার জন্য গণিত শেখা দরকার। কেননা গণিত আমাদের সত্য বলতে শেখায়।’

অনুষ্ঠান সফল করতে সহযোগিতা করেন দিনাজপুর ও হাবিপ্রবি বন্ধুসভার বন্ধুরা
ছবি: বন্ধুসভা

শুভেচ্ছা বক্তব্যে প্রথম আলোর প্রতিনিধি রাজিউল ইসলাম বলেন, ‘সকালে দেখলাম তাপমাত্রা ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উৎসবে অংশ নিয়েছে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা। ধরে নিয়েছিলাম উপস্থিতি কম হবে। এত ঠান্ডার মধ্যে দূরদূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা আসতে চাইবে না। তবে হলভর্তি শিক্ষার্থী দেখে খুব ভালো লাগছে। গণিতের প্রতি প্রেম ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।’ এরপর তিনি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের উপাধ্যাক্ষ সাদেকুল ইসলামের হতে ভেন্যু স্মারক তুলে দেন।

‘আমরা করব জয়’ গান পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় পুরস্কার বিতরণী পর্ব। চারটি ক্যাটাগরিতে বিজয়ী শিক্ষার্থীদের হাতে মেডেল, সার্টিফিকেট ও টি-শার্ট তুলে দেন অতিথিরা। পুরস্কার বিতরণ শেষে বিজয়ী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন অতিথিরা।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন দিনাজপুর বন্ধুসভার সভাপতি শুভ রায়, সহসাংগঠনিক সম্পাদক শবনম মুস্তারিনা ও নির্বাহী সদস্য মুনিরা শাহনেওয়াজ চৌধুরী। অনুষ্ঠান সফল করতে সহযোগিতা করেন সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চন্দ্র অধিকারী, সাংগঠনিক সম্পাদক মনোরঞ্জন সিংহ, সাবেক সহসভাপতি সাব্বির হাসান, প্রমোদ রায়, সাহিন সারোয়ার, মোহাম্মদ আলী খন্দকার, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক দিপু রায়, অনুপ রায়, ব্রততি বিশ্বাস, শেফা, কানন, বিপ্লব চন্দ্র রায়, রাকিব হাসান, তারাজুল ইসলাম, কবি হাসানসহ দিনাজপুর বন্ধুসভা ও হাবিপ্রবি বন্ধুসভার বন্ধুরা।

বন্ধু, দিনাজপুর বন্ধুসভা