ঘরে ফেরা হয় না যাদের

শৈলান প্রবীণ নিবাসের বাসিন্দাদের সঙ্গে জাবি বন্ধুসভার বন্ধুরা
ছবি: বন্ধুসভা

ঘরে ফেরার নাম করে আমরা সব সময় ছুটে যাই মা-বাবার কাছে। অথচ সন্তান বড় হয়ে গেলে আর সে ঘরেই ঠাঁই মিলে না অনেকের। জীবনের শেষ দিনগুলো কাটে বৃদ্ধাশ্রমের চার দেয়ালে একাকিত্ব আর দীর্ঘশ্বাসে।

২৪ অক্টোবর, সূর্য তখন পশ্চিম আকাশের দিকে ঢলে পড়েছে অনেকটাই, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার একঝাঁক বন্ধু ছুটে চলেছেন ঢাকার ধামরাই উপজেলার শৈলান গ্রামে। উদ্দেশ্য শৈলান প্রবীণ নিবাসের বাসিন্দাদের সঙ্গে একবেলা নাশতা করা ও তাঁদের খোঁজখবর নেওয়া। প্রথম আলোর ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘একটি করে ভালো কাজ’-এর অংশ হিসেবে জাবি বন্ধুসভার এ উদ্যোগ।

প্রবীণ নিবাসে প্রবেশ করতেই দেখা গেল বেশ ছিমছাম একটি চারতলা বিল্ডিং। সামনে একটুখানি হাঁটার জায়গা। কিন্তু কোথাও প্রাণ নেই, হাসি নেই, উচ্ছ্বাস নেই। কেউ কেউ এখানে–সেখানে বসে আছেন, চোখভরা বিষাদ নিয়ে, প্রিয়জনদের সঙ্গে একটু দেখা করার তৃষ্ণা নিয়ে। বন্ধুসভার বন্ধুদের পেয়ে তাঁরা গল্পের ঝুলি নিয়ে বসলেন।

প্রবীণ নিবাসের কেউ এককালে খুব দাপুটে কর্মকর্তা ছিলেন, কেউ স্কুলশিক্ষক, কেউ গৃহিণী অথবা নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবারের জীবনসংগ্রামের নায়ক। এককালে হাতভর্তি বাজার নিয়ে স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য ঘরে ফিরতেন। এখন সেসব শুধুই অতীত। হয়তোবা সেই কুঁড়েঘর দালান বাড়ি হয়েছে, সন্তানেরা বড় হয়েছে, বড় চাকরি করছে, কারও সন্তানের হয়তো দেশজুড়ে নামডাক। কিন্তু সেসবের মধ্যে তাঁরা আর নেই। আবার কারও হয়তো সন্তানই নেই, পরিবার–পরিজন নেই। এত না থাকার মধ্যেও যখন জীবনের সোনালি দিনগুলোর কথা মনে করছিলেন, তাঁদের চকচকে চোখজুড়ে রোমাঞ্চ ভেসে উঠেছিল। বন্ধুরা মন দিয়ে শুনছিলেন তাঁদের কথা। প্রবীণদের জন্য বন্ধুরা নিয়ে যান ফল ও নানা পুষ্টিকর খাবার। সেসব নিজেদের হাতে পরিবেশন করে দেন। কথার ফুলঝুরিতে রাত ঘনিয়ে আসে; কিন্তু কারোরই যেন ফিরতে ইচ্ছা করছিল না।

শৈলান প্রবীণ নিবাসে বন্ধুরা
ছবি: বন্ধুসভা

শৈলান প্রবীণ নিবাসের তত্ত্বাবধায়ক মো. ওয়াহিদ বলেন, ‘এখানে প্রায় সব ধরনের প্রয়োজনীয় সুযোগ–সুবিধা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করি তাঁদের ঠিকমতো দেখভাল করার। তবু পরিবারের অভাব তো আমরা মেটাতে পারি না। তোমাদের মতো ছেলেমেয়েরা মাঝেমধ্যে আসে, গল্প করে সময় কাটিয়ে যায়, তাঁরাও তোমাদের সঙ্গে সময় কাটাতে অনেক পছন্দ করেন।’ তিনি আরও জানান, শৈলান প্রবীণ নিবাসের বাসিন্দাদের যাবতীয় ভরণপোষণ, চিকিৎসার ব্যয়ভারসহ সবকিছুই চলে মনোয়ারা ইসলাম তাজুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্ট এবং দাতাদের অর্থায়নে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার সভাপতি হামিদা জান্নাত বলেন, ‘জীবনের শেষ বয়সে যখন এই মানুষগুলোর পরিবারের উষ্ণতা, প্রিয়জনদের সঙ্গ দরকার, তখন তাঁরা বৃদ্ধাশ্রমের চার দেয়ালে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। আমরা চেষ্টা করেছি তাঁদের সঙ্গে একটু সময় কাটাতে, গল্প করতে, কিছু সময়ের জন্য হলেও পরিবারের অনুভূতি দিতে।’

সভাপতি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা