ভাষা আন্দোলন বলতে ১৯৫২ সালের আন্দোলনকেই আমরা বুঝি। কিন্তু এ আন্দোলনের সূত্রপাত কি এক দিনেই হয়েছিল? উত্তর হলো ‘না’। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান গঠনের পর পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদেরাই সরকারে প্রাধান্য পান। পাকিস্তান সরকার ঠিক করে উর্দুকে পুরো পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা করা হবে। যদিও পূর্ব পাকিস্তানে উর্দুভাষীর সংখ্যা ছিল শতকরা মাত্র ৪ জন।
পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী মানুষ (যাঁরা ছিলেন শতকরা ৫৬ জন) এই সিদ্ধান্তকে মোটেই মেনে নিতে চাননি। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনে ইংরেজি, উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকে ব্যবহারিক ভাষা হিসেবে সংশোধনী প্রস্তাব করেন, যা পরবর্তী সময় বাতিল করা হয়। তৎকালীন পাকিস্তান গভর্নর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ মার্চ (১৯৪৮) মাসে রেসকোর্স ময়দানে ঘোষণা করেন, ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।’ ওই ঘোষণায় উপস্থিত জনতা বিরোধিতা করেন। শুরু হয় রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলন।
১১ মার্চ ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ দাবিতে ঢাকার ছাত্র-যুবকেরা আন্দোলন শুরু করেছিলেন, যা জিন্নাহর ঢাকা সফর উপলক্ষে স্থগিত করা হয়। স্থগিত আন্দোলন নতুন করে শুরু করতে ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঢাকায় এসে এক বক্তৃতায় বলেন, ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দুই হতে যাচ্ছে।’ তিনি ১৯৪৮ সালে জিন্নাহর উক্তি উদ্ধৃত করে এমন কথাও বলেন, ‘যারা এর বিরোধিতা করে, তারা পাকিস্তানের দুশমন।’
এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ার শুরুতে ছিল ঢাকার ছাত্র–যুবসমাজ। আন্দোলনের সহযোগিতায় ৩১ জানুয়ারি গঠিত হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। ২১ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত হয় ঢাকাসহ দেশব্যাপী প্রতিবাদী আন্দোলনের দিন হিসেবে কর্মসূচি, সভা-সমাবেশ, মিছিল-স্লোগান। ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্র-জনতা আন্দোলনে নামেন। পুলিশের গুলিতে রফিক, জব্বার, বরকত, সালামসহ অনেকে শহীদ হন। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।
একুশে ফেব্রুয়ারি ‘শহীদ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং শহীদ মিনার গড়ে ওঠে। আন্দোলনের পরিণতিতে ইউনেসকো ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। খুব সংক্ষেপে সঠিক তথ্যে ভাষা আন্দোলনের একটা ছবি আঁকা এবং সেখানে ব্যক্তির মতামত নয়, সঠিক ইতিহাস তুলে ধরাই ছিল লেখক আহমদ রফিকের উদ্দেশ্য।
২১ ফেব্রুয়ারি আম্বরখানা প্রথমাতে পাঠচক্রের আয়োজন করে সিলেট বন্ধুসভা। নির্ধারিত বই ছিল আহমদ রফিক রচিত ‘ভাষা আন্দোলন’। বইটি পাঠ করে বন্ধু সুমন দাস বলেন, ‘১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ সালের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে।’
বন্ধু প্রণব চৌধুরী বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের মূল নেতাদের ভূমিকা, ছাত্রসমাজের ভূমিকা এবং সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের কার্যক্রম বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে।’
বন্ধু শতাব্দী দত্ত মৌ বলেন, ‘“ভাষা আন্দোলন”বইটি বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার সংগ্রামকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়াস। এটি শুধু ইতিহাস নয়, বরং জাতীয়তাবোধ ও ভাষার প্রতি ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি।’
এ ছাড়া বইটি পাঠ করেন বন্ধু কৃত্য ছত্রী, মিনথিয়া রহমান, মৌরি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বন্ধু দেব রায় সৌমেন, ফয়সাল আহমেদ, অনুপমা দাস, শাম্মী আক্তার, সমরজিৎ হালদারসহ অন্য বন্ধুরা।
পাঠগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, সিলেট বন্ধুসভা