নোয়াখালী মুক্ত দিবসে মুক্তিযুদ্ধের গল্প নিয়ে পাঠচক্র

নোয়াখালী বন্ধুসভার পাঠচক্রের আসর
ছবি: বন্ধুসভা

৭ ডিসেম্বর ছিল নোয়াখালী মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিসেনারা জেলা শহর মাইজদীর পিটিআইতে রাজাকারদের সর্বশেষ ও প্রধান ঘাঁটির পতন ঘটিয়ে নোয়াখালীর মাটিতে স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয়কেতন উড়িয়েছিলেন।

নোয়াখালী মুক্ত দিবস উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার বৃষ্টিস্নাত বিকেলে পাঠচক্র ও আলোচনা সভার আয়োজন করে নোয়াখালী বন্ধুসভা। প্রথম আলোর নোয়াখালী অফিসে এটি অনুষ্ঠিত হয়। পাঠচক্রের বিষয় ছিল জহির রায়হানের ছোটগল্প ‘সময়ের প্রয়োজনে’। এ ছাড়া এদিন সন্ধ্যায় জেলা শহীদ স্মৃতিফলকের সামনে মোমবাতি প্রজ্বালনের কথা থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে কর্মসূচিটি বাতিল করা হয়।

‘সময়ের প্রয়োজনে’ এক তরুণ মুক্তিযোদ্ধার খাতায় গল্পকারে পরিবেশিত একটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্প। সেই তরুণ মুক্তিযোদ্ধার গল্প যে অপারেশনে গিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীদের হাতে ধরা পড়ে, যার শেষ পরিণতি লেখক বলে যেতে পারেননি। হয়তো সেই তরুণ মুক্তিযোদ্ধাকে মেরে ফেলা হয়েছিল অথবা বেঁচে গিয়েছিল ভাগ্যচক্রে। এই গল্পে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের চিত্র খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। গল্পের একটা জায়গায় উল্লেখ আছে মুক্তিযোদ্ধাদের তাঁদের সেক্টর কমান্ডার প্রশ্ন করেছিলেন, ‘কেন যুদ্ধ করছ বলতে পারো?’ সবাই একসঙ্গে একই উত্তর দিয়েছিলেন, ‘দেশের জন্য। মাতৃভূমির জন্য। যুদ্ধ করছি দেশকে মুক্ত করার জন্য।’ কিন্তু বাস্তবিকতার দিক দিয়ে চিন্তা করলে দেখা যায় যুদ্ধ হয়েছিল সময়ের প্রয়োজনে।

পরিচয় পর্ব শেষে বন্ধুরা একে একে গল্পটির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। সহসভাপতি জাহিদ হাসান বলেন, বহুকাল এ দেশে ঔপনিবেশিক শাসন চলেছে। কিন্তু নির্যাতন, নিপীড়নে সব ঔপনিবেশিক শাসকদের ছাপিয়ে গিয়েছে পাকিস্তানি শাসকেরা। পাঠচক্রটি সঞ্চালনা করেন দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক মো. শিমুল।

পাঠচক্র শেষে জাহিদ হাসান মুক্তিযুদ্ধের সময় নোয়াখালী সরকারি কলেজের শহীদ অধ্যাপক আবুল হাসেমের বীরত্বের কাহিনি শোনান। যিনি যুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই কলেজ প্রাঙ্গণে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন। যিনি নিজেও অসীম বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন ৯টি মাস। অবশেষে ৭ ডিসেম্বর যেদিন নোয়াখালী স্বাধীন হয়, সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় মিছিলের ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায় রাজাকাররা। সেই আক্রমণে শহীদ হন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম।

পাঠচক্রে আরও উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা সুমন নূর, সাধারণ সম্পাদক আসিফ আহমেদ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক সুমাইয়া সামান্তা, পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক তাজকির হোসেন, নাফিসসহ অন্য বন্ধুরা।

মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক, নোয়াখালী বন্ধুসভা