বুদ্ধদেব গুহ রচিত রোমান্টিক উপন্যাস ‘হলুদ বসন্ত’ ১৯৭৬ সালে আনন্দ সাহিত্য পুরস্কার পায়। ঘোর বাস্তব শূন্যতার সব কটি প্রভেদ ধরা পড়েছে এই উপন্যাসে। উপন্যাসে আছে দ্বিধা, লোভ, আকর্ষণ, বিকর্ষণ, ঘৃণা, সমর্পণ আর শেষে আছে অপ্রাপ্তি। গল্পের নায়ক ঋজু পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার, পাশাপাশি লেখালেখি করে। নায়কের বিভিন্ন জল্পনাকল্পনা, হতাশা, ব্যর্থতা, একতরফা ভালোবাসার যে না পাওয়া—এসবই এ উপন্যাসের মূল উপজীব্য।
উপন্যাসের শুরু হয় ঋজুর সঙ্গে নয়নার ফোনালাপের মাধ্যমে। নয়না আর কেউ নয়, তার বন্ধু সুজয়ের ছোট বোন। সুজয়ের বাড়িতে তার বেশ ভালোই চলাচল রয়েছে। ঘটনাচক্রে নয়নাকে ঋজু প্রচণ্ড ভালোবেসে ফেলে। সারা দিনের ব্যস্ততায়, অবসরে, ভাবনায় ও স্বপ্নের মধ্যেও যেন শুধু নয়নার বসবাস। অনেক চিঠি পাঠাত সে, নয়না সেগুলো পড়ত। তবে ও কখনো ঋজুকে সেই চিঠিগুলোর উত্তরে কোনো চিঠি দিত না। প্রেমে পড়লে নাকি মানুষ পাল্টে যায়, ঋজুও পাল্টায়। এই যেমন শিকারপ্রেমী ঋজু নয়নার কথায় নিজের ভালো লাগাটুকুও ত্যাগ করে। নয়নার কাছ থেকে এত কষ্ট ও অবহেলা পাওয়ার পরও তার প্রতি ভালোবাসায় কোনো ঘাটতি হয়নি। তবে নয়নার ঋজুর প্রতি কেমন অনুভূতি ছিল, প্রথমে স্পষ্ট না হলেও গল্পে যখন আরেক চরিত্রের আগমন ঘটে, তখন কিছুটা স্পষ্ট হয়।
চরিত্রটি হলো নীতীশ সেন, সুজয়ের আরেক বন্ধু। তাকে অবশ্য ঋজুর বেশ অপছন্দ। কারণ, নয়নার যে নীতীশের সান্নিধ্য ভালো লাগত। পরবর্তী সময়ে নীতীশ অন্যত্র বিয়ে করায় নয়না ভেঙে পড়ে, এ ঘটনার জন্য সুজয় ঋজুকেই দায়ী করে। কারণ, তত দিনে তার চিঠিগুলো সবাই দেখে ফেলে। এত দিন নয়নার কাছে অপমানিত হতো, আজ ঘনিষ্ঠ বন্ধুর কাছে এমন অপমান তার আত্মমর্যাদায় অনেকটাই আঘাত করে। সে আর কখনো নয়নার দিকে ফিরেও তাকাবে না, এক দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।
সমগ্র কাহিনিতে ঋজুর মনস্তত্ত্ব ও চিন্তাভাবনা খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। প্রেমিক মনের অনুভূতিগুলো এত সুন্দরভাবে কাহিনিতে ফুটে উঠেছে, তা বলে বোঝানোর মতো নয়। এই জায়গাগুলো খুবই উপভোগ্য। মানুষ বড় অদ্ভুত, সঙ্গে ভালোবাসাও। বলতে গেলে এ বড় অদ্ভুত রোগ। কখন যে কার প্রতি এই রোগে আক্রান্ত হবে বলা মুশকিল।
৪ এপ্রিল বুদ্ধদেব গুহ রচিত রোমান্টিক উপন্যাস ‘হলুদ বসন্ত’ নিয়ে পাঠচক্রের আসর করেছে সিলেট বন্ধুসভা। বই পর্যালোচনায় বন্ধু অনুপমা দাস বলেন, লেখকের উদ্দাম কলমে ভর করে স্বীকার করে যাওয়া, হেরে যাওয়ায় আসলে কোনো গৌরব নেই। তা হোক না সে কোনো বর্ষার মেঘময় সকালে একচিলতে রোদের খোঁজেই। ক্ষণিকের সুখে আরাম থাকতে পারে, তবে প্রশান্তি আছে কি? তবু গল্প লেখা হয়। ভালোবাসাও হয়তোবা সব সময় যুক্তির ভিত্তিতে পরিচালিত হয় না।
বন্ধু প্রত্যাশা তালুকদার বলেন, ‘অপ্রাপ্তির বিষয়টি যেন আমার মনকেও বিষাদময় করে দিয়েছে দিনের অন্তিমকালে। প্রতিটি মুহূর্তে অনুভব করেছি লেখকের লেখনী।’
বন্ধু প্রীতম তালুকদার বলেন, সুখ, দুঃখ, মান, অভিমান, অপমান, রাগ—সবকিছু মিলিয়ে যেন এক বাঙালি পুরুষের ভালোবাসার স্বরূপ তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে।
এ ছাড়া বইটি পাঠ করেন বন্ধু কিশোর দাশ ও শাহরিয়ার হক। পাঠের আসরে আরও উপস্থিত ছিলেন বন্ধু দেব রায় সৌমেন, ফয়সাল আহমেদ, সমরজিৎ হালদারসহ অন্য বন্ধুরা।
পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, সিলেট বন্ধুসভা