গ্রন্থাগার দিবসে আলোচনা সভা, পাঠচক্র ও কবিতা আবৃত্তি

জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসে দিনাজপুর বন্ধুসভার আলোচনা সভা, পাঠচক্র ও কবিতা আবৃত্তিছবি: বন্ধুসভা

গ্রন্থাগার হচ্ছে এমন একটি স্থান, যেখানে অসংখ্য বইয়ের সমাহার থাকে। মানুষ সেখানে জ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে যায়। পাঠকেরা ক্ষণিকের জন্য হলেও মনের প্রশান্তি খুঁজে পায়। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরপর ২০১৮ সাল থেকে প্রতিবছর ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস পালিত হয়ে আসছে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস উপলক্ষে গত সোমবার দিনাজপুর বন্ধুসভা একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে আলোচনা পর্ব, পরিচিতি, পাঠচক্র ও কবিতা আবৃত্তির আয়োজন করা হয়।

দিনাজপুরের প্রখ্যাত আবৃত্তিশিল্পী ও লেখিকা লাজু রহমানের শুভেচ্ছা বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। তিনি বলেন, ‘আজ ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস। তাই আমরা গ্রন্থ নিয়ে চলি, গ্রন্থাগারকে ভালোবাসি। গ্রন্থাগারে গিয়ে সবাই বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলি। জীবনকে সুন্দর, আনন্দিত ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে গড়ে তোলার জন্য বই পড়ার বিকল্প নেই। গ্রন্থাগারে গিয়ে বই পড়লে আমাদের মধ্যে জ্ঞানের বিকাশ ঘটবে।’

প্রথম আলোর প্রতিনিধি ও বন্ধুসভার উপদেষ্টা শৈশব রাজু বলেন, ‘আমাদের প্রতিনিয়ত বই পড়ার নেশা তৈরি করতে হবে। মুঠোফোন ব্যবহারে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। আমরা আমাদের মূল্যবান সময়, অর্থ ও রুচিবোধ মুঠোফোনের পেছনে নষ্ট করি। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে আসক্ত হয়ে নিজের অনেক বড় ক্ষতি করে থাকি, যা থেকে পরিত্রাণে ভূমিকা রাখবে বই। আমাদের প্রতিনিয়ত গ্রন্থাগারে যাওয়া উচিত। গল্প, উপন্যাস, কবিতা ইত্যাদি পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যত বই পড়ব, তত নতুন জিনিস শিখতে পারব। বই পড়লে পাহাড় ও সমুদ্রের সমান আত্মবিশ্বাস বাড়বে। বই পড়লে কোনো ক্ষতি হয় না; বরং জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ হয়।’

উপস্থিত সবার উদ্দেশে শৈশব রাজু বলেন, ‘আমরা ঘরে বসে জানালা বা দরজা দিয়ে বাইরের কিছু দেখতে চাই না, ছাদে উঠে সুবিশাল খোলা আকাশ দেখতে চাই। আমাদের প্রত্যেককেই শৌখিন, সুন্দর ও পরিপাটি থাকতে হবে। আজ থেকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, প্রত্যেকেই নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাব এবং প্রতিদিন ১০ পৃষ্ঠা করে বই পড়ার চর্চা করব। এতে বছর শেষে অনেক অগ্রগতি সাধন করতে পারব।’

আলোচনা পর্ব শেষে গোলাম নবী মিঠুর লেখা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ‘দীপ্ত নয়ন’ নিয়ে পাঠচক্র করা হয়। পাঠ আলোচনায় বন্ধুরা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় চেতনা। অনেক আন্দোলন ও সংগ্রামের ফলে প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করতে পেরেছি।’ বইটিতে লেখক মুক্তিযুদ্ধকালের ঘটনার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। তখন মানুষ কত অসহায় হয়ে জীবন অতিবাহিত করেছে, তারই ধারাবাহিকতা ফুটে ওঠেছে।

পাঠচক্র শেষে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যুগান্তকারী কবিতা ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ আবৃত্তি করেন বন্ধু মান্নাফ রহমান। এ ছাড়া কবিতা আবৃত্তি করেন লাজু রহমান, বইমেলা সম্পাদক ইমন ইসলাম ও বন্ধু বিরোশ। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চন্দ্র অধিকারী। আরও উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক মনোরঞ্জন সিংহ, বন্ধু কৃষ্ণ রায়, দেবাশীষ সরকার, বেলালুর রহমান, সাব্বির রহমানসহ আরও অনেকে।

মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক, দিনাজপুর বন্ধুসভা