চট্টগ্রাম বন্ধুসভার পাঠচক্র
স্কুলশিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘কিশোর গ্যাং: কীভাবে এলো, কীভাবে রুখবো’
বর্তমান বাংলাদেশে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য যেন সামাজিক অবক্ষয়ে পরিণত হয়েছে। কোমলমতি শিশু-কিশোরেরা যেখানে পড়ালেখার পাশাপাশি নীতি ও নৈতিকতা শেখার মাধ্যমে এই দেশকে স্মার্টভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবে, সেখানে তাদেরই একটা অংশ যেন চলে যাচ্ছে ভুল পথের দিকে। লেখক কমান্ডার খন্দকার আল মঈনের ‘কিশোর গ্যাং: কীভাবে এলো, কীভাবে রুখবো’ বইটি যেন বর্তমান সমাজের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী করে তুলেছে।
কিশোর গ্যাং কী? কীভাবে এই অপরাধ দমন করা যায়? সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাঠচক্রের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে বইটি নিয়ে পাঠচক্রের আসর করেছে চট্টগ্রাম বন্ধুসভা। ১৪ আগস্ট নগরীর বাগমনিরাম আবদুর রশীদ সিটি করপোরেশন বালক উচ্চবিদ্যালয়ে এটি অনুষ্ঠিত হয়। অংশ নেয় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
চট্টগ্রাম বন্ধুসভার হিরণ্ময় কথকতা সিরিজ পাঠচক্রের এটি ৮ম আসর। আলোচ্য বিষয় ছিল প্রবন্ধগ্রন্থ ‘কিশোর গ্যাং: কীভাবে এলো, কীভাবে রুখবো’। বইটি নিয়ে আলোচনা করেন চট্টগ্রাম বন্ধুসভার সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসেন।
তিনি বলেন, ‘কিশোর গ্যাং বা কিশোর গ্যাং কালচার বর্তমানে দেশ, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বিশাল হুমকিস্বরূপ। সুন্দর সমাজব্যবস্থাকে ধ্বংস করার জন্য রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ার মাধ্যমে নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে বিপথগামী শিশু-কিশোরেরা। সাধারণত অপরাধের সঙ্গে জড়িত কিশোরের দলকে কিশোর গ্যাং বলে। এসব গ্যাং দলগতভাবে যে অপরাধের সংস্কৃতি চর্চা করে, সেটি কিশোর গ্যাং কালচার। প্রতিটি গ্যাং গ্রুপের সদস্যসংখ্যা কমবেশি হয়। কোনো কোনো গ্রুপে সদস্যসংখ্যা ১০ থেকে ৩০ জন বা কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি হতে পারে। তা ছাড়া কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা অনেক সময় আধিপত্য বিস্তার ও গ্রুপিং নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। তারা মূলত চাঁদাবাজি, ইভটিজিং, মানুষ হত্যা, ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে থাকে। ফলে সাধারণ জনগণ ব্যাপকভাবে নিরাপত্তাজনিত সমস্যার সম্মুখীন হয়।’
ইকবাল হোসেন বলেন, ‘২০১০ সালের দিকে ঢাকা শহরের উত্তরা, গুলশান, ধানমন্ডি ও মিরপুরসহ নানা আবাসিক এলাকার দেয়ালে সমৃদ্ধ অদ্ভুত সব নাম যেমন—গ্যাং জিরো জিরো নাইন, রিস্ক জোন, ভাই গ্যাং, নাইন স্টার, ডিসকো বয়েজ, হ্যালো গ্যাং লেখা চোখে পড়ে। তাদের এই অপসংস্কৃতি বর্তমানে দেশজুড়ে বিস্তৃত। কিশোর গ্যাং সদস্যদের বয়স মূলত ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সের মধ্যে হয়ে থাকে। এই অপরাধগোষ্ঠীকে রুখতে প্রয়োজন পরিবার ও সমাজের ভূমিকা, নৈতিক শিক্ষা, সচেতনতা বৃদ্ধি, কমিউনিটি পুলিশিং, কঠোর আইন প্রয়োগ ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থাসহ অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ।’
বাগমনিরাম আবদুর রশীদ সিটি করপোরেশন বালক উচ্চবিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘কিশোর গ্যাং–সম্পর্কিত এই গুরুত্বপূর্ণ বই নিয়ে চট্টগ্রাম বন্ধুসভার এ আয়োজন সত্যিই প্রশংসনীয়। আশা করছি আমাদের শিক্ষার্থীরা আলোচিত এ বিষয় সম্পর্কে সঠিকভাবে জেনেছে এবং একটি সুন্দর সমাজ গঠনে তারা অবদান রাখবে।’ এ সময় তিনি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুকুমার দেবনাথের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম বন্ধুসভাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান।
চট্টগ্রাম বন্ধুসভার সহসভাপতি রুমিলা বড়ুয়া বলেন, ‘বর্তমান শিশু-কিশোরদের জন্য বইটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম বন্ধুসভাকে ধন্যবাদ এমন একটি বই নিয়ে পাঠচক্রের আয়োজন করার জন্য।’
পাঠচক্রের সঞ্চালনায় ছিলেন পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক কামরান চৌধুরী। আরও উপস্থিত ছিলেন বইমেলা সম্পাদক শান্ত বড়ুয়া, বন্ধু অনামিকা দাশ ও দেবশ্রী নন্দী। পাঠচক্র শেষে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কুইজ প্রতিযোগিতায় আয়োজন করা হয়। বিজয়ীদের পুরস্কার হিসেবে কিশোর আলো প্রদান ও সবার মধ্যে চকলেট বিতরণ করা হয়।
পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, চট্টগ্রাম বন্ধুসভা