‘সমর্থন যার যার, আনন্দ সবার’

বিশ্বকাপের উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে। প্রিয় দলের জার্সি পরে ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে প্রীতি ম্যাচ খেলছেন আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের সমর্থকেরা
ছবি: আনোয়ার হোসেন

‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’। কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন ধর্মের আচার–অনুষ্ঠান পালনের ক্ষেত্রে অসাম্প্রদায়িকতার প্রকাশ হিসেবে এ স্লোগান মানুষের মধ্যে বেশ প্রিয় হয়ে উঠেছে। এবার এ স্লোগানের আদলে নতুন একটি স্লোগানের খোঁজ মিলল। সেটি হচ্ছে, ‘সমর্থন যার যার, আনন্দ সবার’।

আজ রোববার কাতারে শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর। বিশ্বকাপ ফুটবল মানেই বাঙালির উচ্ছ্বাস-উন্মাদনা। যাঁর যাঁর প্রিয় দলকে সমর্থন জানাতে নিজ বাড়ির সামনে প্রিয় দলের পতাকা টাঙানো, জার্সি পরাসহ নানাভাবে প্রকাশ করছেন ভালোবাসা। কখনো কখনো প্রিয় দলের প্রতি সমর্থন আর ভালোবাসা প্রকাশ হয়ে যায় কিছুটা উগ্র। এতে তৈরি হয় সামাজিক সংকট। এমনটা যাতে না হয়, সে আহ্বান জানানো হয়েছে ময়মনসিংহ বন্ধুসভার একটি অনুষ্ঠানে।

গতকাল শনিবার বিকেলে ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ‘ফুটবল সম্প্রতি’ নামে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে মূল আহ্বান ছিল, ‘সমর্থন যার যার, আনন্দ সবার’। অনুষ্ঠানটি আলোচনা পর্ব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রীতি ফুটবল ম্যাচে ভাগ করা ছিল।

অনুষ্ঠানে ময়মনসিংহের ১১টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে আমন্ত্রণ জানায় বন্ধুসভা। সংগঠনগুলো হচ্ছে ক্লিন আপ বাংলাদেশ, স্বপ্নপ্রপাত ট্যুরিজম, ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটি, তারুণ্যের ময়মনসিংহ, স্টেজ ফর ইয়ুথ ফাউন্ডেশনের ময়মনসিংহ শাখা, হেল্প প্লাস ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, সেভ দ্য ফিউচার ফাউন্ডেশনের ময়মনসিংহ মহানগর শাখা, জেএন লুমিনাস, চিলড্রেনস কেয়ার ও ‘২০১২-২০১৪ ব্যাচ’ ময়মনসিংহ।

শুরুতেই অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা পর্ব। এ পর্বে নিজের সমর্থন প্রকাশে প্রত্যেকেই যেন সংযত আচরণ করেন, সেটি বলা হয়। বন্ধুসভার বন্ধুরা এ আহ্বান নিজেরা মেনে চলবেন এবং নিজেদের পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে প্রচার করার প্রতিশ্রুতি দেন।

এ পর্বে বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাছিমা আক্তার বলেন, ‘বিশ্বকাপে প্রিয় দলকে সমর্থন জানানো আমাদের দেশের একটি রীতি হয়ে গেছে। চার বছর পরপর যখন ফুটবল বিশ্বকাপ শুরু হয়, তখন বাংলাদেশে যেন উৎসবের ছোঁয়া লাগে। আমরা সবাই যেন শুধু সে উৎসবের মধ্যেই থাকি। উৎসব যেন কখনোই উগ্রতায় রূপ না নেয়।’

আলোচনা পর্বে আরও অংশে নেন, ক্লিন আপ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আইনজীবী মতিউর রহমান, তারুণ্যের ময়মনসিংহের সভাপতি রেজাউল ইসলাম, ১২/১৪ ব্যাচ ময়মনসিংহের সমন্বয়ক সোহেল রানা, ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটির সভাপতি আবিদুর রহমান, সেভ দ্য ফিউচার ফাউন্ডেশন ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সভাপতি তানিয়া ইয়াসমিন, ময়মনসিংহ হেল্পলাইন সমন্বয়ক, মেহেদী হাসান, স্কাউটার রফিকুল ইসলাম ওপেন স্কাউট গ্রুপের সিনিয়র রোভার মেট মাহবুবুর রহমান, যুব নাগরিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক শুভ্র চক্রবর্তী ও প্রথম আলো বন্ধুসভা ময়মনসিংহের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানসহ অন্যরা।

দ্বিতীয় পর্বটি ছিল সাংস্কৃতিক আয়োজনের। এ পর্বে বিশ্বকাপের সমর্থন নিয়ে ‍মূকাভিনয়, রম্য বিতর্ক ছিল বেশ উপভোগ্য। রম্য বিতর্কে ‘আমার দলই সেরা’ শিরোনামে আঞ্চলিক ভাষায় প্রিয় দলের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন বন্ধুসভার বন্ধু, আমন্ত্রিত স্বেচ্ছাসেবী ও অতিথিরা। রম্য বিতর্কে ওঠে আসে সমর্থন নিয়ে যেন কেউ প্রতিপক্ষ দলের সমর্থকদের প্রতি হিংসাত্মক মনোভাব প্রকাশ না করেন। রম্য বিতর্কে অংশ নেন, মেহেদী হাসান, সাদিকুল ইসলাম,খালিদ হাসান, আবু নাঈম, হামিদুল হক, এনায়েত কবির।শেষ পর্বে অনুষ্ঠিত হয় প্রীতি ফুটবল ম্যাচ। সমর্থকেরা নিজেদের প্রিয় দলের জার্সি পরে প্রীতি ফুটবল ম্যাচে অংশ নেন। প্রীতি ফুটবল ম্যাচ শেষে আবারও বন্ধুসভার বন্ধু ও আমন্ত্রিত অতিথিরা অঙ্গীকার করেন, ‘সমর্থন যার যার, আনন্দ সবার’।